ভাবমূর্তি সংকটে বাংলাদেশ
কার্ডিয়াক সার্জন ডাক্তার সাবরিনা এবং রিজেন্ট হাসপাতালের মালিক শাহেদ বিদেশে দেশের ভাবমূর্তি চরমভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করেছেন। ইটালিতো পুরো বিমানই ফেরত পাঠালো। বিদেশি পত্রপত্রিকা নিউজ করেছে, বাংলাদেশে করোনা পরীক্ষার ভুল রিপোর্ট দেয়া হয়। কয়েকটি দেশ ইতিমধ্যে বাংলাদেশিদের প্রবেশ নিষিদ্ধ করেছে। ভবিষ্যতে বাংলাদেশিদের ভিসা পেতেও সমস্যা হবে। এই মহামারীর দুর্যোগে ডাক্তার সাবরিনা ও শাহেদ যা করেছেন তা মৃত্যুদন্ডতূল্য অপরাধ।
ইতিমধ্যে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে ইতালি, জাপান ও কোরিয়া। অর্থাৎ এসব দেশে বাংলাদেশিরা আপাতত আর যেতে পারছেন না। কারণ ওইসব দেশে যেসব বাংলাদেশি অবস্থান করছিলেন তারা যখন ফিরে যান, তখন তাদের শরীরে কভিড-১৯ 'পজিটিভ' ধরা পড়ে। বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত ইতালির নাগরিকরা করোনাভাইরাস 'নেগেটিভ' সার্টিফিকেট নিয়ে রোম বিমানবন্দরে অবতরণ করলে তাদের শরীরে করোনাভাইরাস 'পজিটিভ' ধরা পড়ে। ফলে তাদেরকে আর ইতালি ঢুকতে দেওয়া হয়নি। তাদের সবাইকে বাংলাদেশে ফেরত পাঠানো হয়। এই ঘটনায় আকাশপথ বন্ধের ঝুঁকিতে রয়েছে বাংলাদেশ। ইতোমধ্যে ইতালি আগামী এক সপ্তাহ বাংলাদেশ থেকে আসা সব ফ্লাইটে নিষেধজ্ঞা আরোপ করেছে। ইতালির পর তুরস্কও ঢাকা থেকে সরাসরি ফ্লাইট চলাচল বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। একই সঙ্গে সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাত, কাতার, বাহরাইন, ওমানসহ মধ্যপ্রাচ্যের সব দেশও বাংলাদেশিদের জন্য ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে। চীনের চায়না সাউদার্ন এয়ারলাইন্সও ঢাকায় ফ্লাইট বন্ধ রেখেছে। এর কারণ হিসেবে যা জানা গেছে বাংলাদেশি যাত্রীদের কাছে ভুয়া করোনা 'নেগেটিভ' সনদ। এদের অনেকেরই করোনা 'পজিটিভ' ছিলো। কিন্তু তারা ভুয়া করোনা 'নেগেটিভ' সনদ সংগ্রহ করে। শাহেদের রিজেন্ট হাসপাতাল ও ডাক্তার সাবরিনার জেকেজি থেকে।
জেকেজি ১৫ হাজার ৪৬০ জনকে করোনার টেস্টের ভুয়া রিপোর্ট সরবরাহ করেছিলো। ওইসব টেস্টে জনপ্রতি নেওয়া হতো সর্বনিম্ন পাঁচ হাজার টাকা। বিদেশিদের কাছ থেকে একশ' ডলার। আর এভাবেই তারা হাতিয়ে নিয়েছে সাত কোটি ৭০ লাখ টাকা। অথচ তাদের কোনো ল্যাব বা পরীক্ষাগার ছিল না। এই কেলেঙ্কারির সঙ্গে জড়িত জেকেজি হেলথের চেয়ারপার্সন জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউটের কার্ডিয়াক সার্জন ডাক্তার সাবরিনা চৌধুরী। সংবাদপত্রে তাদের সম্পর্কে প্রতিবেদন এলেও, ডা. সাবরিনা জানিয়েছেন জেকেজির সঙ্গে তিনি জড়িত নন। শাহেদ ও সাবরিনা বাংলাদেশের ভাবমূর্তিকে কোথায় নিয়ে গেছেন, তা ইতালির প্রধানমন্ত্রী জুসেপ্পো কন্তের একটি মন্তব্য থেকেই বোঝা যায়। বাংলাদেশের সঙ্গে ইতালির ফ্লাইট বন্ধের যৌক্তিকতা তুলে ধরে কন্তে সম্প্রতি বলেছেন, 'বাংলাদেশ থেকে আসা বেশিরভাগ যাত্রীর মধ্যে করোনা ভাইরাস শনাক্ত হয়েছে। একেকজন বাংলাদেশি একেকটা 'ভাইরাস বোমা' (ইত্তেফাক, ১১ জুলাই)। কী সাংঘাতিক কথা! একেকজন বাংলাদেশি ভাইরাস বোমা! কন্তে একটি প্রশ্ন তুলেছেন- এসব নাগরিকরা কীভাবে বাংলাদেশের ইমিগ্রেশন পার হলো সেটা অবশ্যই ভাবার বিষয়।
