সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

রংবাজ

 রংবাজ






"... ঘটনাটি শুনেছিলাম মরহুম সিনিয়র মন্ত্রী মশিয়ুর রহমান যাদু মিয়ার কাছ থেকে। তার মগবাজারের বাসায় বলেছিলেন তিনি ঘটনাটি। পরবর্তীতে জনসভায় বক্তৃতাকালেও এই ঘটনাটি তিনি বলেছেন।
সম্ভবত: ১৯৭৩ সাল। মুজিবী কারাগার থেকে মুক্তি পেয়েছেন যাদু ভাই। কয়েকদিন পর রাজধানীর একটি থানার ওসির সাথে দেখা করতে গেলেন। ওসি তার বন্ধু। যাদুভাই ওসি সাহেবকে কেমন আছেন জিজ্ঞেস করায় তিনি বললেন, 'কেমন আছি বলে লাভ নেই। তার চেয়ে একটি ঘটনা বলি, তা থেকেই বুঝে নিতে পারবেন কেমন আছি আমরা।'
ওসি সাহেব বললেন, একদিন একজন লম্বা চুলওয়ালা রংবাজকে (তখন সন্ত্রাসীদের রংবাজ বলা হতো) রিভলবারসহ ধরে আনলাম। তাকে এনে আমার রুমে চেয়ারে বসিয়ে চা খাওয়ালাম। তারপর বললাম, 'বাবা, তোমার মাথার চুল এতো সুন্দর আর লম্বা। আমাকে ওখান থেকে দু'গাছি চুল দেবে?' ছেলেটি একটু অবাক হলেও মাথা থেকে দু'টি চুল তুলে আমাকে দিল। আমি চুল দু'টিকে একটি খামে ভরে পকেটে রাখলাম। তারপর বললাম, 'এবার বলো তোমার কোন মুরুব্বী আছেন কিনা, থাকলে ফোন করো।' সে একজন নেতাকে ফোন করলো। সেই আওয়ামী নেতা আমাকে বললেন, 'ও আমার লোক, ওকে ছেড়ে দিন।' আমি ছেলেটিকে বললাম, 'যাও বাবা, তোমাকে কষ্ট দিলাম, কিছু মনে করো না।'
ছেলেটি উঠে দরোজা পর্যন্ত গিয়ে ফিরে এসে বললো, 'ওসি সাহেব আপনি এতো ভালো মানুষ, আমাকে এতো খাতির যত্ন করলেন, কিন্তু আমার মাথার দুটি চুল আপনি কেন রাখলেন বুঝলাম না।' ওসি সাহেব বললেন, 'দেখো বাবা, গতকালও তোমার মত একজনকে ধরে এনেছিলাম। কিছুক্ষণ পর একটি টেলিফোন পেয়ে তাকে ছেড়ে দিতে হয়েছিল। যাবার সময় সে আমাকে বলে গেলো, খুবতো ধইরা আনলি। আমার একগাছি চুলও তো রাখতে পারলি না। তা বাবা তুমিও যাতে ওই কথা বলতে না পারো, সেই জন্যই দুই গাছি চুল রেখে দিলাম।'
যাদু ভাইর মুখে ঘটনাটি শুনে আমরা হেসেছিলাম। কিন্তু এই ঘটনার মাধ্যমে তৎকালীন আওয়ামী সরকারের আমলের আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি এবং অসহায় আইন প্রয়োগকারী সংস্থার করুণ চিত্রই ফুটে উঠেছিল॥"
- মহিউদ্দিন খান মোহন / স্বর্ণযুগের ইতিকথা ॥ [শুভ প্রকাশন - মে, ২০০৩ । পৃ: ১৩]

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

আমার দেখা ১৯৭৪ সালের দুর্ভিক্ষ

আমার দেখা ১৯৭৪ সালের দুর্ভিক্ষ সরকারঃ শেখ মুজিবের শাসনামল ১৯৭৪-এর দুর্ভিক্ষ বাংলাদেশে ১৯৭৪ সালের মার্চে শুরু হয়ে সেই বছরেরই ডিসেম্বরের দিকে গিয়ে শেষ হয়। এই দুর্ভিক্ষে অসংখ্য মানুষ অনাহারে মারা গিয়েছিল। এই দুর্ভিক্ষকে স্মরণকালের মধ্যে সবচেয়ে ভয়ানক হিসেবে গন্য করা হয়। ওই সময় আমি বুঝতাম। ক্লাশ ফোরে পড়তাম। আহারে ! কি যে অভাব ! অনেকের মতো আমরাও ভাত না খেয়ে রুটি খেয়েছি । তাও পরিমিত । কখনো জাউ খেয়েছি । শুকনো মরিচ পাওয়া যেতো না । কাঁচা মরিচের কেজি ছিলো ১৫০ টাকা । লবন ১২০ টাকা । আর সোনার ভরি ছিলো তখন ১৫০ টাকা । সোনা শুধু ওই সময় কম দাম ছিলো । চারদিকে অভাব । সারাদেশের মানুষের হাহাকার । কতো মানুষ না খেয়ে মারা গেছেন ! বিদেশি রিলিফ সব আওয়ামী লীগের লোকেরা চুরি করেছে । আর বেশিরভাগ রিলিফ সীমান্ত দিয়ে ভারতে চলে পাচার হয়েছিলো । তখন বর্ডার খোলা ছিলো তখন । মহিলাদের শাড়ি কাপড় ছিলো না । অনেকে মাছ ধরার জাল পরে লজ্জাস্থান ঢেকেছিলো । এসব ছবি পত্রিকায়ও ছাপা হয়েছিলো । কিন্তু আওয়ামী লীগ নেতাদের কোনো অভাব ছিলো না । বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ শেষ হওয়ার মাত্র দুই বছর তিন মাসের মাথায় ...

