সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

কী? বিয়ে শাদী করছো?

 কী? বিয়ে শাদী করছো?                   ফান পোস্ট 

----------------------------------                  **********

"কী? বিয়ে শাদী করছো? না এখনো আজান দিয়েই চলতেছো?”


এই কথা স্কুল জীবন থেকেই শুনে আসছি, সিনিয়র ভাইদের মুখে এমন কথা শুনে কিশোর বয়সে ভাবতাম, বিয়ের সাথে আজানের কী সম্পর্ক? আজান দিয়ে চললে কি বিয়ে করতে হয় না? কলেজে পড়ার সময় আমরা বন্ধুরাও বিষয়টা বুঝে একে অপরকে এই কথা বলতাম। কিন্তু এর শানে নুযুল জানতাম না। 


ইউরোপে থাকতে একবার সুইজারল্যান্ড গিয়েছিলাম বেড়াতে। অস্টৃয়া-সুইজারল্যান্ড প্রতিবেশি দেশ। ভিয়েনা থেকে সুইজারল্যান্ডের জুরিখ - Zurich (সবচেয়ে বড় শহর) ট্রেনে যেতে সময় লাগে ৭ ঘন্টা। আমি, কালাম, বাবু, নিউটন, পিটার আর মাইকেল। কালাম ফেনির, আমি কুমিল্লার, বাবু ঢাকা গোরানের, নিউটন টাঙ্গাইলের, পিটার আর মাইকেল অস্টৃয়ান। আমাদের প্রধান কাজই ছিলো ঘুরাঘুরি করা। বাড়ি ভাড়া আর নিজের খরচের জন্য ৮ ঘন্টা চাকরি করা। ইউরোপ আমেরিকায় কাজের নির্ধারিত সময় দৈনিক আট ঘন্টা। সপ্তাহে ৪০ ঘন্টা। দুইদিন ছুটি। ছুটি না নিয়েও দুইদিন প্রতিবেশি যে কোনো দেশে বেড়াতে যাওয়া যায়। আমরা এক সপ্তাহ ছুটি নিয়েই গিয়েছিলাম। যুবক বয়সের ‘পোংটামি’ আর কি !


সুইজারল্যান্ড গিয়ে আমরা কি কি করবো জুরিখ অভিমুখী দ্রুতগামি চলন্ত ট্রেনে বসে বিয়ার খেতে খেতে সবাই আলোচনা করে তার একটা রুটিন করছিলাম। নিউটন সাত নাম্বারে লিখলো-নাইট ক্লাব।


বাবু বিয়ার খেতে খেতে বললো, নিউটন আর কতোদিন আজান দিয়া চলবা? বিয়ে করে বউ নিয়ে আসো। অস্টৃয়াতো ফ্যামিলি ভিসার ব্যাপারে বেশ নমনীয়।


আমার মনে হলো,পাইছি।

আজানের সঙ্গে বিয়ে। বাবুকে বললাম, বাবু, আমি জানি যুবকদের কাছে এই ডায়লগটা বেশ জনপ্রিয়। কোত্থেকে এই ডায়লগের উৎপত্তি তা জানি না। এর শানে নুযুল কী? বাবু তাচ্ছিল্য করে বললো, এতো কিছু জানো আর এটা জানোনা? বাবু এর শানে নুযুল বললো। আমি জেনে নিলাম।


যখন ফ্লোরিডায় থাকতাম তখন একদিন মিজান ভাই শেল গ্যাস স্টেশনে এসে দুষ্টুমি করে আমাকে বললেন, তুমি বিয়ে করো না কেনো? আজান দিয়ে আর কতোদিন চলবা? 


আবার আজান! এশিয়ায় আজান, ইউরোপে আজান, আমেরিকাও আজান! মিজান ভাই ফ্লোরিডায় ধনী বাংলাদেশি আমেরিকানদের একজন। ওখানে তখন সোহেল, বাবুল ভাই, বাদল, এঞ্জেলা, মিনার্ভা ছিলো। মিজান ভাইয়ের বাসা কুমিল্লা শহরের ঝাউতলা। গ্রামীনফোন কাস্টমার কেয়ার সার্ভিসের সঙ্গে লাগোয়া তিন তলা বিল্ডিংটাই মিজান ভাইয়ের।


আমি মিজান ভাইকে বললাম, আজান দিয়ে চলার শানে নুযুলটা কি আপনি জানেন? মিজান ভাই বললেন, শানে নুযুল আমি জানি না। তুমি লেখালেখি করো তুমিই বলো। আমি তখন নিউ ইয়র্ক থেকে প্রকাশিত সাপ্তাহিক 'ঠিকানা' 'প্রবাসী' 'বাংলা পত্রিকা' আর ঢাকার সাপ্তাহিক 'যায়যায়দিন' এ লিখতাম। সুইজারল্যান্ড যাওয়ার পথে ট্রেনে বাবুর কাছে শোনা শানে নুযুলটা বললাম ...


গ্রামের এক মসজিদের মুয়াজ্জিন প্রতিদিন আজান দেন। আর ফরজ নামাজের আগে আকামত দেন। মুয়াজ্জিনের প্রধান কাজই এই দুটো। মসজিদের পাশেই ছিলো ইমাম সাহেবের বাসা। ভোরে ফজরের আজান দেয়ার পর ইমাম সাহেব ঘুম থেকে উঠে আস্তে ধীরে মসজিদ এবং বাড়ির মাঝামাঝি পুকুরে অজু করে মসজিদে আসেন। ১০/১৫ মিনিট নিজে এবাদত করেন। মুসুল্লিরা এলে জামাত শুরু করেন।


তো আজান দেয়ার পর ইমাম সাহেব আসার আগে মুয়াজ্জিন সাহেব মসজিদের সামনের খোলা জায়গায় এই সময়ে পায়চারী করেন। জামাত শুরুর আগে তার আর কোনো কাজ নেই। ওদিকে ইমাম সাহেবের স্ত্রীও উঠে উঠানে হাঁটাহাঁটি করেন। এভাবে দুজনের দৃষ্টি বিনিময় হতো। ধীরে ধীরে তা ভালোলাগায় গড়ায়। তো মুয়াজ্জিন সাহেব ভাবলেন, দু জনের দেখার সময়টা খুব কম। তাই পরদিন তিনি ১৫ মিনিট আগে আজান দিয়ে ফেলেন। আজান শুনে ইমাম সাহেব যথারীতি মসজিদে আসেন। আর ওই সুযোগে মুয়াজ্জিন সাহেব তার স্ত্রীর সঙ্গে গল্প টল্প করেন।


তাদের ভালোবাসা যখন তুঙ্গে তখন একদিন মুয়াজ্জিন সাহেব ১ ঘন্টা আগে আজান দিয়ে ফেলেন। ইমাম সাহেব আজান শুনে মসজিদে আসেন আর এই সুযোগে মুয়াজ্জিন সাহেব ইমাম সাহেবের বাসায় গিয়ে তার স্ত্রীর সঙ্গে একান্তে সময় কাটানো শুরু করেন। ইমাম সাহেব মসজিদে এসে অনেকক্ষণ এবাদত বন্দেগি করে ঘড়িতে দেখেন আরো ৩০ মিনিট বাকি জামাত শুরু হবার। তিনি ভাবলেন, মুয়াজ্জিন সাহেব হয়তো ভুল করে আজ আজান আগে দিয়ে ফেলেছেন।

সময় আছে দেখে ইমাম সাহেব ভাবলেন, বাসা যখন কাছে এই সময়ে এক কাপ চা খেয়ে আসা যায়। ইমাম সাহেব বাসায় এসে দেখেন তার স্ত্রী আর মুয়াজ্জিন এক বিছানায়।


শেষ পর্যন্ত গ্রাম্য সালিশ বসলো। ইমাম সাহেবের স্ত্রী বলে মান সম্মানের দিকে চেয়ে গ্রামবাসী বেশি বাড়াবাড়ি না করে ওই মুয়াজ্জিনকে চাকরি থেকে বরখাস্ত করলো। আর ইমাম সাহেব তাকে বললেন ,"তোরে যদি আর কোনো দিন এই এলাকায় দেখি তবে জানে মাইরালামু। তুই মুয়াজ্জিন হইয়া কিভাবে ইমাম সাহেবের বউয়ের দিকে নজর দিলি? তুই এক ঘন্টা আগে আজান দিয়া আমারে মসজিদে আইন্যা এই কামডা করলি !”


এখন এই মুয়াজ্জিন বেচারা কি কাজ করবেন? তিনি মাদ্রাসায় পড়ালেখা করে মুয়াজ্জিন হয়েছেন। এটাই তার পেশা। তিনি ৩/৪ মাইল দূরে আরেক মসজিদে গিয়ে আবার মুয়াজ্জিনের চাকরি নেন।


কয়েক বছর পর ওই এলাকায় এক বিরাট ওয়াজ মাহফিলের আয়োজন করা হয়। এতে বিভিন্ন মসজিদের ইমামদেরও আমন্ত্রন জানানো হয়। তো ওই মসজিদের ইমাম সাহেবও আমন্ত্রিত হয়ে ওয়াজ মাহফিলে যোগ দেন।

আর তখনি ওই মুয়াজ্জিনের সঙ্গে তার দেখা হয়। 


ইমাম সাহেব তখন মুয়াজ্জিনকে দেখে দুঃখ ভারাক্রান্ত মনে জিজ্ঞেস করেছিলেন, কী মিয়া? বিয়ে শাদী করছো? না আজান দিয়েই এখনো চলতেছো?

এটাই হলো ওই কথার শানে নুযুল ।

শোনে, মিজাই ভাই বলেছিলেন, ‘তুই (আমি) একটা পোংটা। এসব পাস কই ?’ ( 'পোংটা' কুমিল্লার স্থানীয় শব্দ যার অর্থ ফানি ক্যারেক্টার ।)


সুইজারল্যান্ডের জুরিখের এক গ্রামের একটা ছবিও জুড়ে দিলাম।

© Karim Chowdhury 

19 May, 2022

Cumilla. 

নোটঃ লেখাটি কেউ ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত বলে বিবেচনা করবেন না। আমাদের সমাজে তো কতো রকম জোকস প্রচলিত আছে।

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

আমার দেখা ১৯৭৪ সালের দুর্ভিক্ষ

আমার দেখা ১৯৭৪ সালের দুর্ভিক্ষ সরকারঃ শেখ মুজিবের শাসনামল ১৯৭৪-এর দুর্ভিক্ষ বাংলাদেশে ১৯৭৪ সালের মার্চে শুরু হয়ে সেই বছরেরই ডিসেম্বরের দিকে গিয়ে শেষ হয়। এই দুর্ভিক্ষে অসংখ্য মানুষ অনাহারে মারা গিয়েছিল। এই দুর্ভিক্ষকে স্মরণকালের মধ্যে সবচেয়ে ভয়ানক হিসেবে গন্য করা হয়। ওই সময় আমি বুঝতাম। ক্লাশ ফোরে পড়তাম। আহারে ! কি যে অভাব ! অনেকের মতো আমরাও ভাত না খেয়ে রুটি খেয়েছি । তাও পরিমিত । কখনো জাউ খেয়েছি । শুকনো মরিচ পাওয়া যেতো না । কাঁচা মরিচের কেজি ছিলো ১৫০ টাকা । লবন ১২০ টাকা । আর সোনার ভরি ছিলো তখন ১৫০ টাকা । সোনা শুধু ওই সময় কম দাম ছিলো । চারদিকে অভাব । সারাদেশের মানুষের হাহাকার । কতো মানুষ না খেয়ে মারা গেছেন ! বিদেশি রিলিফ সব আওয়ামী লীগের লোকেরা চুরি করেছে । আর বেশিরভাগ রিলিফ সীমান্ত দিয়ে ভারতে চলে পাচার হয়েছিলো । তখন বর্ডার খোলা ছিলো তখন । মহিলাদের শাড়ি কাপড় ছিলো না । অনেকে মাছ ধরার জাল পরে লজ্জাস্থান ঢেকেছিলো । এসব ছবি পত্রিকায়ও ছাপা হয়েছিলো । কিন্তু আওয়ামী লীগ নেতাদের কোনো অভাব ছিলো না । বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ শেষ হওয়ার মাত্র দুই বছর তিন মাসের মাথায় ...

বোতল

বোতল মানব জীবনে বোতল অপরিহার্য । বোতল অনেক অর্থেও ব্যবহার হয় । কোনো কোনো এলাকায় আনস্মার্ট, বেয়াক্কেল প্রকৃতির লোককেও বোতল বলা হয় । ইউরোপ আমেরিকায় থাকতে আমি ডৃংক করতাম । হার্ড ডৃংক কমই খেতাম । প্রতিদিনই বিয়ার খেতাম । বিয়ার স্বাস্থ্য ভালো রাখে ও কাজ করতে এনার্জি জোগায় । পরিমিত বিয়ার খেলে কেউ মাতাল হয় না । মাঝে মাঝে বিশেষ কোনো পার্টিতে হুইস্কি খাওয়া হতো । তাও দামি ব্র্যান্ডের । জনি ওয়াকার ব্ল্যাক লেবেল, টিচার্স, পাসপোর্ট, হেনেসি, শিভাস রিগাল, জ্যাক ড্যানিয়েলস । সাকুরায়ও অনেক সময় এসব ব্র্যান্ডের হুইস্কি পাওয়া যায় না । তো দেশে আসার পরও কিছু দিন ডৃংক করেছিলাম । কুমিল্লায় সরকার অনুমোদিত একটা মদের দোকান আছে চক বাজারে । নামঃ নাদের ট্রেডিং কোং । এটা প্রায় আজ ৫০ বছর । এখানে বিদেশি ব্র্যান্ডের ডৃংক পাওয়া যায় না । দেশিয় কোম্পানি ‘কেরো এন্ড কোং’ যা দর্শনায় অবস্থিত তার তৈরি ভদকা, হুইস্কি, জিন পাওয়া যায় । আমাদের সমাজতো রক্ষনশীল । তাই কান্দিরপাড় থেকে একটা স্প্রাইট কিনে অর্ধেক খেতে খেতে চক বাজার যেতাম । নাদেরে যখন পৌঁছতাম তখন স্প্রাইটের বোতল অর্ধেক খালি হয়ে যেতো । আমি বাবুল ভাইকে স্প্...

ফেবুতে মেয়েদের পোস্ট

ফেবুতে মেয়েদের পোস্ট সকালে ঘুম ভেঙে দেখি আট টা বাজে । শরীরটাও বেশি ভালো লাগছে না । আবার ঘুমাল াম । ১১টায় উঠলাম । ২ মগ চা খেলাম ( বাজারের হিসেবে ৮ কাপ হবে)। সবাই জানেন আমি স্মোক করি । চেইন স্মোকার । কম্পিউটার খোঁচাখুঁচি করে নিজে নিজেই ঠিক করলাম । প্রায় দুই ঘন্টা । আমি থাকি চার তলায় । দুপুর ১টা বাজে । খেতেও ইচ্ছে করছে না কিছু । তখনো মুখ ধুই নি । কম্পিউটারে খোঁচাখোঁচি করতে গিয়ে দেখি এক মেয়ে তার পা’য়ের একটা ছবি আপলোড করেছে । দেখলাম এই পা মানে ঠ্যাং এর ছবিতে লাইক পড়েছে ৯৪৭ টা । কমেন্ট অসংখ্য । ‘কতো সুন্দর এই পা । না জানি তুমি কতো সুন্দর । পা তো নয় যেন একটা গোলাপ ফুল’ । এ জাতীয় অনেক কমেন্ট । আমি পোষ্ট টা দেখে কিছুটা অবাক হলাম । একটা ঠ্যাং এর এতো কদর ! প্রায়ই লক্ষ্য করি, মেয়েরা যখনি কিছু আপলোড করে সেটা তাদের পায়ের ছবিই হোক,হাতের ছবিই হোক আর নাকের ছবিই হোক বা এক চোখের ছবিই হোক সে সব ছবিতে অগনিত লাইক আর কমেন্ট । মেয়ে বন্ধুদের ছোট করার জন্য বলছি না, ফেবুতে প্রায়ই দেখি মেয়েরা কোনো ছবি বা দু এক লাইন হাবিজাবি লিখলে লাইক আর কমেন্টের বন্যা বয়ে যায় । অনেক মেয়েরা শখ করে পিঠা, ...