লাখ লাখ বাংলাদেশি বিদেশে যান, কাজ করেন, বিদেশের নাগরিকত্ব নিয়ে অনেকে বিদেশে বসবাস করেন। ইউরোপ আর আমেরিকায় কয়েক লাখ বাংলাদেশি বসবাস করেন। ইতালির ঘটনাবলি বিশ্বের শীর্ষ সংবাদপত্রগুলোতে ছাপা হয়েছে,দেশের ভাবমূর্তি কোথায় গিয়ে দাঁড়ালো? হাজার হাজার বাংলাদেশি এখন নানা জটিলতায় পড়বেন। আমেরিকান ইমিগ্রেশনের কড়া নজরদারিতে এরা পড়ে যাবেন এখন। এরা বাংলাদেশের কোনো রিপোর্টকেই আর গ্রহণ করবে না। ফলে নতুন নতুন আইন, বিধিনিষেধ আর ডিপোর্টের মুখোমুখি হবেন তারা।
সাবরিনা ও শাহেদ দুজনেই ফৌজদারি অপরাধ করেছেন। এরা রাষ্ট্রকে এক্কেবারে উলঙ্গ করে ছেড়ে দিয়েছে । আমার মনে হয় তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হওয়া উচিৎ।
বিঃদ্রঃ সাবরিনার জন্য আমার মায়া হয়। উচ্চশিক্ষিত বাবার অভিজাত ঘরের মেয়ে হয়েও কেনো তিনি এই অপরাধ জগতে জড়ালেন? তিনি নিজেও উচ্চ শিক্ষিত। কিসের অভাবে? কোন তাড়নায়? তিনিতো জাতীয় হৃদরোগ ইন্সটিটিউটের একজন কার্ডিয়াক সার্জন। রেজিস্ট্রার। দেশ বিখ্যাত ডাক্তার হতে পারতেন। শিক্ষিত, অভিজাত পরিবারের মেয়ে। আর আজ জাতির কাছে পোড়া মুখ দেখালেন!
Karim Chowdhury
13 July, 2020
Cumilla
কার্ডিয়াক সার্জন ডাক্তার সাবরিনা এবং রিজেন্ট হাসপাতালের মালিক শাহেদ বিদেশে দেশের ভাবমূর্তি চরমভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করেছেন। ইটালিতো পুরো বিমানই ফেরত পাঠালো। বিদেশি পত্রপত্রিকা নিউজ করেছে, বাংলাদেশে করোনা পরীক্ষার ভুল রিপোর্ট দেয়া হয়। কয়েকটি দেশ ইতিমধ্যে বাংলাদেশিদের প্রবেশ নিষিদ্ধ করেছে। ভবিষ্যতে বাংলাদেশিদের ভিসা পেতেও সমস্যা হবে। এই মহামারীর দুর্যোগে ডাক্তার সাবরিনা ও শাহেদ যা করেছেন তা মৃত্যুদন্ডতূল্য অপরাধ।
ইতিমধ্যে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে ইতালি, জাপান ও কোরিয়া। অর্থাৎ এসব দেশে বাংলাদেশিরা আপাতত আর যেতে পারছেন না। কারণ ওইসব দেশে যেসব বাংলাদেশি অবস্থান করছিলেন তারা যখন ফিরে যান, তখন তাদের শরীরে কভিড-১৯ 'পজিটিভ' ধরা পড়ে। বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত ইতালির নাগরিকরা করোনাভাইরাস 'নেগেটিভ' সার্টিফিকেট নিয়ে রোম বিমানবন্দরে অবতরণ করলে তাদের শরীরে করোনাভাইরাস 'পজিটিভ' ধরা পড়ে। ফলে তাদেরকে আর ইতালি ঢুকতে দেওয়া হয়নি। তাদের সবাইকে বাংলাদেশে ফেরত পাঠানো হয়। এই ঘটনায় আকাশপথ বন্ধের ঝুঁকিতে রয়েছে বাংলাদেশ। ইতোমধ্যে ইতালি আগামী এক সপ্তাহ বাংলাদেশ থেকে আসা সব ফ্লাইটে নিষেধজ্ঞা আরোপ করেছে। ইতালির পর তুরস্কও ঢাকা থেকে সরাসরি ফ্লাইট চলাচল বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। একই সঙ্গে সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাত, কাতার, বাহরাইন, ওমানসহ মধ্যপ্রাচ্যের সব দেশও বাংলাদেশিদের জন্য ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে। চীনের চায়না সাউদার্ন এয়ারলাইন্সও ঢাকায় ফ্লাইট বন্ধ রেখেছে। এর কারণ হিসেবে যা জানা গেছে বাংলাদেশি যাত্রীদের কাছে ভুয়া করোনা 'নেগেটিভ' সনদ। এদের অনেকেরই করোনা 'পজিটিভ' ছিলো। কিন্তু তারা ভুয়া করোনা 'নেগেটিভ' সনদ সংগ্রহ করে। শাহেদের রিজেন্ট হাসপাতাল ও ডাক্তার সাবরিনার জেকেজি থেকে।
জেকেজি ১৫ হাজার ৪৬০ জনকে করোনার টেস্টের ভুয়া রিপোর্ট সরবরাহ করেছিলো। ওইসব টেস্টে জনপ্রতি নেওয়া হতো সর্বনিম্ন পাঁচ হাজার টাকা। বিদেশিদের কাছ থেকে একশ' ডলার। আর এভাবেই তারা হাতিয়ে নিয়েছে সাত কোটি ৭০ লাখ টাকা। অথচ তাদের কোনো ল্যাব বা পরীক্ষাগার ছিল না। এই কেলেঙ্কারির সঙ্গে জড়িত জেকেজি হেলথের চেয়ারপার্সন জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউটের কার্ডিয়াক সার্জন ডাক্তার সাবরিনা চৌধুরী। সংবাদপত্রে তাদের সম্পর্কে প্রতিবেদন এলেও, ডা. সাবরিনা জানিয়েছেন জেকেজির সঙ্গে তিনি জড়িত নন। শাহেদ ও সাবরিনা বাংলাদেশের ভাবমূর্তিকে কোথায় নিয়ে গেছেন, তা ইতালির প্রধানমন্ত্রী জুসেপ্পো কন্তের একটি মন্তব্য থেকেই বোঝা যায়। বাংলাদেশের সঙ্গে ইতালির ফ্লাইট বন্ধের যৌক্তিকতা তুলে ধরে কন্তে সম্প্রতি বলেছেন, 'বাংলাদেশ থেকে আসা বেশিরভাগ যাত্রীর মধ্যে করোনা ভাইরাস শনাক্ত হয়েছে। একেকজন বাংলাদেশি একেকটা 'ভাইরাস বোমা' (ইত্তেফাক, ১১ জুলাই)। কী সাংঘাতিক কথা! একেকজন বাংলাদেশি ভাইরাস বোমা! কন্তে একটি প্রশ্ন তুলেছেন- এসব নাগরিকরা কীভাবে বাংলাদেশের ইমিগ্রেশন পার হলো সেটা অবশ্যই ভাবার বিষয়।
লাখ লাখ বাংলাদেশি বিদেশে যান, কাজ করেন, বিদেশের নাগরিকত্ব নিয়ে অনেকে বিদেশে বসবাস করেন। ইউরোপ আর আমেরিকায় কয়েক লাখ বাংলাদেশি বসবাস করেন। ইতালির ঘটনাবলি বিশ্বের শীর্ষ সংবাদপত্রগুলোতে ছাপা হয়েছে,দেশের ভাবমূর্তি কোথায় গিয়ে দাঁড়ালো? হাজার হাজার বাংলাদেশি এখন নানা জটিলতায় পড়বেন। আমেরিকান ইমিগ্রেশনের কড়া নজরদারিতে এরা পড়ে যাবেন এখন। এরা বাংলাদেশের কোনো রিপোর্টকেই আর গ্রহণ করবে না। ফলে নতুন নতুন আইন, বিধিনিষেধ আর ডিপোর্টের মুখোমুখি হবেন তারা।
সাবরিনা ও শাহেদ দুজনেই ফৌজদারি অপরাধ করেছেন। এরা রাষ্ট্রকে এক্কেবারে উলঙ্গ করে ছেড়ে দিয়েছে । আমার মনে হয় তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হওয়া উচিৎ।
বিঃদ্রঃ সাবরিনার জন্য আমার মায়া হয়। উচ্চশিক্ষিত বাবার অভিজাত ঘরের মেয়ে হয়েও কেনো তিনি এই অপরাধ জগতে জড়ালেন? তিনি নিজেও উচ্চ শিক্ষিত। কিসের অভাবে? কোন তাড়নায়? তিনিতো জাতীয় হৃদরোগ ইন্সটিটিউটের একজন কার্ডিয়াক সার্জন। রেজিস্ট্রার। দেশ বিখ্যাত ডাক্তার হতে পারতেন। শিক্ষিত, অভিজাত পরিবারের মেয়ে। আর আজ জাতির কাছে পোড়া মুখ দেখালেন!
Karim Chowdhury
13 July, 2020
Cumilla
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন