প্রেমের চিঠি
------------------
তখন ইন্টার সেকেন্ড ইয়ারে পড়তাম। বয়সটাই উচ্ছ্বলতার। আমি সাইন্সে আর বন্ধু তাহের আর্টসে। আমি তাকে রাগাতাম, বলতাম- তোর ভেতর মানবিকতা নেই বলে তুই মানবিক বিভাগে পড়িস। তাহের ইকোনমিক্স প্রাইভেট পড়তো বাগিচাগাঁও রফিক স্যারের কাছে। স্যার এখনো আছেন। এই প্রাইভেট পড়তে গিয়ে চান্দু এক মেয়ের প্রেমে পড়ে যায়।
এক বিকেলে কান্দিরপাড় (শহরের মূল কেন্দ্র) ডায়ানা রেস্টুরেন্টে চা খাওয়ার আড্ডায় তাহের অনুরোধ করলো, আমি যেনো সুন্দর করে একটা প্রেমপত্র লিখে দিই। আমি আগেই ছ্যাঁকা খেয়ে শোকাভিভূত।
শর্ত দিলাম, মাতৃ ভান্ডারে রসমালাই খাওয়াতে হবে। তাহের এক পায়ে খাড়া। আমি সুন্দর প্রেমের চিঠি লিখতে পারতাম বলে ফ্রেন্ড সার্কেলে সুনাম ছিলো। পর দিন মনের মাধুরি মিশিয়ে দুই পৃষ্ঠার এক প্রেমপত্র লিখলাম। জাহাঙ্গীর, হিরো, মিন্টু, খোকন, বাদল, ইকবাল, মুন্না, তাহের সবার সামনে চিঠি পড়লাম। সবাই রায় দিলো, এই চিঠি মেয়ে পেলে প্রেম হবেই। নিশ্চিত। মাতৃ ভান্ডারে রসমালাই খাওয়ার ধুম পরে গেলো। বিল দিলো তাহের। আমার চিঠি লেখার পারিশ্রমিক।
দুই দিন পর তাহের আমার বাসায় গেলো সকাল ৯টায়। তাহের ঝাউতলা আর আমি কান্দিরপাড় থাকতাম। ওয়াকিং ডিসট্যান্স। আমি তখনো ঘুমে। তাহের আমার গায়ের পাতলা কাঁথা এক টানে সরিয়ে ধমক দিয়ে ডাকলো,
এই... উঠ। (আমরা বন্ধুদের সবার ফ্যামিলিতে সবার অবাধ যাতায়ত ছিলো)।
আমি চোখ কচলাতে কচলাতে উঠে বসলাম। জিজ্ঞেস করলাম, কি হইছে? তাহের উগ্র মেজাজে একটা চিঠি আমার সামনে ছুড়ে মেরে বললো, এইটা পড়।
আমি পড়লাম।
আমি যে প্রেমের চিঠি লিখে দিয়েছিলাম ওই মেয়ে সেই চিঠির উত্তর দিয়েছে। মেয়েটির নাম ছিলো মিরু। ওই মেয়ে তাহেরকে লিখেছে...
" তুমি খুব সুন্দর প্রেমের চিঠি লিখতে পারো। তোমার চিঠি পড়ে মনে হয় না যে এটাই তোমার প্রথম প্রেম।চিঠিটা যিনি লিখেছেন তার সাথে আমার পরিচয় করিয়ে দিও।"
তাহের আমাকে বললো...
“তোরে এতো ভালো চিঠি লেখতে কে কইছে? প্রেম তো আর হইবোই না। মাইয়া বুইজ্জা লাইছে এইটা অভিজ্ঞ প্রেমিকের লেখা চিঠি। আবার তোর সাথে পরিচিত হতে চায়। খবরদার তুই এই মাইয়ার লগে জীবনেও দেখা করবি না। তুই বিশ্বপ্রেমিক।
এখন তুই আমার রসমালাইর টাকা ফেরত দে।"
আসলেই আগের দিনগুলো মধুর ছিলো ।
© Karim Chowdhury
25 April, 2022
Cumilla.
সেই সময়ের একটা ছবি।
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন