কাবেরী
-----------
করিম চৌধুরী
(ভালোবাসা দিবস উপলক্ষে গল্প)
কাবেরীর সঙ্গে আমার পরিচয় ২০১৬ সালের জুন মাসে। আজ থেকে সাত বছর আগে। ফেইসবুকে আমরা বন্ধু হই। তারপর ঘনিষ্ঠতা। তার পুরো নাম কাবেরী মির্জা। প্রথম যখন বন্ধু হই তখনো কাবেরীর প্রোফাইলে তেমন কিছুই ছিলো না। শুধু লেখা ছিলো Lives in Dhaka. তার হোম ডিস্ট্রিক্টও উল্লেখ ছিলো না।
অন্য অনেকের মতো কাবেরীও আমার লেখা খুব পছন্দ করতো। আমাকে যারা চেনেন তারা জানেন যে, এক সময়ের তুমুল জনপ্রিয় সাপ্তাহিক যায়যায়দিন ম্যাগাজিনে তরুণ লেখকদের মধ্যে আমি বেশ জনপ্রিয় ছিলাম। মৌচাকে ঢিল ম্যাগাজিনেও আমি সবচেয়ে জনপ্রিয় লেখক ছিলাম। ফেইসবুকে আমার লেখার স্টাইলও অনেকটা সেরকম ।
ম্যাগাজিনে লেখার কারণে বাংলাদেশের সব জেলায় আমার পাঠক বন্ধু আছেন। ২০০০ সালে সম্পাদক মি.শফিক রেহমান ও মিসেস তালেয়া রেহমান ফ্লোরিডা আমার কাছে বেড়াতে গিয়ে আমাকে বলেছিলেন, তোমার লেখা ছাপা হলে মেলব্যাগে পাঠকের চিঠি আসে বেশি।
আমি বিদেশের অভিজ্ঞতার কথা বেশি লিখি এবং আমার লেখায় প্রচুর ফান থাকে। হয়তো কাবেরী সেটিই বেশি পছন্দ করেছিলো। যতোদিন আমরা বন্ধু ছিলাম ফেইসবুকে ততোদিন আমার এমন কোনো পোস্ট নেই যেখানে কাবেরীর ফানি কমেন্ট ছিলো না। এই পোস্টে তার কিছু কমেন্টও দিলাম। প্রথম কাবেরীর ফেইসবুকে বাংলা নাম ছিলো ‘কাবেরী মির্জা’ নামে। তারপর আমি অনুরোধ করে সেটা ইংরেজিতে লিখতে বলি এবং তার হোম ডিস্ট্রিক্ট উল্লেখ করে প্রোফাইলে যেন তার মেরিটাল স্ট্যাটাস দেয় সে জন্য অনুরোধ করি। কাবেরী আমার কথা রেখেছিলো। আগে Kaberi লিখলেও পরে তার নামের বানান পরিবর্তন করে Kabery করেছে।
আমি অনেক ব্যক্তিগত, পারিবারিক কথাও ওই সময় লিখতাম। কাবেরী সবই পড়তো আর কমেন্ট করতো। আমিও মাঝে মাঝে কমেন্টের জবাব দিতাম। এভাবে একটা সখ্য গড়ে উঠেছিলো আমাদের মাঝে।
২০১৬ সালের জুলাই মাসে একদিন রাত সাড়ে নয়টায় আমার ফোনটা বেজে উঠে। দেখলাম একটা আননোন এয়ারটেল নাম্বার থেকে কল। ধরে হ্যালো বলতেই সালাম পেলাম। তিনি নিজেই তার পরিচয় দিলেন যে, তিনি কাবেরী মির্জা। ঢাকা থেকে বলছেন। যে কোনো লেখকের কাছে তার ফ্যানদের ভালোবাসা খুব গুরুত্বপূর্ণ। লেখক এতে বেশি উৎসাহিত হয়। ফেইসবুকে তিন চার লাইন লিখলাম, আর অনেক লাইক, কমেন্ট পেলাম তাতে আমি মোটেও আনন্দিত হই না। ফেইসবুকের লেখা আর পত্রিকার লেখা আকাশ পাতাল পার্থক্য। পত্রিকায় নির্দিষ্ট শ্রেণির শিক্ষিত পাঠক থাকে যা ফেইসবুকে খুবই সামান্য।
আমি জানতে চাইলাম, আমার ফোন নাম্বার কোথায় পেয়েছেন? তিনি জানালেন, ফেইসবুক প্রোফাইলে আমার ফোন নাম্বার উমুক্ত করা আছে সেখান থেকেই নিয়েছেন।
বেশ কিছুক্ষণ কথা বলার পর তিনি বললেন, তাকে যেন আমি ‘তুমি’ বলে সম্বোধন করি। কারন সে বয়সে আমার প্রায় ১৮/২০ বছরের ছোট। সেদিন আমরা প্রায় ২ ঘন্টা কথা বলেছিলাম। তিনি জানালেন, আমার পোস্ট তার খুব ভালো লাগে তাই আমার সঙ্গে কথা বলার ইচ্ছা থেকেই তিনি ফোন করেছেন। এরপর আমি তার হাসব্যান্ড Golam Kibria'র লিস্টেও যাই। যিনি পরে নাম বদলে Mirza Mamun নামে ফেসবুক চালায়।
সে দিনের পর থেকে কাবেরী প্রতিদিন আমাকে কয়েকবার ফোন করতো। আমি তখন একটা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ইংরেজি পড়াতাম। অনেক সময় ক্লাস টাইমেও কাবেরী ফোন করতো। সে সময় বিকেল ৫টার পর আমার কাছে কয়েকজন ক্লাস টেনের মেয়ে ইংরেজি পড়তো বাসায় এসে। অনেকদিন কাবেরী ওই সময় ফোন করতো। আমি কথা বলতাম। আমার প্রায় সব ছাত্রীই কাবেরীর নাম জানে। আমিই বলেছিলাম। মনে অপরাধবোধ না থাকলে সব কথাই বলা যায়। অনেক সময় ছাত্রীরা ক্লাসে জিজ্ঞেস করতো, স্যার, কাবেরী আপু কেমন আছেন?
কাবেরী আমাকে কখনোই নাম ধরে সম্বোধন করতো না। প্রথম কয়েকদিন কথা বলে কাবেরী আমার অনুমতি চাইলো এই বলে যে, আপনি তো আমার অনেক সিনিয়র। আমি যদি একজন জুনিয়র বন্ধু হয়ে আপনাকে 'তুমি' সম্বোধন করি আপনি কি কিছু মনে করবেন? আমি অনুমতি দিয়েছিলাম। সেই থেকে কাবেরী আমাকে 'তুমি' সম্বোধনে ডাকে। তবে ফেইসবুক পোস্টে চৌধুরী, মন্টু বলে ফানি কমেন্ট করলেও ফোনে কথা বলার সময় কাবেরী কোনোদিনই আমাকে নাম ধরে ডাকেনি।
কথা বলার ফাঁকে ফাঁকে জানা হলো, কাবেরী বিবাহিতা। বয়স ২৭/২৮ বছর। দুই লছেলের মা। অনিক বড়। আশিক ছোট। বাড়ি নোয়াখালীর চাটখিল উপজেলার দশঘরিয়া গ্রামে। খান বাড়ি। বাবার নাম মি.আজিজুর রহমান খান। মায়ের নাম মিসেস মোমেনা বেগম। এক ভাই, দুই বোন তারা। ভাই বড়। নাম কাইয়ুম। এরপর কাবেরী। ছোট বোন কলি। বর্তমানে ঢাকা মোহাম্মদপুর স্বামীর বাসায় থাকে। তবে পাঁচ তলা বাড়িটা কাবেরীর নামে। বাবা মা,ভাই বোন চাটখিলেই আছেন। আমি দুষ্টুমি করে বলেছিলাম, তোমরা ভাই বোন সকলের নাম 'ক' দিয়ে! কাইয়ুম, কাবেরী, কলি। আমার নামও 'ক' দিয়ে। ঘটনা কী? এতো মিলে গেলো কেনো?
কাবেরী বলেছিলো, এটাও একটা মিরাকল।
একদিন বললাম, তোমার সঙ্গে কথা বলি কিন্তু আমিও তোমার নাম ধরে কথা বলতে বিব্রতবোধ করি। আমার সেজো আপার ডাক নাম মণি। আমি তোমাকে আমার বোনের ওই আদুরে নামে ডাকলে তুমি কি কিছু মনে করবে? কাবেরী খুশি হয়ে আমাকে অনুমতি দিয়েছিলো। সেই থেকে ২০১৭ সালের ডিসেম্বরের ১০ তারিখ পর্যন্ত দেড় বছর আমি কাবেরীকে মণি বলেই ডেকেছি।
কাবেরী সব সময় আমার খোঁজ নিতো। প্রতিদিন কয়েকবার ফোন করতো। ম্যাসেঞ্জার, ইমো, হোয়াটসঅ্যাপে নয়। সরাসরি নাম্বারে কল করতো। অনেকদিন সকালে ফোন করে আমাকে জাগিয়ে দিতো। আমি একা থাকি। বাবা, মা জীবিত নেই। এসব কারনে আমার জন্য তার মনে একটা মায়া জন্মেছিলো সেটা আমি অনুভব করতে পেরেছিলাম। অনেক সময় ফোনে রাগারাগিও হতো। বিশেষ করে কাবেরীর পোস্টে বেশিরভাগ ছেলে খুব ফ্রেন্ডলি কমেন্ট করতো আর কমেন্টে কাবেরীকে তুমি বলে সম্বোধন করতো যা আমার কাছে ভালো লাগতো না। এদের অনেকেই কাবেরীর জুনিয়র। শিক্ষাদীক্ষাও এদের কাবেরীর চেয়ে কম। একজনের স্ত্রী এবং দুই সন্তানের মাকে শুধু ফেইসবুক বন্ধু তুমি বলে সম্বোধন করতে পারে না একমাত্র ঘনিষ্ঠ আত্নীয় আর ব্যক্তিগত বন্ধু ছাড়া। এটা আমার মতামত। আর বিবাহিতা এবং দুই সন্তানের মা হলেও কাবেরী প্রায় সময় নিজের একা আকর্ষণীয় ছবি ফেইসবুকেতে আপলোড করতো।
আর সেই সব ছবিতে দুনিয়ার ছেলেরা লাভ রিয়েক্ট দিয়ে রোমান্টিক কমেন্ট করতো। কাবেরীও রোমান্টিক উত্তর দিতো। তাছাড়া কাবেরীর ফ্রেন্ড লিস্টে তার কয়েকজন মেয়ে আত্নীয় ছাড়া সব অনাত্মীয় ছেলে। কাবেরীর ফ্রেন্ডলিষ্ট হাইড থাকে। এ নিয়েও আমি আপত্তি করেছিলাম। মামুন তার ব্যবসায়িক স্বার্থে কাবেরীকে ফ্রন্টলাইনে রাখে। তারপরও অনিচ্ছা স্বত্বেও আমি তা মেনে নিই। যেখানে তার স্বামীর আপত্তি নেই সেখানে আমি কে?
আস্তে আস্তে আমাদের সম্পর্ক মধুর থেকে মধুরতম হয়ে উঠলো। চাটখিলের অনেকেই আমার বন্ধু হলেন। উল্লেখযোগ্য Nasima Sultana, Taslima Sultana Khanom, Mafruya Hasan Porny, Mamun Hasan Al Razi, সাহিদুল ইসলাম শাওনসহ আরো অনেকেই। এরা সকলেই কাবেরীর আত্নীয়। আমার কাছে মনে হতো চাটখিল আমার নিজের এলাকা। তাদের কেউই এখন আমার লিস্টে নেই! আমার আগের একাউন্টটা হ্যাকড হয়েছে। এটা নতুন একাউন্ট।
আমার পোস্ট নিয়ে কাবেরী, তার স্বামী মামুন এবং মামুনের বন্ধুরা গল্প করতেন বলে কাবেরীই আমাকে জানিয়েছিলো।
২০১৬ সালের জুন থেকে ডিসেম্বর। ছয় মাস। ২০১৬ সালের ডিসেম্বরের ৩০ তারিখ সন্ধ্যা ৬টায় আমি বাসায় শুয়ে টিভি দেখছিলাম। এমন সময় আমার নাম্বারে গ্রামীণ ফোন থেকে একটা কল এলো। আমি হ্যালো বলে রিসিভ করতেই এক ভদ্রলোক বললেন, করিম সাহেব, আপনি কোথায়? আমি কাবেরীর হাসব্যান্ড মামুন। আমরা আপনার বাসার নীচে।
আমি বিস্ময়ে হতবাক! সেদিন আমি তাদের ছবিসহ লিখেছিলাম...
"কি লিখবো? কি হলো? কেনো হলো? কেমন করে হলো?
আমি অবাক, আশ্চার্য, বিমোহিত, আনন্দিত, কিংকর্তব্যবিমুঢ়, অবিশ্বাস্য! এটা কেমন করে সম্ভব? আমি কি পারবো এই ভালোবাসা আর আন্তরিকতার বিনিময় দিতে কোনোদিন? কেনো আমাকে এই কৃতজ্ঞতার পাশে আবদ্ধ করলো তারা? আমি ‘করলো’ লিখেছি। ‘করলেন’ লিখিনি। কারন আজ থেকে আমি তাদের ফ্যামিলি ফ্রেন্ড।
আমি কি লিখবো? কেমন করে লিখবো? কিভাবে সাজাবো এই লেখা আমি জানি না। আমার ভাষা নেই। I've really lost my language to express my actual feeling. I'm speechless. আমার ভাষা এলোমেলো হয়ে গেছে। কোন ভাষায় লিখলে এই বন্ধুত্বের প্রকৃত মর্যাদা দেয়া যায়? আমি কিছুই জানি না।
আমার ফেইসবুক বন্ধু Kabery Mirza একটু আগে আমার বাসায় এলো। সে আমার সব পোষ্ট পড়ে। পছন্দ করে। আমার সম্পর্কে অনেক জানে। ফেইসবুকের লেখা পড়েই। আমাকে নিয়ে তার বাসায় ভাইবোন, মা, স্বামী(মামুন)র সঙ্গেও কথা বলে।
তারা নোয়াখালী থেকে এসেছে। আমি কি করবো ভেবে পাচ্ছিলাম না। খুবই অপ্রস্তুত হয়ে গেলাম। আমি খেয়াল করলাম, আমি স্বাভাবিক নেই। এটা কি হলো? এভাবে আননোটিসড কেউ আমার কাছে আসবে তাও শুধু ফেইসবুক বন্ধু এটা নিঃসন্দেহে স্বাভাবিক ঘটনা নয়।
আমি চার তলা থেকে নেমে গেলাম। সাদা রঙের টয়োটা সিডান প্রায় নতুন একটা গাড়ি। সম্ভবত প্রিমিও সিরিজের। কাবেরী গাড়ি থেকে নামলো। এই প্রথম আমাদের সামনা সামনি দেখা! একটা সুন্দর শপিং ব্যাগ হাতে। কাবেরী সুশ্রী, স্মার্ট, এলিগেন্ট। জিন্স প্যান্টের সঙ্গে ফুল স্লিভ সোয়েটার তার উপর কালো ব্লেজার। গায়ের রঙ ফর্সা। বেশ লম্বা। সুন্দর শারীরিক গঠন। গাড়ি থেকে নেমেই কাবেরী সিড়ি ভেঙে চার তলায় উঠতে লাগলো। চার তলায় উঠে এলো একা। সঙ্গে আমি। অন্যরা গাড়িতেই ছিলো। আমার রুমে ঢুকেই ব্যাগটা আমার হাতে দিয়ে বললো, আমার মা তোমার জন্য পুডিং বানিয়ে দিয়েছে। আর এই ক্যান্ডি/ আচার তোমার জন্য কক্সবাজার থেকে এনেছি।
বলেই চলে যেতে চাইলে, আমি বললাম, একটু বসো। আমি নিচে গিয়ে ওদের নিয়ে আসি। না, সে বসবে না। ওরাও আসবে না। আমি খুব বিচলিতবোধ করছিলাম। করার কথাও। চার তলায় আমি আর কাবেরী ছাড়া কেউ নেই। কাবেরীর পেছনে পেছনে প্রায় দৌঁড়ে নিচে নেমে দেখি গাড়ির সামনের বাঁ দিকের সীটে মামুন আশিককে কোলে নিয়ে, ডানে ড্রাইভার, পেছনে কাবেরী আর তার এক বোন। তবে কলি নয়। আমি মামুন ভাইকে সবাইকে নিয়ে বাসায় আসার আমন্ত্রণ জানালাম আন্তরিকভাবে। মামুন বললো, এখন আর ভাই না। বন্ধু। আজ জার্নিতে আছি অন্য একদিন আসবো।
আমি তাদেরকে দুই একটা বইও গিফট করতে পারলাম না। তাদের গাড়ি চলতে শুরু করলো। আমি হাত নেড়ে বিদায় জানালাম।
কাবেরীর মা’কে আমি খালাম্মা অথবা মা’ও ডাকতে পারি। আমার মা, বাবা কেউ বেঁচে নেই। মা'র বানানো পুডিং আমি একটু খেয়েছি। আজ আর ভাত খাবো না । সবটা পুডিং খাবো ভাবছি। পারবো কিনা জানি না। আল্লাহ মা বাবাকে সুস্থ রাখুন।
কাবেরী/মামুন যে কোনো প্রয়োজনে ডেকো। আমি থাকবো প্রয়োজনে তোমাদের পাশে। থ্যাংক ইউ ভেরি মাচ। আমার একাকি জীবনে একটা অভূতপূর্ব নতুন বছর উপহার দেয়ার জন্য।"
কাবেরী সৎ আর মহৎপ্রাণ এক মেয়ে। কাবেরী আমার খাটে ৩০ কি ৪০ সেকেন্ড বসেছিলো। আমি পাশে বসতেই কাবেরী আমার মাথায় হাত বুলিয়ে বলেছিলো,
তুমি নিজেকে একা মনে করবা না। আমি আছি না তোমার পাশে ?
আমার কাছে তখন মনে হয়েছিলো, আমার কোনো প্রিয় ও ঘনিষ্ঠ বন্ধু আমাকে এমন আদর করে বলছে। উল্লেখ্য, আমি পরিবারে সবার ছোট।
আমার ২০১৬ সালের ডিসেম্বরের ৩০ তারিখের ওই পোস্ট কমেন্ট অপশনে দিলাম।
এর তিন মাস পর ২০১৭ সালের ২৬ মার্চ দুপুরে মণি আমাকে ফোন করে জিজ্ঞেস করলো, এই পাগলু, তোমার কি খেতে ইচ্ছা করে? আমি অবাক হয়ে জানতে চাইলাম, কেনো?
মণি বললো, মামুন আজ নোয়াখালী যাবে তাই তোমার জন্য আমি রান্না করে দেবো। আমি বললাম, হাঁসের মাংস। মণি মাঝে মাঝে আমাকে পাগলু বলতো।
এভাবে বেশ সুখেই দিন কাটছিলো। ২০১৭ সালের ২৬ মার্চ রাত সাড়ে ১১টায় মামুন ফোন করে বললো, করিম ভাই, আমরা আপনার বাসার পাশেই মায়ামি রিসোর্ট হোটেলে। চলে আসুন। আপনার বন্ধু আপনার জন্য হাঁসের মাংস রান্না করে দিয়েছেন। আমার বন্ধু মানে মামুনের স্ত্রী। বললাম, আমি আসছি।
আমি মায়ামিতে গিয়ে দেখি আটজনের এক বিরাট দল। আমি আগেই কাবেরীকে জিজ্ঞেস করেছিলাম, মামুন কি করে? কাবেরী বলেছিলো বিজনেস। আমি আর জানতে চাইনি কি ব্যবসা। সবার সঙ্গে পরিচিত হলাম। সবাই মিলে পরোটা, সবজি, মুরগি তারপর চা খেলাম। বিল মামুনই দিলো। খাওয়া দাওয়া শেষে বাইরে এসে বেশ খানিকক্ষণ মজা করা হলো। ছবি তুললাম। ছবি তোলা নিয়ে আরো কাহিনী। মামুন ছাড়া বাকি সাত জনের সঙ্গেই আজ প্রথম পরিচয়। মনেই হয়নি তাদের সঙ্গে আজি আমার প্রথম পরিচয়। তারা এতোই ঘনিষ্ঠ আচরণ করেছে।
মামুনের বন্ধুরা কেউ দিনাজপুরের, কেউ খুলনার, কেউ কিশোরগঞ্জের, এখন আমি কুমিল্লার। মামুন কি এমন বিজনেস করে যে সব জেলায় তার বন্ধু প্রয়োজন? আমার সন্দেহ হলো। সে কোনো সেলিব্রিটিও নয়। ছবি তোলার এক ফাঁকে জুয়েল আমাকে আলাদাভাবে ফিসফিস করে বললো, মামুন কিন্তু এনএসআই এ চাকরি করে। NSI- National Security Intelligence.
আমাদের জাতীয় গোয়েন্দা সংস্থা। জুয়েলের কথা শুনে মামুনকে আরো ভালো করে দেখলাম। আমার কাছে মামুনের ব্যক্তিত্ব সরকারি চাকরিজীবি বলে মনে হয়নি।তাহলে আমাকে ভুল তথ্য দেয়ার কারণ? বুঝেছি পরে।মামুন যে ব্যবসা করে তার গ্রহণযোগ্যতার জন্য। সেদিন উপস্থিত মামুনের বন্ধুদের নাম ...
১। গোলাম কিবরিয়া বা মির্জা মামুন
২। এ.আর. ডন Ar Doneআমার লিস্টে আছেন ।
৩। শামিম চৌধুরী
৪। জুয়েল / জুয়েল রানা।
৫। রাজু আহমেদ
৬। জাহাঙ্গীর আলম
৭। সাজু
৮। তালেব
তাদের গাড়িতেই আমাকে বাসায় ড্রপ করে গেলো।
ওই রাতেই মামুন গাড়ি থেকে ফোন করে বললো, করিম ভাই, আমাদের কিছু রসমালাই লাগবে। কাল যেতে নিয়ে যাবো ঢাকায়। আমি জানতে চাইলাম, কতো কেজি লাগবে? তিনি বললেন, ৫ কেজি। পরদিন আমি আর্লি ঘুম থেকে জেগেই গেলাম শহরের মনোহরপুরে অবস্থিত মাতৃ ভান্ডারে। ১০টা, ১১টার পর ওই দোকানে আর রসমালাই পাওয়া যায় না। তাদের কোনো শাখা নেই। আমি ৫ প্যাকেটে ৫ কেজি রসমালাই কিনে এলাম জিলা স্কুল রোডে। এখানে সব লাইব্রেরি। আমার স্কুল, কলেজ জীবনের বেশিরভাগ সময় কেটেছিলো এই জিলা স্কুল রোডে। মণির জন্য কয়েকটা বিদেশি লেখকের অনুবাদ করা বই কিনলাম। রসমালাইগুলো এনে ফ্রিজে রেখে দিলাম। যাওয়ার পথে দিয়ে দেবো বলে। মামুন ঢাকা ফেরার সময় কল করলো। আমার বাসা বিশ্বরোডের পাশেই। মণির জন্য কেনা বই আর রসমালাইগুলো দিলাম। তারা চলে গেলো। কিছুক্ষণ পর মামুন ফোন করে বললো, করিম ভাই, তাড়াহুড়ার মাঝে আপনাকে রসমালাই এর টাকা দিতে ভুলে গিয়েছিলাম। আমি ফান করে বললাম, আগে খেয়ে দেখুন ভালো কিনা। বিফলে মাগনা। ওই দিন মানে ২০১৭ সালের ২৬ মার্চ এই নিয়ে আমি পোস্ট লিখেছিলাম।
দিন যায়। রিলেশন বাড়তে থাকে। মামুনও আমাকে ফোন করে খোঁজ খবর নেয়। আমি দিন দিন কৃতজ্ঞ হয়ে পড়ি তাদের কাছে।
এইতো গত-কোরবানী ঈদের (২০১৭ সালে)পরদিন সকাল সাতটায় মামুন আমাকে ফোন করেছিলো।
করিম ভাই, আমরা আপনার বাসার নিচে। আসেন। আমি গেলাম। আমাকে পুরো ঈদের খাবার দিলো। মণি আশিককে কোলে নিয়ে গাড়ি থেকে নেমে আমাকে সালাম দিলো। যা আমি ফেবুতেও লিখেছি। আগের বার আমি মণির জন্য আমার বেশ কিছু লেখা যা পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছিলো সেই ম্যাগাজিনগুলো দিয়েছিলাম মামুনকে। সেগুলো পড়ার পর ফেরত দিলো। তারা চলে গেলো। আমি কিছুটা অসন্তুষ্ট হলাম এবার। ঘন্টা খানেক পর আমি মামুনকে একটা এসএমএস করি এমন...
"কাউকে কিছু দিতে হলে তার বাসায় এসে দিতে হয়। কাউকে কিছু দিলেই মহৎ হওয়া যায় না। মহৎ হতে হলে মহত্ববোধ থাকতে হয়। আপনি আমাকে ফোন করে নিচে ডেকে নিয়ে খাবার বা গিফট দেন। এটা কি খুব শোভন? আমি কি রাস্তার কেউ? আমি কি না খেয়ে থাকি?"
আমার এসএমএস পেয়ে মামুন ফোন করে বললো, "ভাই, আজি ঢাকা ফিরবো। যাওয়ার পথে আপনার বাসায় চা খেয়ে যাবো। প্লিজ কিছু মনে করবেন না।”
বেশ। আমি সারাদিন তাদের জন্য বসেছিলাম বাসায়। তারা এলো না! তাদের জেলা থেকে ঢাকা যেতে হলে কুমিল্লার উপর দিয়ে যেতে হয়। আর আমার বাসাটা ঠিক বিশ্ব রোডের পাশেই। আমি খুব মাইন্ড করলাম। চা খেয়ে যাবে বলে আমাকে বাসায় বসিয়ে রেখে তাদের চলে যাওয়া কতোটা শোভন হয়েছে? মানুষের সমস্যা থাকতেই পারে। এপয়েন্টমেন্ট ক্যানসেল করা যায়। আমাকে একটা ফোন করে বলে দেয়া কি তাদের উচিৎ ছিলো না? এটাতো একটা মিনিমাম কার্টেসি। মামুন এই কার্টেসি জানে না? সেই থেকেই সম্পর্কের অবনতি। আমি ভাবলাম, আমি একা থাকি বলে হয়তো করুণা করে ঈদের খাবার দিয়ে গেছে। এখানে কোনো আন্তরিকতা নেই। আমি কাঁচকে ভেবেছি হীরা।
তবু চলছিলো ভালোই। ফেবুতে আমার পোষ্টে তাদের, বিশেষ করে কাবেরীর কমেন্ট নিয়মিত থাকতো। আমিও কাবেরীর পোষ্টে কমেন্ট করতাম। মামুনের ফেইসবুক একাউন্ট থাকলেও সে কিছু লিখে না। তাদের সঙ্গে প্রায় পারিবারিক সম্পর্ক হয়ে গেলো। আমি যদিও আমার বাসায় তাদের ইনভাইট করেছিলাম কিন্তু তারা কখনো আমাকে তাদের বাসায় যেতে বলেনি।
ওই বছর মানে ২০১৭ সালের সেপ্টেম্বর মাসের শেষের দিকে আমার এক পোষ্টে কাবেরী কমেন্ট করেছিলো। আমি তার উত্তর দিয়েছিলাম। সকালে দেখি তার কমেন্টটা নেই। আমি খুবই মনঃক্ষুন্ন হলাম। রাতে কাবেরী ফোন করলে জানতে চাইলাম, কমেন্টটা ডিলিট কেনো? কাবেরী জানালো, তার পাসওয়ার্ড মামুন জানে। কাজটা উনি করেছেন! আমি ব্যাপারটা সিরিয়াসলি নিলাম। কাবেরীর সঙ্গে তো আমার প্রেম নেই যে এমন কাজ করে ভুল বুঝাবুঝির সৃষ্টি করিয়ে প্রেম ভেঙে দেবে। আর মামুন পাসওয়ার্ড জানবেই বা কেনো? তাহলে কি তিনি তার স্ত্রীকে বিশ্বাস করেন না? আমার আরো নজরে এলো, বেশির ভাগ সময় মামুন কাবেরীর ফেইসবুকে লগ ইন থাকে! এটা আমি জেনেছি কাবেরীকে জিজ্ঞেস করে। সময় অসময় নেই যে কোনো সময় দেখতাম কাবেরী ফেবুতে লগ ইন। তখন একদিন তাকে জিজ্ঞেস করি, তুমি কি ফেবু লগ আউট করো না মণি? তখন কাবেরী বলেছিলো, মামুন প্রায়ই আমার একাউন্টে লগ অন থাকে। আমার আরো সন্দেহ হলো যে, কাবেরীর পোষ্টে যারা কমেন্ট করে আর কাবেরী যে উত্তর দেয় সেটা কাবেরী দেয় না তার হাজব্যান্ড দেয় উত্তরগুলো? এমনকি পোষ্ট কে লিখে তাও এক প্রশ্ন। আরেকটু চালাক হতে পারতো না মামুন? ফেইসবুকের এক্টিভ স্ট্যাটাস অফ করে দিলেই তো হতো। লগ ইন থাকলেও কেউ এক্টিভ দেখতে পেতো না।
আমার কাছে বিষয়টা খুব বড় ধরনের প্রতারণা বলে বিবেচিত হলো। এটা তার স্ত্রীকেও অপমান করার শামিল। কমেন্ট করে কমেন্ট ডিলিট করা যায়। কিন্তু পোষ্টদাতা কমেন্টের উত্তর দিলে সেই কমেন্ট ডিলিট করা গুরুতর অন্যায়। পোষ্টদাতার কমেন্ট তখন অপ্রাসঙ্গিক হয়ে যায়। আমার কাছে যা খুবই অশোভন মনে হয়। তাছাড়া আমি তাদের পুরো পরিবারকে আন্তরিকভাবে ভালোবেসেছিলাম। এখানে কোনো অসততা, অনৈতিকতা নেই। এরা আমার অনেক ছোট। আমি তারা স্বামী-স্ত্রী দুই জনকেই বন্ধুর চোখে দেখি। আমি বেশ দুঃখ পেয়েছি মামুনের এমন আচরণে। তাই মামুনকে আনফ্রেন্ড করে দিই সেদিন। ওমা! এক ঘন্টার মধ্যে দেখি কাবেরী আমাকে ব্লক করেছে। রাতে কাবেরী ফোন করলে আমাকে ব্লক করার কারন জানতে চাইলে কাবেরী আমাকে জানিয়েছিলো, এটা মামুন করেছে। প্লিজ আমাকে তুমি ভুল বুঝো না।
আমি মামুনকে কয়েকটা এসএমএস করেছিলাম সেদিন যার ভাষা ছিলো অনেকটা এমন ...
"আমি কি তোমার বউয়ের সঙ্গে প্রেম করি? তুমি কমেন্ট ডিলিট করেছো কেনো? ফাইজলামি করো, না? আমার পোস্টে তোমার বউ কমেন্ট করে এটা তোমার ভালো না লাগলে তোমার বউকে বলতে পারো। সমস্যা শেষ। কমেন্ট ডিলিট করে এতো নাটক করার কি দরকার?"
সন্ধ্যার পর মামুন আমাকে ফোন করে। আমি ফোন ধরিনি। এরপর অন্য নাম্বার থেকে ফোন করে। তাও আমি ধরিনি। এরপর একটা রবি নাম্বার থেকে এসএমএস আসে আমার কাছে। এসএমএসে লেখা...
"আমি কাবেরী। এটা আমার বাবার নাম্বার। ফোন ধরেন।''
আমি উত্তর দিয়েছিলাম, এখন আমি কথা বলবো না। মুড ভালো নেই।
এরপর মামুন অভদ্র আর উশৃঙ্খল ভাষায় আমাকে বেশ কয়েকটা এসএমএস করে যেখানে মামুন লিখে...
"তুই কুমিল্লার ইতর। আমি মানুষ চিনতে ভুল করেছিলাম। তুই নিমক হারাম।"
সেই থেকে মামুনের সঙ্গে আমার কোনো সম্পর্ক নেই। কিন্তু কাবেরী আগের মতোই প্রতিদিন আমাকে ফোন করে। একদিন আমি রাগ করে ফোন না ধরায় মণি ৬৫ বার ফোন করেছিলো আমাকে। আবারো বলছি ৬৫ বার।
৬৫ বার ফোন না ধরায় মণি আমাকে একটা এসএমএস করে এমন...
"আরে ছাগল, তোর দরকার হলে আমার শরীরের দুই একটা হাড্ডি ভাঙ। শরীরে তো হাড্ডি অনেক। মন তো একটাই। বেছে বেছে কেন ওখানেই আঘাত করিস?"
পরে ফোনে আমি তাকে বলেছিলাম, দেখো মণি, বিবাহিতা কোনো মেয়ের সঙ্গে আমি ঘনিষ্ঠ বন্ধুত্ব করবো না। আমার আগের অভিজ্ঞতা আছে। এটা আমাদের সমাজ যেমন ভালো চোখে দেখে না তেমনি ওই ভদ্রমহিলার স্বামীও পছন্দ করে না। এক সময় মেয়ের পক্ষের কেউ(স্বামী) সন্দেহ পোষণ করলে ওই ভদ্রমহিলা তার স্বামী, সংসার আর সন্তানের কথা ভেবে ওই ভালোলাগা মানুষটিকে ছেড়ে যায়। ওই মহিলার তেমন কোনো সমস্যা হয় না। কারন তিনি স্বামী, সংসার, সন্তান নিয়েই ব্যস্ত থাকেন। কিন্তু ওই ভদ্রলোকের খুব কষ্ট হয়। তার কিছুই করার থাকে না। কাউকে বলতেও পারে না। আর এমন রিলেশন বেশিদিন লুকিয়েও রাখা যায় না।
তুমি কেনো আমাকে ভালোবাসো? আমি তো তোমার অনেক সিনিয়র। দুষ্টুমি করে আরো বলতাম, তুমিতো আমার সঙ্গে পরকীয়া প্রেমও করো না। তবু কেনো আমার এতো খোঁজ নাও তুমি? ঘন্টার পর ঘন্টা ফোনে কথা বলো? এক সময় তুমি চলে গেলে আমার খুব কষ্ট হবে। একথা কাউকে বলতে পারবো না। নীরব ব্যধির মতোই আমাকে কুঁড়ে কুঁড়ে খাবে। এই বয়সে এই ধকল আমি নিতে পারবো না। তাছাড়া আমি একা থাকি বলে তোমার এই সরব উপস্থিতি এক সময় নীরব হয়ে গেলে আমি খুব শুন্যতায় ভুগবো। আমিও তোমাকে ভালোবাসি বোনের মতো। একজন জুনিয়র বন্ধুর মতোই। এখানে যৌনতাও নেই। তুমি আমার সব উপদেশ উপেক্ষা করে আমার সার্বক্ষনিক খোঁজ নিয়েছো।
একদিন সে কি ঝগড়া! আমাকে খোঁচা একটা দিলেই দুনিয়ার কথা বলি। আমার কথা বলার সাবজেক্টের অভাব নেই। তুমি কেবল শুনো। আমাকে দিয়ে দুনিয়ার কথা বলাও। মণি হাসতে হাসতে বলেছিলো, আমি ফোন করি শুধু তোমার কথা শুনতে। এই পাগলু, তোমার মতো এতো সুন্দর করে ঘুছিয়ে কেউ কথা বলে না।
দেখো, আমার স্বামী, সন্তান, সংসার সব আছে। আমি একজন সুখী মহিলা। কোনো দিকেই আমার অপূর্ণতা নেই। এমনও নয় যে, স্বামীর সঙ্গে আমার বনিবনা হয় না বলে তোমাকে নক করি। মামুনের সঙ্গে আমার খুব ভালো বুঝাপড়া। আমাদের মধ্যে কোনো মতবিরোধ নেই। সুখী দম্পতি বলতে যা বুঝায় আমরা তার চেয়েও সুখী। কিন্তু কেনো জানি, তোমার জন্য আমার খুব মায়া লাগে। অনেকদিন খাঁ খাঁ দুপুরে যেমন আব্বা আম্মার জন্য পরাণ পুড়ে, তোমার জন্যও আমার তেমন পরাণ পুড়ে।
আজ সেই মণির জন্য আমার প্রতিদিন পরাণ পুড়ে!
মণির কথা মনে হলেই চোখ সজল হয়ে উঠে। এই গল্প লিখছি অশ্রু ভেজা চোখে। মাঝে মাঝে বিরতি দিই। ভেজা চোখে কম্পিউটারের মনিটর ঝাপসা দেখি। চোখ মুছে আবার লিখি। কতোদিন একা একা চোখের জল ফেলেছি!!!!
পৌষের কাছাকাছি রোদ মাখা সেই দিন
ফিরে আর আসবে কি কখনো
খুশি আর লজ্জার মাঝামাঝি সেই হাসি
তুমি আর হাসবে কি কখনো।
মান্নাদের এই গানটিও আমি মণিকে গেয়ে শুনিয়েছিলাম।
তুমি আমার উপর অনেক বড় প্রভাব বিস্তার করেছো মণি। তুমি বলতে, ছেড়ে যাবো না। যখন ফোনে ঝগড়া হতো তুমি বলতে, ঝগড়া করবা কিন্তু ছেড়ে যাবা না। আমরা বাকি জীবন ঝগড়া করতে করতেই কাটিয়ে দেবো। তুমি বলতে, তোমাকে (আমাকে) কখনো ভাইয়ের মতো, কখনো একজন সৎ আর বিশ্বস্ত বন্ধুর মতো ভালোবাসি। আমি তোমাকে কখনোই ছেড়ে যাবো না। তুমি ভালো থাকলে আমার ভালো লাগে। একদিন তোমাকে নিয়ে আব্বা আম্মার সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেবো। কুমিল্লা থেকে তো নোয়াখালী কাছে। তোমার যখন ভালো লাগবে না তখন আমাদের বাসায় গিয়ে কয়েকদিন থেকে এসো। আমি দুষ্টুমি করে বলতাম, তোমার দুই ছেলেকে পড়ানোর দায়িত্ব দাও আমাকে। দেখো কেমন পণ্ডিত বানিয়ে দিই। মণি বলতো, আমরা তো এখনো জয়েন্ট ফ্যামিলি। আমার সংসার নিয়ে আলাদা থাকলে তোমাকে আমার কাছে নিয়ে আসতাম। আমরা এসব কথাই বলতাম।
অনেকেই ভাবতে পারেন এতো কথা আমরা কি বলতাম? আমরা খুব ফানি কথা বলতাম। গত বছর আমার দাঁতে খুব পেইন ছিলো। দাঁত ফেলতে হবে। এই কথা শোনে মণি বলেছিলো, এই, তোমাকে আব্বুর কাছে পাঠিয়ে দেই? আমি অবাক হয়ে বললাম, কেনো? মণি বলেছিলো, তার বাবা মি. আজিজুর রহমান খান নাকি একদিন এক লোকের সঙ্গে রেগে গিয়ে চাটখিল থানার সামনে ওই লোককে এমন জোরে থাপ্পড় মেরেছিলেন যে, ওই লোকের দাঁত পরে গিয়েছিলো।
এসবই আমাদের কথা ছিলো। আমার এমন কিছু নেই যা কাবেরী জানে না।
মাঝে মাঝে মণি বলতো, একটা গান শোনাও না পাগলু। আমি গান গাইতে জানি। মণিকে অনেক বাংলা আর হিন্দি গান গেয়ে শুনিয়েছিলাম। মণি আমার অনেক জুনিয়র তাই আগের গানগুলো সে শুনেনি। কিশোর কুমার, মান্না দে, হেমন্ত, কুমার শানু, অভিজিৎ, তালাত মাহমুদ, আশা ভোঁসলে, শিবাজি, বাপ্পি লাহিরীর গান মণি বলতে গেলে শুনেই নি। আমি সে সব গান গেয়ে শুনাতাম।
গত ডিসেম্বরের ১০ তারিখ ২০১৭ হঠাৎ আমি মণির একটা এসএমএস পেয়ে যুগপৎ বিস্মিত ও হতাশ হই। আগের দিন ০৯ তারিখ রাতেও মণির সঙ্গে স্বাভাবিক কথা হয়েছিলো। পরদিন এই এসএমএস!
মণি এসএমএসে লিখেছিলো...
"আমাকে ক্ষমা করো। আমি ভীষণ লজ্জিত। দু:খিত। আমি প্রতিজ্ঞাবদ্ধ। তুমি কি চাও তোমাকে সময় দেয়ার জন্য আমি হার্ট হই? আর আমাদের নিয়ে কিছু ফেবুতে লিখো না। শুধু দোয়া করো যেন সব কিছু আগের মতো স্বাভাবিক হয়ে যায় আর আমিও। দোয়া করো আল্লাহ আমাকে যা দিয়েছেন তা যেন তিনি নিয়ে না যান। আর কাঁদতে পারছি না। তোমার মণি একা। ফিরবো। আমাকে একটু সময় দাও।"
আমার তাৎক্ষণিক বুঝতে কষ্ট হলেও পরে বুঝেছি, কাবেরী যে আমার সঙ্গে ফোনে কথা বলে তা মামুন জানতো না। বা জানলেও আগে উপেক্ষা করেছিলো। হয়তো মামুনের অন্য কোনো স্বার্থ বা উদ্দেশ্য ছিলো আমাকে নিয়ে। মামুন নিচে গাড়িতে বসে কাবেরীকে একা আমার বাসায় পাঠায় আর ফোনে কথা বলাতো সে তুলনায় নস্যি। এখন মামুন চায় না আমার সঙ্গে কাবেরীর যোগাযোগ থাক। তাই সে কাবেরীকে বড় ধরনের চাপ প্রয়োগ করেছে ও হুমকি দিয়েছে যেনো আমার সঙ্গে যোগাযোগ না করে।
হয় কাবেরীকে কোরআন ছুঁইয়ে শপথ করিয়েছে, নয় তার দুই ছেলের মাথায় হাত রেখে প্রতিজ্ঞা করিয়েছে। অথবা ঢাকার ৫ তলা বাড়িটি যে কাবেরীর নামে সেটি তার নামে নিয়ে যাবে বলে হুমকি দিয়েছে। অথবা কাবেরীকে ডিভোর্সের হুমকিও দিয়ে থাকতে পারে। এই ৪টি অপশনই আমি খোঁজে পেয়েছি। নইলে মণি আমাকে এমন এসএমএস করতে পারে না। কিছুতেই না। কোনোদিন না।
আমি মামুনের পরিবারের ফুল রেজ্যুমে নিয়েছি। মামুনের বাবা নোয়াখালীর হলেও তার মা বরিশালের। মামুনের ছোট ভাইয়ের নাম মিল্টন। মামুনের আগে মিল্টন বিয়ে করে। মিল্টনের স্ত্রীর নাম লাবনী। ছোট বোনের নাম হ্যাপি।
আমার তখন মনে পরে গেলো, ২০১৭ সালের এপ্রিল, মে এবং জুলাই মাসে মামুন তার ব্যবসায়িক প্রয়োজনে আমাকে কিছু লোক যোগাড় করে দিতে বলেছিলো। আমি ওই ব্যবসায় অনৈতিকতা আর দূর্নীতি দেখে মামুনের প্রস্তাবে সাড়া দিইনি। তাই মামুন এখন আর চায় না আমার সঙ্গে তার স্ত্রীর যোগাযোগ থাক। মামুনের ব্যবসা ছিলো অত্যন্ত আপত্তিজনক। একদিন সকাল ১০টায় মামুন ফোন করে আমাকে বলেছিলো,
"করিম ভাই, পুলিশে লোক নিয়োগ করা হবে কনস্টেবল পদে। ১০ লাখ করে লাগবে। এখন ৭ লাখ টাকা দিতে হবে। নিয়োগের পর বাকি তিন লাখ দিবে। আপনি কিছু লোক জোগাড় করে দেন।"
আমি আকাশ থেকে পড়েছিলাম। বিশ্বাস করতে পারছিলাম না। যোগ্যতা নিয়ে কতো ছেলে মেয়ে ঘুরে, চাকরি পায় না। আর ১০ লাখ টাকা দিয়ে অনেকে পুলিশের চাকরি কিনে নেয়! কতো বড় অন্যায়, দুর্নীতি। আমি আচ্ছা বলে ফোন রেখে মামুনের প্রোফাইল চেক করে দেখি প্রচুর পুলিশ ও আর্মি অফিসার মামুনের লিস্টে।
মাস দুয়েক পর মামুন আবার ফোন করে বলে, "করিম ভাই, পুলিশে তো দিলেন না। এবার বিজিবিতে সৈনিক পদে লোক নিয়োগ হবে। ৭ লাখ টাকা করে লাগবে। এখন ৫ লাখ দিবে। নিয়োগের পর ২ লাখ দিবে। সিও সাহেবের সাথে আমার কথা হয়েছে।"
এবার আমার মাথা খারাপ হবার যোগাড়। বিজিবি, আর্মিতেও ঘুষ দিয়ে চাকরি পাওয়া যায়! আমি জীবনে কোনো দিন কোনো অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে জড়িত ছিলাম না। আর আজ করবো এসব?
আমি কাবেরীকে ফোনে বলেছিলাম...
তোমরা স্বামী-স্ত্রী-আর দুই সন্তানকে আমি অনেক ভালোবাসি। ধরো, এখন যদি এমন কোনো মিরাকল হয় যে, আমার সামনে অপশন দেয়া হলো- হয় আমি বাঁচবো নয় তোমার স্বামী বাঁচবে। আমি কোনটা বেছে নেবো? আমি চাইবো, আমি মরে গিয়ে তোমার স্বামী বেঁচে থাক। তুমি অনেক ছোট। এই বয়সে তোমাকে বৈধব্য মানায় না।
তুমি যদি এখন বলো, তোমার প্রিয় কোনো আত্মীয়ের জন্য একটা কিডনি লাগবে জরুরী। যদি আমার ব্লাড গ্রুপ ম্যাচ করে তবে আমি হাসি মুখে এটা তোমাকে/তোমাদেকে দেবো। তোমার/তোমাদের প্রিয় কারোর জন্য যদি চোখের কর্নিয়া লাগে আমি আমার একটা চোখ দেবো হাসি মুখে। বিলিভ মি। পৃথিবীতে অনেক কিছু আছে যা প্রমাণ করা যায় না। আমিও হয়তো প্রমাণ করতে পারবো না তোমাদের কতোটা ভালোবাসি।
কিন্তু তোমার বর যে কাজগুলোর কথা আমাকে বলে এই কাজগুলো আমি করতে পারবো না। আমার পক্ষে কারো কাছে গিয়ে বলা সম্ভব নয় যে, কাউকে চাকরি দেবো। এতো টাকা লাগবে ঘুষ। আমি মরে গেলেও তা পারবো না। সবাই সব কাজ পারে না। কাবেরী বলেছিলো, তুমি এসব পারবা না। বাদ দাও। তুমি সৎভাবে জীবন যাপন করো।আমি প্রতিদিন তোমার খোঁজ নিবো।
আমি মণিকে বলেছিলাম, তোমাদের সমস্যা হলে আমাকে বলো, আমি আমেরিকায় তিন মাস স্কুল করে ড্রাইভিং পরীক্ষা দিয়ে পাশ করে লাইসেন্স নিয়েছিলাম। আমার নিজেরও হুন্ডা সিভিক গাড়ি ছিলো। এখনো আমার ভ্যালিড ড্রাইভিং লাইসেন্স আছে। আমাকে বেতন দিতে হবে না। প্রয়োজনে তোমাদের গাড়ি চালাবো। তবু আমি অনৈতিক বা অসৎ কাজ করতে পারবো না।
হুন্ডা, নিসান, মাজদা, টয়োটার সব সিরিজের গাড়ি আমি চালাতে জানি। ক্যাডিলাক, লেক্সাস, বিএমডব্লিউ, মার্সিডিজ, ভলভো কারও আমি ভালো চালাতাম বলে সুনাম ছিলো। আমেরিকায় যে সব বাংলাদেশি একটু আয়েশি জীবন যাপন করতে চায় তাদের সকলেরই নিজের গাড়ি আছে।
২০১৭ সালের ডিসেম্বরের ১০ তারিখে ওই এসএমএসের পর তুমি ফোনটা বন্ধ করে দিয়েছো। যেটা দিয়ে আমার সঙ্গে কথা বলতে। তবু আশায় ছিলাম তুমি ফিরবে। কিন্তু জানুয়ারির ১৫ তারিখ থেকে দেখলাম তুমি ফেবুতে নিয়মিতই আছো। রোমান্টিক পোস্ট দাও। নিজের অনেক সুখী ছবি দাও। অনেকের পোস্টে কমেন্ট করো। অনেকের কমেন্টের রোমান্টিক উত্তর দাও। মান্নাদের গানের মতোই...
আমি দুঃখ পেলেও খুশি হলাম জেনে।
আমি ভালো থাকলে যেমন তোমার ভালো লাগে তেমনি তুমি ভালো থাকলেও আমার অনেক ভালোলাগে মণি। আমার জন্য তুমি কষ্ট পাও তা আমি কিছুতেই চাই না।
তুমি কথা দিয়েছিলে, একবার নয়, অসংখ্যবার যে আমাকে ছেড়ে তুমি যাবে না। কিন্তু তুমি গিয়েছো। যাও। তোমার যেভাবে থাকতে ভালো লাগে বা তুমি যেভাবে সুখী থাকো সেভাবেই থাকবে। আমাদের বন্ধুত্বে কোনো শর্ত ছিলো না। একটা শর্ত ছিলো, কেউ কাউকে ছেড়ে যাবো না। তুমি এটা ভঙ্গ করেছো। তোমার সুন্দর জীবনের জন্য আমি আনন্দের সঙ্গেই এটা মেনে নিলাম। আমার কোনো অভিযোগ নেই।
এখন তুমি হয়ে গেছো আমার বাস্তব গল্পের জীবন্ত নায়িকা। আমি তোমাকে বলেছিলাম, তোমাকে নিয়ে যেনো অন্য মেয়েদের মতো অন্যের কাছে গল্প করতে না হয়। তাছাড়া আমি লেখালেখি করি। গল্প যেনো লিখতে না হয়। তুমি বলেছিলে, বলতে হবে না। গল্পও লিখতে হবে না। আমি অন্য মেয়েদের মতো না।
অথচ আজ ফেবুতেই তোমাকে নিয়ে গল্প লিখতে হলো। এই গল্প তোমাকেই উৎসর্গ করলাম। তোমাকে বলেছিলাম- দেখো, যায়যায়দিন আর মৌচাকে ঢিল ম্যাগাজিনে লিখে আমার বেশ কিছু ইয়াং বন্ধু (মেয়ে) আছে। ওই পত্রিকা দু'টো তরুণ আর আধুনিক ছেলেমেয়েরা খুব পছন্দ করতো। আর লেখার নিচে লেখকের ফোন নাম্বার উল্লেখ করে দিতো। আমি জানি, তরুণ ছেলেমেয়েরা আমার লেখা বেশি পছন্দ করে। তারা অনেকে আমাকে ফোনও করতো। এতো বেশি ফোনের জ্বালায় আমি ওই সিমটা এখন আর চালাই না। ওই বন্ধুদের কেউ কেউ ফেবুতেও আমার লিস্টে আছে। বলেছিলাম তোমাকে অনেক কথা। তুমিও বলেছিলে। তুমি অন্য জেলার হলেও মনে হতো সারাক্ষণ তুমি আমার পাশেই আছো। তোমার অনেক স্মৃতি আমার কাছে আছে। কতো স্মৃতি ! তোমার খাবার দেয়ার প্লাস্টিকের বক্সগুলো আমি যত্নে রেখে দিয়েছি। সব মনে পড়ে। দেড় বছরের সম্পর্ক তো কম নয়। আশা ভোঁসলের গানের মতোই.....
মনটা যদি না থাকতো আমার
কিছুই মনে পরতো না।
শ্লেটে চকের দাগ ভেজা কাপড়ে মুছে ফেলা যায়। কাগজে পেন্সিলের লেখা রাবার ঘষে উঠিয়ে ফেলা যায়। কিন্তু মানুষের জীবনে এমন কিছু ঘটনা বা স্মৃতি থাকে যা কখনো কিছুতেই মুছে ফেলা যায় না। উঠিয়ে ফেলা যায় না। সময়ের সঙ্গে অনেক কিছুই নিশ্চিহ্ন হয়ে যায় বটে কিন্তু থেকে যায় স্মৃতি। সময়কে পরাজিত করে বার বার সে জেগে উঠে। হতে পারে সে স্মৃতি সুখের, দুঃখের, আনন্দের, বেদনার, ভালোবাসার। মনে হতেই চোখের সামনে ভেসে উঠে অবিকল। স্মৃতির মুখচ্ছবিতে কখনো কালের মলিনতা লাগে না। তুমিও আমার কাছে কখনো মলিন হবে না।
তুমি ঢাকা থেকে যতোবার নোয়াখালী যাবে বা নোয়াখালী থেকে ঢাকা যাবে ততো বারই আমার কাছ থেকে ১০০ গজ দূর দিয়ে তোমার গাড়িটা যাবে। এমন কি আমার মৃত্যুর পরও আমার কবরের ১০০ গজ দূর দিয়েই তুমি যাওয়া আসা করবে। ঢাকা থেকে নোয়াখালী যাওয়ার এটাই একমাত্র রাস্তা।
আমাদের বাড়িটা ঢাকা- চট্রগ্রাম হাইওয়ের পাশেই। আমাদের পারিবারিক কবরস্থানটা পুকুরের দক্ষিণ-পশ্চিম কোণায়। কুমিল্লা ব্র্যাক রিজিওনাল অফিসের ঠিক উল্টো দিকের বাড়িটাই আমাদের। ঘোড়ামারা চৌধুরী বাড়ি। আমার মৃত্যুর পর তুমি গাড়িটা থামিয়ে আমার কবরে কিছু ফুল দিয়ে যেও। এতে তোমার পাঁচ মিনিট সময় নষ্ট হবে। তোমার কাছে আর কিছুই চাই না।
আমি ফটোশপ খুব একটা বুঝিনা। তুমি আমার ছবি দিয়ে মোবাইল ফোনের ক্যামেরায় অনেক দুষ্টুমি করতে। আবার সে সব ছবি আমাকে পাঠাতে। সে রকম একটা ছবিও এই পোস্টে জুরে দিলাম। আরো অনেক কথা লেখার ছিলো। কিন্তু প্রায় ৪০০০ শব্দ হয়ে গেছে তোমাকে নিয়ে এই পর্যন্ত লিখে। তাই আর বাড়াবো না। ফেসবুকের মাধ্যমে এতো বড় লেখা স্মৃতি হয়েই থাক।
আজ আমরা বিচ্ছিন্ন দ্বীপের অধিবাসী। কে কেমন আছি কেউ জানি না। তবে এই পৃথিবীর যেখানেই থাকো, ভালো থেকো। এই কামনায় বিদায় বন্ধু।
তোমাকে ফোনে গেয়ে শুনানো একটা হিন্দি গান শুনে একদিন তুমি খুব প্রশংসা করেছিলে। জানতে চেয়েছিলে এটা কোন ছবির গান। আমি দুষ্টুমি করে বলেছিলাম, এটা ১৯৯১ সালের সুপারহিট প্রেমের ছবি "সাজন"এর গান। সাজন ছবির পরিচালক লরেন্স ডি সুজা। গল্প রীমা রাকেশনাথ। মাধুরী দীক্ষিতের সেকরেটারি রাকেশ নাথের স্ত্রী রীমা রাকেশনাথ। এই ছবির সব ক'টি গানই চমৎকার। খুবই জনপ্রিয়। এই ছবির মিউজিক ডিরেক্টর নাদিম-শ্রাবন। ছবিতে মাধুরী আর সালমান খান আলাদাভাবে গানটি গেয়েছিলেন। পুরুষ কন্ঠে গানটির প্লে ব্যাক সিঙ্গার এসপি বালা সুব্রানিয়াম। তুমি তখন পিচ্চি মেয়ে।
শেষ বার ফেবুতে লিখে ওই গানটা আজ আবার শুনালাম তোমাকে ......
'বহুত পেয়ার কারতে হ্যায় তুমকো সনম
কসম চাহে লে লাও
খোদা কি কসম।'
Karim Chowdhury
১৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৩
কুমিল্লা।
(লেখাটি ২০১৮ সালে লিখেছিলাম। আমার হ্যাকড হওয়া একাউন্টে। আমার একটা ব্লগ সাইট আছে। যা পাবলিক করি না। কিছু গুরুত্বপূর্ণ লেখা আমি ব্লগ সাইটে পোস্ট দিয়ে রাখি। ফেইসবুক একাউন্ট নষ্ট হয়ে গেলেও ব্লগ সাইটে লেখাগুলো থেকে যায়। ফেইসবুকের সঙ্গে ব্লগ সাইটের কোনো সম্পর্ক নেই। সেখান থেকে এনেই দিলাম। সামান্য কয়েক লাইন এডিট করেছি। কোনো ছবি, কমেন্ট কিছুই সংযোজন করলাম না। লেখাটি সেনসিটিভ তাই।)
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন