সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

ময়লা আবর্জনা

ময়লা আবর্জনা
----------------------------
ফেবুতে ছোট করে একটু আধটু লিখি। এসব লেখার আবেদন খুব একটা নেই তা ভালো করেই জানি। আমাকে কেউ লিখতেও বলেন না। লিখে আমার ব্যক্তিগত কোনো লাভও নেই। একটা দীর্ঘ সময় ইউরোপ ও আমেরিকায় ছিলাম বলে পশ্চিমা দেশের কিছু নিয়ম কানুন, লেখাপড়া, শিল্প, সাহিত্য, সংস্কৃতি, জীবনযাপন সম্পর্কে জানার সুযোগ হয়েছিলো। ওই বিষয়গুলো শেয়ার এবং স্মৃতিচারণ করাই উদ্দেশ্য।

এমন অনেক বিষয় আছে যা আমাদের সমাজে গ্রহণযোগ্য নয় তবু বিষয়গুলো আমার ভালো লাগে। ধর্মীও রীতিনীতির সঙ্গে বেমানান বিষয়গুলো আমি সচেতনভাবে এড়িয়ে চলার চেষ্টা করি। আমার স্বাধীনতা আকাশস্পর্শী নয়। অন্য কারো অনুভূতিতে আঘাত লাগে এমন কিছু না লেখাই ভালো মনে করি। তবু ইউরোপ- আমেরিকার নিয়ম কানুন, শিল্প, সাহিত্য, সংস্কৃতি, জীবনযাপনের পক্ষে কিছু লিখতে গেলে অনিচ্ছাসত্ত্বেও ধর্মের সঙ্গে বেমানন কিছু এসে যায়।

কিন্তু এর অর্থ এই নয় যে, আমি ধর্মের বিরোধিতা করছি। আমাদের দেশে প্রায় ৭০ ভাগ মুসলিম পাঁচ ওয়াক্ত নামাজই পড়ে না। প্রত্যেক এলাকার মসজিদগুলো জরিপ করলেই তা বুঝা যাবে।

ইউরোপ-আমেরিকার সমাজে মানুষকে, মহিলাদের বড়ই সন্মানের চোখে দেখা হয়। এর বিপরীতে যারা আছে তারা নিতান্ত সংখ্যালঘু। পড়ালেখা সেখানে ১২ ক্লাশ সকলের জন্য বাধ্যতামূলক। মানুষ রাত ৩:৩০মিনিট হতে কাজে যায়। সময়ানুবর্তিতা, সৎ জীবনযাপন, কর্তব্যপরায়ণতা, দায়িত্বশীলতা, পরিচ্ছন্নতা সব মানুষের মধ্যে পাবেন। ইউরোপের লোকেরা আপনাকে আপনার বিশ্বাস, গায়ের রঙ, পারিবারিক পরিচয় প্রভৃতির কারণে কেউ অপমান করবে না, বঞ্চিত করবে না। সেখানকার কোনো স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় ক্রিকেট বিশ্বকাপ বা অন্য কোনো খেলার জন্য বন্ধ রাখবে, পরীক্ষা পিছিয়ে দিবে, সেটি অকল্পনীয়। অথচ আমাদের দেশে তাই হয়। ক্রিকেট বিশ্বকাপ দেখার জন্য স্কুল, কলেজ, ভার্সিটি বন্ধ থাকে !

Objective Type Questions করবার ধারণাটি ওদের, কিন্তু তার জন্য কেউ সেখানে নোট বই ছাপায় না। আমাদের সময় নাম ছিলো নোট বই। এখন সৃজনশীল পদ্ধতিতে এর নাম Solution Book. বাধ্যতামূলক স্কুলে কোচিং শুধু এদেশেই হয়। সেখানের স্কুলে, অফিসে কোনো অসাধুতা নেই। রাষ্ট্র পরিচালনা করেন সব উচ্চ শিক্ষিত লোকেরা।
এসব বললে আমাদের দেশের অনেকেই রাগ করেন। আমাকে অপছন্দ করেন। অনেকে এমন কথাও আমাকে বলেছেন,“আরে এটা কি ইউরোপ- আমেরিকা নাকি? আমরা এভাবেই চলে অভ্যস্ত ।”

এমন মানসিকতা থাকলে কিভাবে এদেশকে উন্নত করা যাবে? সুন্দর করা যাবে? ঈদের দিন বিকেল থেকে পরদিনও দেখা যায় গাড়ি ভাড়া করে ছেলেরা দল বেধে ঘুরে। এবার পারেনি করোনার কারনে। অনেক এলাকায় বড় স্পিকার ভাড়া এনে হিন্দি গানের সঙ্গে ছেলেরা এক সঙ্গে নাচে!