বোতল

বোতল মানব জীবনে বোতল অপরিহার্য । বোতল অনেক অর্থেও ব্যবহার হয় । কোনো কোনো এলাকায় আনস্মার্ট, বেয়াক্কেল প্রকৃতির লোককেও বোতল বলা হয় । ইউরোপ আমেরিকায় থাকতে আমি ডৃংক করতাম । হার্ড ডৃংক কমই খেতাম । প্রতিদিনই বিয়ার খেতাম । বিয়ার স্বাস্থ্য ভালো রাখে ও কাজ করতে এনার্জি জোগায় । পরিমিত বিয়ার খেলে কেউ মাতাল হয় না । মাঝে মাঝে বিশেষ কোনো পার্টিতে হুইস্কি খাওয়া হতো । তাও দামি ব্র্যান্ডের । জনি ওয়াকার ব্ল্যাক লেবেল, টিচার্স, পাসপোর্ট, হেনেসি, শিভাস রিগাল, জ্যাক ড্যানিয়েলস । সাকুরায়ও অনেক সময় এসব ব্র্যান্ডের হুইস্কি পাওয়া যায় না । তো দেশে আসার পরও কিছু দিন ডৃংক করেছিলাম । কুমিল্লায় সরকার অনুমোদিত একটা মদের দোকান আছে চক বাজারে । নামঃ নাদের ট্রেডিং কোং । এটা প্রায় আজ ৫০ বছর । এখানে বিদেশি ব্র্যান্ডের ডৃংক পাওয়া যায় না । দেশিয় কোম্পানি ‘কেরো এন্ড কোং’ যা দর্শনায় অবস্থিত তার তৈরি ভদকা, হুইস্কি, জিন পাওয়া যায় । আমাদের সমাজতো রক্ষনশীল । তাই কান্দিরপাড় থেকে একটা স্প্রাইট কিনে অর্ধেক খেতে খেতে চক বাজার যেতাম । নাদেরে যখন পৌঁছতাম তখন স্প্রাইটের বোতল অর্ধেক খালি হয়ে যেতো । আমি বাবুল ভাইকে স্প্...

ফেবুতে মেয়েদের পোস্ট

ফেবুতে মেয়েদের পোস্ট সকালে ঘুম ভেঙে দেখি আট টা বাজে । শরীরটাও বেশি ভালো লাগছে না । আবার ঘুমাল াম । ১১টায় উঠলাম । ২ মগ চা খেলাম ( বাজারের হিসেবে ৮ কাপ হবে)। সবাই জানেন আমি স্মোক করি । চেইন স্মোকার । কম্পিউটার খোঁচাখুঁচি করে নিজে নিজেই ঠিক করলাম । প্রায় দুই ঘন্টা । আমি থাকি চার তলায় । দুপুর ১টা বাজে । খেতেও ইচ্ছে করছে না কিছু । তখনো মুখ ধুই নি । কম্পিউটারে খোঁচাখোঁচি করতে গিয়ে দেখি এক মেয়ে তার পা’য়ের একটা ছবি আপলোড করেছে । দেখলাম এই পা মানে ঠ্যাং এর ছবিতে লাইক পড়েছে ৯৪৭ টা । কমেন্ট অসংখ্য । ‘কতো সুন্দর এই পা । না জানি তুমি কতো সুন্দর । পা তো নয় যেন একটা গোলাপ ফুল’ । এ জাতীয় অনেক কমেন্ট । আমি পোষ্ট টা দেখে কিছুটা অবাক হলাম । একটা ঠ্যাং এর এতো কদর ! প্রায়ই লক্ষ্য করি, মেয়েরা যখনি কিছু আপলোড করে সেটা তাদের পায়ের ছবিই হোক,হাতের ছবিই হোক আর নাকের ছবিই হোক বা এক চোখের ছবিই হোক সে সব ছবিতে অগনিত লাইক আর কমেন্ট । মেয়ে বন্ধুদের ছোট করার জন্য বলছি না, ফেবুতে প্রায়ই দেখি মেয়েরা কোনো ছবি বা দু এক লাইন হাবিজাবি লিখলে লাইক আর কমেন্টের বন্যা বয়ে যায় । অনেক মেয়েরা শখ করে পিঠা, ...