সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

কুত্তা মারলে জেল!!!!-

 কুত্তা মারলে জেল!!!!-

-----------------------------

আমেরিকা নিয়ে পক্ষে বিপক্ষে অনেক কথা আছে। একমাত্র আমেরিকার ফরেন পলিসি আর সাম্রাজ্যবাদী নীতি ছাড়া আমেরিকার অনেক কিছুই আমি পছন্দ করি। বিভিন্ন দেশে ওরা লাখ লাখ লোক মারলেও এদের দেশের অভ্যন্তরীণ আইন কানুন খুব চমৎকার। কঠিন। অপরাধ আমেরিকায়ও হয়। তবে সেখানে অপরাধীর বিচার হয় যা আমাদের দেশে হয় না। এদেশে অপরাধীরা সরকারি ছত্রছায়ায় নিরাপদে স্বাভাবিক জীবন যাপন করে। টাকা দিলে পুলিশ ভিক্টিমের মামলাও নেয় না। এক বন্ধু বলেছেন,'বাংলাদেশে পুলিশ হলো সবচেয়ে সঙ্গবদ্ধ আর অত্যাধুনিক অস্ত্রে সজ্জিত এক নাম্বার অপরাধীচক্র। এটা প্রমাণিত সত্য।'

আমি নিউ ইয়র্কে থাকতে দেখেছিলাম ওকলাহামা সিটিতে ভয়াবহ বন্যা হয়েছিলো। তাড়াহুড়া করে জনগন নিরাপদ আশ্রয়ে চলে গেলেও কিছু পোষা প্রাণী বন্যার পানিতে আটকে গিয়েছিলো। কুকুর, বিড়াল এবং কিছু পাখি। পানিতে ডুবে যায়নি এমন উঁচু জায়গায়, বাড়ির ছাদের ওপর, সিঁড়িতে প্রাণীগুলো অসহায়ের মতো বসে ছিলো সাহায্যের আশায়। টিভিতে তা দেখাচ্ছিলো। এই প্রাণীদের বাঁচাতে সরকারি বেসরকারি সংগঠনগুলোর সে কি তৎপরতা! রেসকিউ টিম বা উদ্ধারকারী দল হেলিকপ্টার, স্পিডবোট নিয়ে হাজির হয়েছিলো এই প্রাণীদের উদ্ধার করে বাঁচাতে। আদর করে যখন প্রাণীদের স্পিডবোট ও হেলিকপ্টারে উঠাচ্ছিলো-টিভিতে এসব দেখে কি যে ভালো লেগেছিলো। কিন্তু পরক্ষণেই নিজের দেশের সঙ্গে তুলনা করে মনটা বিষণ্ণ হয়ে গিয়েছিলো। বিদেশে কুকুর বিড়ালের জন্য মানুষের যে ভালোবাসা তা আমাদের দেশে মানুষের জন্যও মানুষের নেই!

বন্যা দুর্গত এলাকায় মন্ত্রী, এমপি, নেতা, পাতিনেতা যখন রিলিফ দেয় তা কতোটুকু মানুষের জন্য ভালোবাসা থেকে দেয় এ নিয়ে আমার মনে আজো সন্দেহ আছে। টেলিভিশনের চাটুকার কিছু সাংবাদিক নিয়ে তারা রিলিফ দেন। যতক্ষণ টিভি ক্যামেরা চলে ততোক্ষণ তারা রিলিফ দেয়। ক্যামেরা বন্ধ-রিলিফ দেয়া বন্ধ। 

১৯৮৮ সালে দেশে ভয়াবহ বন্যা হয়েছিলো। সে সময় ‘দৈনিক সংবাদ’ বন্যা দুর্গত এলাকার ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের বক্তব্য উদ্ধৃতি দিয়ে প্রথম পৃষ্ঠায় লিড নিউজ করেছিলো। যার শিরোনাম ছিলো

“ফটু তোলা শ্যাষ-রিলিফ দেয়া শ্যাষ”। 

আমাদের নেতা নেত্রীরা ফটো তোলার জন্য রিলিফ দেন এটা আমরা জানি। সেই ছবি টিভিতে ফলাও করে প্রচার করা হয়।

ফ্লোরিডায় আমি শেল ওয়েল কোম্পানির একটা গ্যাস স্টেশনে চাকরি করেছিলাম। দিনের ২টা থেকে রাত ১০ টার শিফটে। ফোর্ট মায়ার্স (Fort Myers) সিটির ক্লিভল্যান্ড এভিনিউতে ছিলো সেই শেল গ্যাস স্টেশন। নাম : Page Field Shell. এই গ্যাস স্টেশনে কুকুর, বিড়াল নিয়ে প্রবেশ নিষেধ। স্টোরের সামনে বড় করে লাল কালিতে লেখা থাকে No Pets Allowed. 