আমাদের দেশটা তো এমনিতেই ময়লা আবর্জনায় ভর্তি। ওইসব এলাকার ছেলেরা এসব অনুষ্ঠানের সময় নিজেদের এলাকার ময়লাগুলো মাত্র ২ ঘন্টায় স্বেচ্ছাশ্রম দিয়ে পরিষ্কার করে ফেলতে পারে। সিনিয়ররাও ছোটদের সঙ্গে জয়েন করে তাদের উৎসাহিত করতে পারেন। এটাও হতে পারে এক বিশাল আনন্দ। সবাই মিলে একসঙ্গে এমন কাজ করার মাঝে কি নেই অনাবিল আনন্দ? গানের সঙ্গে নাচানাচি আর গাড়িতে ঘুরে বেড়ানোর মতো এক সঙ্গে ঘন্টা দুয়েক কাজ করাও হতে পারে এক বিরল আনন্দ। কই? এসব তো দেখা যায় না। ধর্ম নিয়ে আমরা খুব গর্ব করি। কিন্তু অধর্মের সব কাজ আমরাই বেশি করি। ছোটবেলায় পড়েছি, পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা ঈমানের অঙ্গ।
ময়লা আবর্জনায় থেকে অভ্যস্ত জাতির ঈমানও এখন ময়লা হয়ে গেছে ।
©Karim Chowdhury
27 August, 2020
Cumilla.

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

আমার দেখা ১৯৭৪ সালের দুর্ভিক্ষ

আমার দেখা ১৯৭৪ সালের দুর্ভিক্ষ সরকারঃ শেখ মুজিবের শাসনামল ১৯৭৪-এর দুর্ভিক্ষ বাংলাদেশে ১৯৭৪ সালের মার্চে শুরু হয়ে সেই বছরেরই ডিসেম্বরের দিকে গিয়ে শেষ হয়। এই দুর্ভিক্ষে অসংখ্য মানুষ অনাহারে মারা গিয়েছিল। এই দুর্ভিক্ষকে স্মরণকালের মধ্যে সবচেয়ে ভয়ানক হিসেবে গন্য করা হয়। ওই সময় আমি বুঝতাম। ক্লাশ ফোরে পড়তাম। আহারে ! কি যে অভাব ! অনেকের মতো আমরাও ভাত না খেয়ে রুটি খেয়েছি । তাও পরিমিত । কখনো জাউ খেয়েছি । শুকনো মরিচ পাওয়া যেতো না । কাঁচা মরিচের কেজি ছিলো ১৫০ টাকা । লবন ১২০ টাকা । আর সোনার ভরি ছিলো তখন ১৫০ টাকা । সোনা শুধু ওই সময় কম দাম ছিলো । চারদিকে অভাব । সারাদেশের মানুষের হাহাকার । কতো মানুষ না খেয়ে মারা গেছেন ! বিদেশি রিলিফ সব আওয়ামী লীগের লোকেরা চুরি করেছে । আর বেশিরভাগ রিলিফ সীমান্ত দিয়ে ভারতে চলে পাচার হয়েছিলো । তখন বর্ডার খোলা ছিলো তখন । মহিলাদের শাড়ি কাপড় ছিলো না । অনেকে মাছ ধরার জাল পরে লজ্জাস্থান ঢেকেছিলো । এসব ছবি পত্রিকায়ও ছাপা হয়েছিলো । কিন্তু আওয়ামী লীগ নেতাদের কোনো অভাব ছিলো না । বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ শেষ হওয়ার মাত্র দুই বছর তিন মাসের মাথায় ...

