সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

চে গুয়েভারা

 চে গুয়েভারা

------------------

চিকিৎসক থেকে বলিভিয়ার আপোষহীন সংগ্রামী হয়ে ওঠা চে গুয়েভারাকে পা*শবিক হ*ত্যা করার কাহিনী যতটা নৃশংস,ঠিক ততটাই বিপ্লবীর নিজের জীবন সংগ্রামের মতোই দৃষ্টান্তকারী। সেই ৯ অক্টোবর দুপুরের কিছুটা সময় আগে চে গুয়েভারা এবং তাঁর সঙ্গীদের আটক করার প্রায় ২৪ ঘণ্টা পরে বলিভিয়ার সেই গ্রাম লা হিগুয়েরার ছোট স্কুল ঘরে সার্জেন্ট মারিও টেরেন ঢোকেন সরকারের নির্দেশ পালন করতে। ঘরে ঢুকে তিনি দেখতে পান,উনি দেয়ালে হেলান দিয়ে বসে আছেন,অপেক্ষা করছেন। সৈনিকের ঘরে ঢোকার উদ্দেশ্য চে গুয়েভারা বুঝতে পারেন। তিনি শান্তভাবে তাঁকে উঠে দাঁড়ানো পর্যন্ত অপেক্ষা করতে বলেন। সার্জেন্ট টেরেন ভীত হয়ে কাঁপতে থাকেন,দৌঁড়ে ঘর থেকে পালিয়ে যান ......


কিন্তু টেরেনকে ঘরে ফিরে গিয়ে আর বিলম্ব না করে চে-কে গুলি করে হত্যা করতে নির্দেশ দেওয়া হয়,সৈনিকটি তখনো কাঁপছেন। স্কুল ঘরে ফিরে গিয়ে চে-র দিকে না তাঁকিয়ে তাঁর রাইফেল থেকে পরপর নয়টি গু*লি করেন চে গুয়েভারার বুকে এবং বুকের পাশে,যা তাঁর দেহ ভেদ করে দেয়ালে বড়-বড় গর্ত তৈরি করে ফেলে। তারপর তাঁর ক্ষতবিক্ষত দেহ ভ্যালেগ্রান্দেতে নিয়ে যাওয়া হয় হেলিকপ্টারে। সেখান থেকে শেভ্রোলেট ট্রাকে করে দ্রুত নেওয়া হয় সেন্ব ডি মাল্টা হাসপাতালে। এখানেই ধুয়েমুছে তাঁর দেহ থেকে রক্ত পরিষ্কার করা হয়। তারপর বলিভিয়ার সেনাপ্রধান জেনারেল আলফ্রেদো ওভান্দোসহ অন্য সামরিক কর্মকর্তারা নিহত চে গুয়েভারাকে দেখতে আসেন। ডাক্তার ও সরকারি কর্মকর্তাদের কাজের শেষে সাংবাদিক,আরো অনেক কৃষক আর সাধারণ মানুষ এবং সৈন্য সারারাত লাইন করে চে-কে দেখে,তাঁর জ্যাকেটবিহীন খোলা দেহ,কোমর থেকে নিচ পর্যন্ত গেরিলা প্যান্ট। প্রত্যক্ষদর্শীর ভাষায়,চে গুয়েভারা তখন আশ্চর্যজনকভাবে জীবন্ত ছিলেন। চোখ দুটি শুধু খোলাই ছিল না,অসম্ভব রকম সুন্দর লাগছিল। দুটি ঠোঁটে লেগে ছিল মর্মস্পর্শী হাসি,চে গুয়েভারার এই যিশুখ্রিষ্টসদৃশ ছবিই ছড়িয়ে পড়েছিল বিশ্বের সর্বত্র,এভাবেই চে-র দেহ ২৪ ঘণ্টা ধরে রেখে দেওয়া হয়েছিল। বিস্ময়ে-বেদনায় তাঁকে দেখে যাচ্ছিল মানুষ আর মানুষ .....