এ ধরনের গ্যাস স্টেশনকে কনভেনিয়েন্ট স্টোর বলে। এখানে বলতে গেলে সব কিছুই পাওয়া যায়। 

তো একদিন রাত প্রায় সাড়ে নয়টা বাজে। হঠাৎ দেখি একটা বাঘের মতো কুকুর স্টোরের ভেতরে। বোঝা যায় এই কুকুরটা কারো পোষা কুকুর। ছুটে গিয়েই এখানে এসেছে। সেখানে আমরা অনেকেই কাজ করতাম। এঞ্জেলা, মিনার্ভা, কবির, সোহেল, বাবুল, মিলি(পর্টুরিকান),বাদল আরো অনেকেই। 

স্টোরে অনেক কাস্টমার ছিলো সেদিন। আমি একটা লাঠি নিয়ে কুকুরটাকে ভয় দেখিয়ে আস্তে আস্তে স্টোর থেকে বের করে দিচ্ছিলাম। একজন আমেরিকান আমার হাতে লাঠি দেখে খুবই উত্তেজিতভাবে বললো, Hey Man, You can not beat the dog. It is a Federal Crime.( এই, তুমি কুকুরকে মারতে পারো না। এটা ফেডারেল ক্রাইম)। আমি এখন পুলিশকে ফোন করবো। 

আমি তার কথার কোনো গুরুত্ব দিইনি। আমেরিকায় প্রত্যেক গ্যাস স্টেশনের বাইরে পাবলিক ফোন বুথ আছে। পুলিশকে ফোন করতে কোনো টাকাও লাগে না। ৯১১ টোল ফ্রি নাম্বার। এই নাম্বারে কল করলেই পুলিশ হেড কোয়ার্টারে কল যাবে। 

ওমা ! আমি দেখলাম, ওই কাস্টমার ফোন বুথ থেকে কল করছে। আমি ভেবেছিলাম, হয়তো তার নিজস্ব কাউকে ফোন করছে। আমি তখন বাইরে দাঁড়িয়ে সিগারেট খাচ্ছিলাম। আমার সিগারেট শেষ না হতেই দেখালাম, ওয়াও ওয়াও হুইসল বাজিয়ে দুটো পুলিশের গাড়ি এলো। কুকুরটা স্টোরের সামনেই ছিলো। চারজন পুলিশ গাড়ি থেকে নেমেই কুকুরটাকে জড়িয়ে ধরে কয়েকটা চুমু খেলো। আমি আপন মনে সিগারেট খাচ্ছি আর তাদের কর্মকাণ্ড দেখছি।

এবার তারা আমার দিকে এগিয়ে এসে জিজ্ঞেস করলো, ইউ ক্যারিম? বললাম, ইয়েস আই এম। আমাদের প্রত্যেকের বুকেই পুলিশের মতো নেম শিল্ড থাকে যাতে নাম লেখা থাকে। কোনো কাস্টমার কমপ্লেইন করলে যেনো আমাদের নাম পুলিশকে জানাতে পারে।

পুলিশ আমাকে জিজ্ঞেস করলো, তুমি কুকুরকে মেরেছো কেনো? বললাম, আমিতো কুকুরকে মারিনি। লাঠি দিয়ে ভয় দেখিয়েছিলাম। আমি একটা ছোট বারি দিয়েছিলাম বটে। যা ওই কাস্টমারটা দেখেছিলো। ওই কাস্টমারটা তখনো সেখানে ছিলো। সে সাক্ষী দিলো যে, সে দেখেছে আমি কুত্তাকে মেরেছি। আমি রেগেই বললাম, হ্যাঁ মেরেছি। এই কুত্তা যদি আমাকে কামড় দিতো? পুলিশ জানালো এই কুকুরের মালিক তোমার চিকিৎসার ব্যয়ভার বহন করতো। আমি বললাম, এখনি কুকুরের মালিকের খবর নেই। আমাকে কামড়ালে আমি তাকে খুঁজে বের করে ক্ষতিপূরণ নেবো? আমার কথায় এবার পুলিশ চুপ করে থাকলো।

আমি বললাম, আমাদের স্টোরে কুকুর বিড়াল এলাউ না। এটা তোমাদেরই আইন। আঙুল দিয়ে No Pets Allowed নোটিশটা দেখালাম। পুলিশ বললো, যতোই আইন থাক, তুমি কুকুরের গায়ে হাত তুলতে পারো না। আমি আরো কিছুটা রেগে বললাম, কুত্তা মারতে পারবো না মানে? 

পুলিশ আমাকে যা জানালো, আমি তাতে হতবাক ! পুলিশ বললো, আমেরিকায় একটা আইন আছে, যার নাম 'এনিমাল ক্রুয়েল্টি'( Animal Cruelty)। পশু পাখির প্রতি নির্দয় আচরণ। এটা ফেডারেল ক্রাইম। এর ন্যূনতম শাস্তি ১০০ ডলার জরিমানা বা ২৪ ঘন্টা জেল। 

এবার আমি ভয় পেয়ে গেলাম। খাইছে আমারে! শেষ মেশ কুত্তা মেরে জেলে যাবো! বললাম, আমিতো এই আইনটা জানতাম না। সরি। পুলিশ আমাকে বললো, আজ আমাদের কাছে প্রমিজ করো যে তুমি আর কোনোদিন কুকুর, বিড়াল বা কোনো প্রাণীকে মারবে না। আমি বললাম, সাপকেও কি মারতে পারবো না? পুলিশ বললো, না। তুমি এনিমাল হাসবেনড্রি(Animal husbandry- পশুপালন বিভাগ ) বিভাগে ফোন করবা। তারা এসে নিয়ে যাবে । 

শেষ পর্যন্ত আমি পুলিশের কাছে ক্ষমা চেয়ে প্রমিজ করলাম যে, জীবনেও আর কুত্তা, বিলাই, সাপ মারবো না। আমাকে ক্ষমা করো। ২৪ ঘন্টার জেল থেকে তো বাঁচতে হবে। পুলিশ সদস্যরা বললো, তুমি কুকুরটাকে জড়িয়ে ধরে তার দুই গালে দুটো চুমু খেয়ে একটু আদর করে দাও। 

কুত্তা প্রাণীটাকে আমি মনে প্রাণে ঘৃনা করি। আমি বললাম, সরি, আমি ১০০ ডলার জরিমানা দেবো কিন্তু কুকুরকে চুমু খেতে পারবো না। কিন্তু পুলিশ নাছোড়বান্দা। তারা আমাকে ফাইন করবে না, জেলেও নেবে না।

শেষ পর্যন্ত কুত্তাকে জড়িয়ে ধরে আমাকে চুমু খেতে হয়েছিলো। 

আমাদের দেশে মানুষ মানুষকে যে ভাবে প্রাণে মেরে ফেলে তাতে আমার মনে হয় আমেরিকার কুকুরের চেয়ে আমাদের দেশের মানুষের জীবনের মুল্য কম। 

বিঃদ্রঃ আমাদের দেশে একটা প্রবাদ আছে ,"কুকুরের লেজ ঘি দিয়ে মালিশ করলেও সোজা হয় না।" কিন্তু আমেরিকায় অনেক কুকুরের সোজা লেজ আমি দেখেছি। সোজা লেজের কুত্তা দেখুন।

Karim Chowdhury 

22 September, 2022C

umilla.



মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

আমার দেখা ১৯৭৪ সালের দুর্ভিক্ষ

আমার দেখা ১৯৭৪ সালের দুর্ভিক্ষ সরকারঃ শেখ মুজিবের শাসনামল ১৯৭৪-এর দুর্ভিক্ষ বাংলাদেশে ১৯৭৪ সালের মার্চে শুরু হয়ে সেই বছরেরই ডিসেম্বরের দিকে গিয়ে শেষ হয়। এই দুর্ভিক্ষে অসংখ্য মানুষ অনাহারে মারা গিয়েছিল। এই দুর্ভিক্ষকে স্মরণকালের মধ্যে সবচেয়ে ভয়ানক হিসেবে গন্য করা হয়। ওই সময় আমি বুঝতাম। ক্লাশ ফোরে পড়তাম। আহারে ! কি যে অভাব ! অনেকের মতো আমরাও ভাত না খেয়ে রুটি খেয়েছি । তাও পরিমিত । কখনো জাউ খেয়েছি । শুকনো মরিচ পাওয়া যেতো না । কাঁচা মরিচের কেজি ছিলো ১৫০ টাকা । লবন ১২০ টাকা । আর সোনার ভরি ছিলো তখন ১৫০ টাকা । সোনা শুধু ওই সময় কম দাম ছিলো । চারদিকে অভাব । সারাদেশের মানুষের হাহাকার । কতো মানুষ না খেয়ে মারা গেছেন ! বিদেশি রিলিফ সব আওয়ামী লীগের লোকেরা চুরি করেছে । আর বেশিরভাগ রিলিফ সীমান্ত দিয়ে ভারতে চলে পাচার হয়েছিলো । তখন বর্ডার খোলা ছিলো তখন । মহিলাদের শাড়ি কাপড় ছিলো না । অনেকে মাছ ধরার জাল পরে লজ্জাস্থান ঢেকেছিলো । এসব ছবি পত্রিকায়ও ছাপা হয়েছিলো । কিন্তু আওয়ামী লীগ নেতাদের কোনো অভাব ছিলো না । বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ শেষ হওয়ার মাত্র দুই বছর তিন মাসের মাথায় ...

বোতল

বোতল মানব জীবনে বোতল অপরিহার্য । বোতল অনেক অর্থেও ব্যবহার হয় । কোনো কোনো এলাকায় আনস্মার্ট, বেয়াক্কেল প্রকৃতির লোককেও বোতল বলা হয় । ইউরোপ আমেরিকায় থাকতে আমি ডৃংক করতাম । হার্ড ডৃংক কমই খেতাম । প্রতিদিনই বিয়ার খেতাম । বিয়ার স্বাস্থ্য ভালো রাখে ও কাজ করতে এনার্জি জোগায় । পরিমিত বিয়ার খেলে কেউ মাতাল হয় না । মাঝে মাঝে বিশেষ কোনো পার্টিতে হুইস্কি খাওয়া হতো । তাও দামি ব্র্যান্ডের । জনি ওয়াকার ব্ল্যাক লেবেল, টিচার্স, পাসপোর্ট, হেনেসি, শিভাস রিগাল, জ্যাক ড্যানিয়েলস । সাকুরায়ও অনেক সময় এসব ব্র্যান্ডের হুইস্কি পাওয়া যায় না । তো দেশে আসার পরও কিছু দিন ডৃংক করেছিলাম । কুমিল্লায় সরকার অনুমোদিত একটা মদের দোকান আছে চক বাজারে । নামঃ নাদের ট্রেডিং কোং । এটা প্রায় আজ ৫০ বছর । এখানে বিদেশি ব্র্যান্ডের ডৃংক পাওয়া যায় না । দেশিয় কোম্পানি ‘কেরো এন্ড কোং’ যা দর্শনায় অবস্থিত তার তৈরি ভদকা, হুইস্কি, জিন পাওয়া যায় । আমাদের সমাজতো রক্ষনশীল । তাই কান্দিরপাড় থেকে একটা স্প্রাইট কিনে অর্ধেক খেতে খেতে চক বাজার যেতাম । নাদেরে যখন পৌঁছতাম তখন স্প্রাইটের বোতল অর্ধেক খালি হয়ে যেতো । আমি বাবুল ভাইকে স্প্...

অশ্লীল নাম

বাংলাদেশের কিছু প্রতিষ্ঠান ও স্থানের বিচিত্র বা বিকৃত অর্থের নাম যা পরিবর্তন করা উচিতঃ ১. বোদা মহিলা মহাবিদ্যালয়, বোদা, পঞ্চগড় ২. চুমাচুমি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, রাঙ্গামাটি ৩. সোনাপোতা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, খুলনা ৪. মানুষমারা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, নীলফামারি ৫. সোনাকাটা ইউনিয়ন, তালতলী, বরগুনা ৬.বড়বাল ইউনিয়ন, মিঠাপুকুর, রংপুর ৭.সোনাখাড়া ইউনিয়ন, রায়গঞ্জ, সিরাজগঞ্জ ৮. ধনকামড়া গ্রাম, ভোদামারা, দিনাজপুর ৯.গোয়াকাটা, দোহার, ঢাকা ১০. গোয়াতলা, ময়মনসিংহ ১১.লেংটার হাট, মতলব, চাঁদপুর