বোতল

বোতল মানব জীবনে বোতল অপরিহার্য । বোতল অনেক অর্থেও ব্যবহার হয় । কোনো কোনো এলাকায় আনস্মার্ট, বেয়াক্কেল প্রকৃতির লোককেও বোতল বলা হয় । ইউরোপ আমেরিকায় থাকতে আমি ডৃংক করতাম । হার্ড ডৃংক কমই খেতাম । প্রতিদিনই বিয়ার খেতাম । বিয়ার স্বাস্থ্য ভালো রাখে ও কাজ করতে এনার্জি জোগায় । পরিমিত বিয়ার খেলে কেউ মাতাল হয় না । মাঝে মাঝে বিশেষ কোনো পার্টিতে হুইস্কি খাওয়া হতো । তাও দামি ব্র্যান্ডের । জনি ওয়াকার ব্ল্যাক লেবেল, টিচার্স, পাসপোর্ট, হেনেসি, শিভাস রিগাল, জ্যাক ড্যানিয়েলস । সাকুরায়ও অনেক সময় এসব ব্র্যান্ডের হুইস্কি পাওয়া যায় না । তো দেশে আসার পরও কিছু দিন ডৃংক করেছিলাম । কুমিল্লায় সরকার অনুমোদিত একটা মদের দোকান আছে চক বাজারে । নামঃ নাদের ট্রেডিং কোং । এটা প্রায় আজ ৫০ বছর । এখানে বিদেশি ব্র্যান্ডের ডৃংক পাওয়া যায় না । দেশিয় কোম্পানি ‘কেরো এন্ড কোং’ যা দর্শনায় অবস্থিত তার তৈরি ভদকা, হুইস্কি, জিন পাওয়া যায় । আমাদের সমাজতো রক্ষনশীল । তাই কান্দিরপাড় থেকে একটা স্প্রাইট কিনে অর্ধেক খেতে খেতে চক বাজার যেতাম । নাদেরে যখন পৌঁছতাম তখন স্প্রাইটের বোতল অর্ধেক খালি হয়ে যেতো । আমি বাবুল ভাইকে স্প্...

ফেবুতে মেয়েদের পোস্ট

ফেবুতে মেয়েদের পোস্ট সকালে ঘুম ভেঙে দেখি আট টা বাজে । শরীরটাও বেশি ভালো লাগছে না । আবার ঘুমাল াম । ১১টায় উঠলাম । ২ মগ চা খেলাম ( বাজারের হিসেবে ৮ কাপ হবে)। সবাই জানেন আমি স্মোক করি । চেইন স্মোকার । কম্পিউটার খোঁচাখুঁচি করে নিজে নিজেই ঠিক করলাম । প্রায় দুই ঘন্টা । আমি থাকি চার তলায় । দুপুর ১টা বাজে । খেতেও ইচ্ছে করছে না কিছু । তখনো মুখ ধুই নি । কম্পিউটারে খোঁচাখোঁচি করতে গিয়ে দেখি এক মেয়ে তার পা’য়ের একটা ছবি আপলোড করেছে । দেখলাম এই পা মানে ঠ্যাং এর ছবিতে লাইক পড়েছে ৯৪৭ টা । কমেন্ট অসংখ্য । ‘কতো সুন্দর এই পা । না জানি তুমি কতো সুন্দর । পা তো নয় যেন একটা গোলাপ ফুল’ । এ জাতীয় অনেক কমেন্ট । আমি পোষ্ট টা দেখে কিছুটা অবাক হলাম । একটা ঠ্যাং এর এতো কদর ! প্রায়ই লক্ষ্য করি, মেয়েরা যখনি কিছু আপলোড করে সেটা তাদের পায়ের ছবিই হোক,হাতের ছবিই হোক আর নাকের ছবিই হোক বা এক চোখের ছবিই হোক সে সব ছবিতে অগনিত লাইক আর কমেন্ট । মেয়ে বন্ধুদের ছোট করার জন্য বলছি না, ফেবুতে প্রায়ই দেখি মেয়েরা কোনো ছবি বা দু এক লাইন হাবিজাবি লিখলে লাইক আর কমেন্টের বন্যা বয়ে যায় । অনেক মেয়েরা শখ করে পিঠা, ...