এরপর বলিভীয় কর্তৃপক্ষ চে-র মৃত্যুর প্রমাণ রাখার জন্য তাঁর দুই হাত কেটে ও প­স্টারে মুখের ছাপ নিয়ে সঙ্গীদের সঙ্গে চে গুয়েভারা কে কবর দেয়। কোথায় তাঁকে কবর দেওয়া হয়েছে,তা গোপন রাখা হয়। তাঁর মৃত্যুর এক বছরের মধ্যে,১৯৬৮ সালের মধ্য-মার্চে প্রথম জীবনে কমিউনিস্ট,পরে সিআইএ এজেন্ট ও তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আন্তনিও আরগুয়েডেস গোপনে এক সাংবাদিক বন্ধুর মাধ্যমে চে গুয়েভারার ডায়েরির ফটোকপি কিউবায় ফিদেল কাস্ত্রোর কাছে উপহার হিসেবে পাঠান। জুলাইয়ের প্রথম দিনে কিউবা সরকার এটি প্রকাশ করে। এই বই কিউবা থেকে লাতিন আমেরিকা,ইউরোপসহ সারা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়ে। আরগুয়েডেস আরেক ইতিহাস রচনা করেছিলেন রাসায়নিক উপাদানে সংরক্ষিত চে গুয়েভারার দুই হাত লেখকবন্ধু জর্জ সুয়ারেজের হাতে তুলে দিয়ে। চে-র মৃত্যুর আট দিন পর তিনি এটি তাঁর হাতে তুলে দেন। কিন্তু নানা ঘটনায় এগুলো কিউবায় পৌঁছাতে দুই বছরের বেশি সময় লাগে। ১৯৭০ সালের ৫ জানুয়ারি তা কিউবায় পৌঁছায়। বিস্ময়কর ঘটনাবলির মধ্য দিয়ে ১৯৯৭ সালের জুলাইয়ে কিউবা ও আর্জেন্টিনার ফরেনসিক বিশেষজ্ঞরা ভ্যালেগ্রান্দেতে হাতবিহীন চে গুয়েভারা এবং তাঁর সঙ্গীদের দেহাবশেষ খুঁজে পান। সেসব দেহাবশেষ কিউবায় পাঠানো হলে কিউবার সামত্মা ক্লারায় (যে-শহর চে মুক্ত করেছিলেন) নতুন স্মৃতিসৌধ স্থাপন করে তা সমাহিত করা হয় ....

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

আমার দেখা ১৯৭৪ সালের দুর্ভিক্ষ

আমার দেখা ১৯৭৪ সালের দুর্ভিক্ষ সরকারঃ শেখ মুজিবের শাসনামল ১৯৭৪-এর দুর্ভিক্ষ বাংলাদেশে ১৯৭৪ সালের মার্চে শুরু হয়ে সেই বছরেরই ডিসেম্বরের দিকে গিয়ে শেষ হয়। এই দুর্ভিক্ষে অসংখ্য মানুষ অনাহারে মারা গিয়েছিল। এই দুর্ভিক্ষকে স্মরণকালের মধ্যে সবচেয়ে ভয়ানক হিসেবে গন্য করা হয়। ওই সময় আমি বুঝতাম। ক্লাশ ফোরে পড়তাম। আহারে ! কি যে অভাব ! অনেকের মতো আমরাও ভাত না খেয়ে রুটি খেয়েছি । তাও পরিমিত । কখনো জাউ খেয়েছি । শুকনো মরিচ পাওয়া যেতো না । কাঁচা মরিচের কেজি ছিলো ১৫০ টাকা । লবন ১২০ টাকা । আর সোনার ভরি ছিলো তখন ১৫০ টাকা । সোনা শুধু ওই সময় কম দাম ছিলো । চারদিকে অভাব । সারাদেশের মানুষের হাহাকার । কতো মানুষ না খেয়ে মারা গেছেন ! বিদেশি রিলিফ সব আওয়ামী লীগের লোকেরা চুরি করেছে । আর বেশিরভাগ রিলিফ সীমান্ত দিয়ে ভারতে চলে পাচার হয়েছিলো । তখন বর্ডার খোলা ছিলো তখন । মহিলাদের শাড়ি কাপড় ছিলো না । অনেকে মাছ ধরার জাল পরে লজ্জাস্থান ঢেকেছিলো । এসব ছবি পত্রিকায়ও ছাপা হয়েছিলো । কিন্তু আওয়ামী লীগ নেতাদের কোনো অভাব ছিলো না । বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ শেষ হওয়ার মাত্র দুই বছর তিন মাসের মাথায় ...

বোতল

বোতল মানব জীবনে বোতল অপরিহার্য । বোতল অনেক অর্থেও ব্যবহার হয় । কোনো কোনো এলাকায় আনস্মার্ট, বেয়াক্কেল প্রকৃতির লোককেও বোতল বলা হয় । ইউরোপ আমেরিকায় থাকতে আমি ডৃংক করতাম । হার্ড ডৃংক কমই খেতাম । প্রতিদিনই বিয়ার খেতাম । বিয়ার স্বাস্থ্য ভালো রাখে ও কাজ করতে এনার্জি জোগায় । পরিমিত বিয়ার খেলে কেউ মাতাল হয় না । মাঝে মাঝে বিশেষ কোনো পার্টিতে হুইস্কি খাওয়া হতো । তাও দামি ব্র্যান্ডের । জনি ওয়াকার ব্ল্যাক লেবেল, টিচার্স, পাসপোর্ট, হেনেসি, শিভাস রিগাল, জ্যাক ড্যানিয়েলস । সাকুরায়ও অনেক সময় এসব ব্র্যান্ডের হুইস্কি পাওয়া যায় না । তো দেশে আসার পরও কিছু দিন ডৃংক করেছিলাম । কুমিল্লায় সরকার অনুমোদিত একটা মদের দোকান আছে চক বাজারে । নামঃ নাদের ট্রেডিং কোং । এটা প্রায় আজ ৫০ বছর । এখানে বিদেশি ব্র্যান্ডের ডৃংক পাওয়া যায় না । দেশিয় কোম্পানি ‘কেরো এন্ড কোং’ যা দর্শনায় অবস্থিত তার তৈরি ভদকা, হুইস্কি, জিন পাওয়া যায় । আমাদের সমাজতো রক্ষনশীল । তাই কান্দিরপাড় থেকে একটা স্প্রাইট কিনে অর্ধেক খেতে খেতে চক বাজার যেতাম । নাদেরে যখন পৌঁছতাম তখন স্প্রাইটের বোতল অর্ধেক খালি হয়ে যেতো । আমি বাবুল ভাইকে স্প্...

অশ্লীল নাম

বাংলাদেশের কিছু প্রতিষ্ঠান ও স্থানের বিচিত্র বা বিকৃত অর্থের নাম যা পরিবর্তন করা উচিতঃ ১. বোদা মহিলা মহাবিদ্যালয়, বোদা, পঞ্চগড় ২. চুমাচুমি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, রাঙ্গামাটি ৩. সোনাপোতা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, খুলনা ৪. মানুষমারা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, নীলফামারি ৫. সোনাকাটা ইউনিয়ন, তালতলী, বরগুনা ৬.বড়বাল ইউনিয়ন, মিঠাপুকুর, রংপুর ৭.সোনাখাড়া ইউনিয়ন, রায়গঞ্জ, সিরাজগঞ্জ ৮. ধনকামড়া গ্রাম, ভোদামারা, দিনাজপুর ৯.গোয়াকাটা, দোহার, ঢাকা ১০. গোয়াতলা, ময়মনসিংহ ১১.লেংটার হাট, মতলব, চাঁদপুর