সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

লেয়লা

 লেয়লা

----------

ফ্র্যাংকলি বললে ঘটনাটি এমন। তখন ভিয়েনায় থাকতাম। কাজ করতাম ম্যাকডোনাল্ডসে। ভিয়েনা থেকে ১৫ কিলোমিটার দূরে। জায়গাটির নাম শপিং সিটি স্যুদ (Shopping City Sued)। এখানে বেশ বড় একটা শপিং সেন্টার আছে। অনেকটা আমেরিকার ওয়ালমার্ট(Walmart) এর মতো। ম্যাকডোনাল্ডসটিও বেশ বড়। ম্যাক ড্রাইভতো আছেই। বাইরেও আলাদা ম্যাক গার্ডেন আছে। নিজস্ব পার্কিং ব্যবস্থা। আমরা ৬৬ জন এমপ্লয়ি ছিলাম বিভিন্ন দেশের। 


একজন ম্যানেজার, চারজন অ্যাসিসটেন্ট ম্যানেজার। লেইট নাইট ডিউটিতে ম্যাকডোনাল্ডসের মাইক্রোতে আমাদের যার যার বাসায় পৌঁছে দেয়া হতো। এক গাড়িতে ইউরোপের একটি দেশে রাত ১২টা/১টার সময় বিভিন্ন দেশের ১০/১২ জন যুবক যুবতী কি হৈ হুল্লোড়টাই না করতাম আমরা!


ইরানের মেয়ে লেয়লাকে আমার খুব ভালো লাগতো। খুব সুন্দরী ছিলো লেয়লা। ইরানীরা লায়লা উচ্চারণ করে না। মেয়েটির পুরো নাম ছিলো লেয়লা খাকপুর

 (Leila Khakpoor)। শিয়া মুসলিম। শিয়াদের আমার ভালো লাগে। সুন্নীদের মতো এতো বিভক্তি শিয়াদের মধ্যে নেই। ১৯৮০-১৯৮৮ এই নয় বছর ইরাক-ইরান যুদ্ধ ছিলো। ওই সময় অনেক ইরানী ইউরোপে গিয়ে রাজনৈতিক আশ্রয় নিয়েছিলো। লেয়লাও তাদের একজন। 


তার সঙ্গে কাজ করতে গেলেই আমার দুর্বলতা প্রকাশ পেতো। রাতে ফেরার সময় আরো বেশি সমস্যা হতো। ওই সময় কয়েকটা হিন্দি গান আমার কালেকশনে ছিলো। অন্যতম ছিলো ‘হিরো’ ছবির.... 

“তু মেরা জানু হ্যায়...তু মেরা দিল বার হ্যায়..।"


কখনো কখনো আমি শখ করে ড্রাইভ করতাম। লেয়লার প্রতি আমার দুর্বলতার কথা ম্যাকডোনাল্ডসের সবাই জানতো। পাকিস্তানের তারিক, ইরানের হুমায়ুন, আজাম (মেয়ে), মিশরের এনাস(মেয়ে), তুরস্কের ইব্রাহিম উস্তা, রুমানিয়ার গাব্রিয়েলা (মেয়ে), এলেক্স, হাঙ্গেরির এরিকা (মেয়ে), টিবোর, আলবেনিয়ার ইনগ্রিদ(মেয়ে), সিরিয়ার ডাইম, ম্যানেজার সিলভিয়া (মেয়ে), জার্মানির ওরাসসহ সবাই কম বেশি আমাকে ইয়ার্কি করতো। আমাকে ক্ষেপানোর জন্য ওরা আমাকে 'মাজনু' ডাকতো কখনো। জার্মান ভাষায় মজনুকে মাজনু বলে। লেয়লা আমাকে মোটেও পাত্তা দিতো না। কাজের প্রয়োজন ছাড়া কোনো কথাই বলতো না। 


অনেকদিন পর একদিন ব্রেক টাইমে খাবার সময় এমপ্লয়িদের রুমে শুধু লেয়লা আর আমি। লেয়লা জানতো, আমি ভিয়েনায় ভালো পরিবেশে থাকি আর কিছুটা উঁচু শ্রেণির লোকদের সঙ্গে চলাফেরা করি। হঠাৎ লেয়লা যেচে আমাকে ডাক নাম ধরে জার্মান ভাষায় বললো, মন্টু, তুমি কি আমাকে একটা হেড এন্ড সোল্ডার (Head and Shoulder) শ্যাম্পু এনে দিতে পারবে ইউএন মার্কেট থেকে? (এখানে অবাক হওয়ার মতো তথ্য হলো, অস্টৃয়ার বাজারে হেড এন্ড শোল্ডার শ্যাম্পুটি তখন পাওয়া যেতো না। এবং রেড বুল ( Red Bull) এনার্জি ডৃংকটাও পাওয়া যেতো না। কেনো পাওয়া যেতো না তা কেউ আমাকে কনভিন্স করার মতো উত্তর দিতে পারেনি। একজন বলেছিলো,ওই দুই কম্পানির সঙ্গে অস্টৃয়ান সরকারের এখনো কোনো বিজনেস এগ্রিমেন্ট হয়নি।)


ভিয়েনায় ড্যানিউব নদীর পাড়ে জাতিসংঘের যে গুরুত্বপূর্ণ শাখা অফিস রয়েছে তার ভেতরে যে শপিং মল-যেখানে শুধু ইউএন অফিসের কর্মকর্তারাই কেনাকাটা করতে পারেন। বাইরের কোনো লোক সেখানে বলতে গেলে ঢুকতেই পারে না। পাস নিয়ে আমি গিয়েছিলাম দুই তিন দিন। ওই শপিং মলে এই শ্যাম্পুটা পাওয়া যেতো।


ইউএন অফিসে জব করেন আমার পরিচিত ফরহাদ ভাই। আমি সঙ্গে সঙ্গে লেয়লাকে বললাম, 

তোমার কয়টা লাগবে? 

লেয়লা বললো একটা হলেই চলবে। 

আমি তোমাকে টাকা এখন দেবো, না শ্যাম্পু আনার পর দেবো?  

আমি হেসে লেয়লাকে বললাম, আমিতো শ্যাম্পু বিক্রি করি না। 

আর রহস্যজনকভাবে লেয়লার দিকে ভ্রু কুঁচকে তাঁকিয়ে তাচ্ছিল্যভরা মুচকি হাসি দিয়েছিলাম। তুমি বললে, এক টাকা দিয়ে পুরো ভিয়েনা শহর আমি কিনে দেবো। আর তুমি আমাকে সামান্য শ্যাম্পুর টাকা দিবা!!!


সেদিন ছিলো বৃহস্পতিবার। লেয়লাকে বললাম, সোমবার নিয়ে আসবো তোমার শ্যাম্পু।

পরদিনই শুক্রবার ফরহাদ ভাইয়ের বাসায় গেলাম। ভাবীও আমাকে চিনতেন। বাসায় গিয়ে শুনি, ফরহাদ ভাই এক মাসের ছুটিতে দেশে এসেছেন। আয় হায়রে !!! আমি সোমবারে লেয়লাকে কিভাবে শ্যাম্পু দেবো?  ফরহাদ ভাইয়ের বাসা থেকে বের হয়ে এই সকাল ১১টায়ও আমি একটা বিয়ার খেলাম এক রেস্টুরেন্টে।


তরুণ বয়সের আবেগ! আমি জানতাম, অস্টৃয়ার প্রতিবেশি ইটালি, সুইজারল্যান্ড আর জার্মানিতে এই মাথা আর কাধের শ্যাম্পুটা এভেইলেবল। যে কোনো দোকানেই পাওয়া যায়। আগে দুইবার জার্মানি ও সুইজারল্যান্ড গিয়ে দেখেছি। আমি নিজেও এক ডজন শ্যাম্পু এনেছিলাম। সব বন্ধুবান্ধব নিয়ে গেছে।


লেয়লাকে সোমবারে এই শ্যাম্পু দিতে হলে আমাকে ওই তিন দেশের এক দেশে যেতে হবে। এ ছাড়া আমার সামনে আর কোনো অপশন নেই। কিন্তু আমি লেয়লাকে সোমবারে শ্যাম্পু দেবোই। আমি লেয়লাকে ভালোবাসি। লেয়লা আমার কাছে কিছু চেয়েছে। লেয়লার সঙ্গে আমি প্রেম করবো না। আমাকে ভালবাসতে লেয়লাকে বাধ্য করবো। বিয়ার খেতে খেতে সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের "কেউ কথা রাখেনি" কবিতার কয়েকটি লাইন আমার মনে পড়ে গেলো ......


" ভালোবাসার জন্য আমি জীবনকে বাজি রেখেছি

দুরন্ত ষাঁড়ের চোখে বেঁধেছি লাল কাপড়

এই বিশ্ব সংসার তন্ন তন্ন করে খুঁজে এনেছি 

একশো আটটি নীল পদ্ম..."


আমি কেনো পারবো না লেয়লার জন্য অন্য একটি দেশে গিয়ে সামান্য শ্যাম্পু আনতে?


শুক্রবার সব অ্যামব্যাসি খোলা ৫টা পর্যন্ত। ওখানে ছুটির দিন শনি/রবিবার। বাসা থেকে পাসপোর্ট নিয়ে গেলাম জার্মান দূতাবাসে। ৩০ মিনিটেই ওরা ৭ দিনের টুরিস্ট ভিসা দিলো। ভিয়েনার ভেস্ট বানহফ (West Banhoff) বা পশ্চিম রেলওয়ে স্টেশন থেকে জার্মানির নুরেমবার্গ (Nuremberg) শহরটি কাছাকাছি। এক্সপ্রেস ট্রেনে ৬ ঘন্টা লাগে যেতে। সারাদেশের ট্রেন সার্ভিসই ইলেক্ট্রিফাইফড। আসা যাওয়া ১২ ঘন্টা। পুরো একদিন লেয়লার শ্যাম্পুর জন্য ব্যয় করতে হবে।

শুক্রবার বিকেল ৪টায় কাজে গেলাম। রাত ১২ টা পর্যন্ত ডিউটি। লেয়লার সঙ্গেও দেখা। আমরা একই শিফটে কাজ করতাম। ১১ দিন দুপুর ২টা থেকে রাত ১০টা। আর ১১ দিন বিকেল ৪টা থেকে রাত ১২ টা। আমি ভোরে ঘুম থেকে উঠতে পারি না বলে সকাল ৬টা থেকে দুপুর ২ টার শিফটে  কাজ করতাম না। মাসে বাকি আট দিন ছুটি। ইউরোপে কাজের সময় সপ্তাহে পাঁচ দিন। দৈনিক ৮ ঘন্টা। সপ্তাহে ৪০ ঘন্টা। সেদিনও গাড়িতে হিরো ছবির গানটা বাজিয়েছিলাম। দেখি লেয়লাও মাথা নেড়ে গুনগুন করে গাইছে...

তু মেরা জানু হ্যায়...।


পরদিন শনিবার ছুটির দিন সকালে ঘুম থেকে উঠেই হাফপ্যান্ট, গেঞ্জি আর ক্যাডস পড়ে ভেস্ট বানহফ থেকে জার্মানিগামী ট্রেন ধরলাম সকাল ১১ টায়। ঠিক ৫ টায় জার্মানির নুরেমবার্গ নামলাম। আডেগ (Adeg) নামের একটা ডিপার্টমেন্ট ষ্টোর থেকে এক ডজন হেড এন্ড শোল্ডার শ্যাম্পু কিনলাম। প্রতিটা ৬ জার্মান মার্ক করে। দামি শ্যাম্পু। ছয় জার্মান মার্ক অনেক টাকা।জার্মান মার্ক খুব হার্ড কারেন্সি। তখনো ইউরোপীয় ইউনিয়ন হয়নি। সব দেশের আলাদা মুদ্রা। 


রাত ৯টা পর্যন্ত নুরেমবার্গ ঘোরাঘুরি করে ওখানেই এক রেস্টুরেন্টে রাতের খাবার খেয়ে ১০টার ট্রেনে চেপে ভোর চারটায় ভিয়েনা এসে পৌঁছলাম। রোববার দুপুর পর্যন্ত ঘুমিয়ে বিকেলে ‘জেনিফার লোপেজ’ একটা দামি পারফিউম আর বিভিন্ন রঙের এক ডজন লিপস্টিক আর ৪টা ডিওডোরান্ট ক্যামে (Camay) সাবান কিনে শ্যাম্পুসহ সবগুলো এক সঙ্গে সুন্দর গিফট র‍্যাপ দিয়ে প্যাক করে পরদিন সোমবার বিকেল চারটার শিফটে আমি ম্যাকডোনাল্ডসে গেলাম। ম্যাকডোনাল্ডসের বেইসমেন্টে প্রত্যেক এমপ্লয়ির জন্য ব্যক্তিগত জিনিস রাখার তালাসহ আলাদা বক্স আছে। আমি কাজে গিয়ে ওই বক্সে প্যাকেটটা রেখেছি। 


ব্রেক টাইমে যখন লেয়লা খাওয়ার জন্য এমপ্লয়ি রুমে গিয়েছে, তখনি আমি নিচে গিয়ে গিফট প্যাকেটটা এনে সবার সামনে লেয়লাকে দিয়ে ইংরেজিতেই বললাম, দিস ইস ফর ইউ লেয়লা। লেয়লা অবাক হয়ে জার্মান ভাষায় বললো, ভাস ইস্ত দাস? এটা কী? আমি বললাম, তোমার শ্যাম্পু। সে জার্মান ভাষায় বললো, সো ফিল গ্রসে পাক! এতো বড় প্যাকেট! সবার সামনে লেয়লা প্যাকেটটা খোলে বললো, আমিতো শুধু একটা শ্যাম্পুর কথা বলেছিলাম! ভাস হাস্ত দু গেসাক্ত? এটা তুমি কি করেছো? দু বিস্ত তেপাত। তুমি একটা পাগল। 


তুরস্কের উস্তা লেয়লাকে বললো, লেয়লা, তু মেরা জানু হ্যায়...। ইরানের হুমায়ুন বললো, দু বিস্ত নিখতস্ মন্টু। দু বিস্ত মাজনু। তুমি মন্টু না। তুমি মাজনু। লেয়লা ভ্রু কুঁচকে একেবারে নাকের উপরে কপালের চামড়ায় ভাজ ফেলে আমার দিকে অবাকভাবে এক দৃষ্টিতে তাঁকিয়েছিলো। 


এরপর থেকে লেয়লা আমার প্রতি দুর্বল হয়েছিলো। পাশাপাশি কাউন্টারে কাজ করার সময় মাঝে মাঝে লেয়লা আমার হাত ধরে কথা বলতো। চার বছর পর যেদিন আমি ম্যাকডোনাল্ডসের চাকরি ছেড়ে দেবো, সেদিন সবার কাছে বিদায় নিয়েছিলাম। লেয়লা ছলছল চোখে আমার দিকে তাঁকিয়ে বলেছিলো, কাল বিকেল ৫টায় আমি ভিয়েনার ‘চাটানোগা’ রেস্তোরায় তোমার জন্য অপেক্ষা করবো। ‘চাটানোগা’ ভিয়েনার খুব নাম করা রেস্তোরা। একেবারে ভিয়েনার মুল কেন্দ্রে। জায়গাটির নাম স্টেফানপ্লাটজ (Stephanplatz)। তুমি আসবে করিম? 


আমি বলেছিলাম, জিখা-অবশ্যই। লেয়লা আমার করিম নামটা শুদ্ধভাবে উচ্চারণ করতে পারতো। আমাকে বলেছিলো, ইরানীদের মধ্যে করিম নাম আছে। তার এক কাজিনের নামও করিম। পরদিন বিকেলে রেস্টুরেন্টে গিয়ে দেখি লেয়লা বসে আছে। লেয়লা বেশিরভাগ সময় কালো স্কার্ট আর টপস পরতো। ফর্সা গায়ের রঙে বেশ মানাতো ওকে। কালো চুল।


১০ মিনিট আমরা কেউ কোনো কথা বলতে পারিনি। এক সময় লেয়লা বললো, করিম, আমি তোমার হাতটা ধরে থাকি কিছুক্ষণ? আমি হাত বাড়িয়ে দিলাম। লেয়লা খাবারের অর্ডার দিলো। বিফ স্টেক। আমার প্রিয় খাবার। লেয়লা বিল দিলো। আমি দিতে চেয়েছিলাম। কিন্তু লেয়লা দিতে দিলো না। বাইরে এসে আমরা সেনট্রুমে হাঁটছিলাম হাত ধরে পাশাপাশি। ইউরোপে প্রত্যেক দেশের রাজধানীর মুল কেন্দ্রস্থলকে সেনট্রুম (Centrum) বলে। সেনট্রুম জার্মান ভাষা যাকে ইংরেজিতে সেন্টার বলে। সামারের চমৎকার বিকেল। কী রোমান্টিক বাতাস!


এক সময় লেয়লা বললো, করিম, তুমি কি আমার আরো একটু কাছে আসবে? আমি কাছাকাছি যেতেই লেয়লা শতশত মানুষের সামনে আমাকে বুকে জড়িয়ে ধরে অ্যারাবিয়ান স্টাইলে দুই গালে দুটো চুমু খেয়ে কান্না জড়িত গলায় বললো, আমি জানি, তুমি আমাকে অনেক ভালোবাসো। আমিও তোমাকে। কিন্তু আমি শিয়া আর তুমি সুন্নী মুসলিম। তাই আমি তোমাকে বিয়ে করতে পারবো না করিম। আমার বাবা মা তেহরান আছেন। তোমাকে বিয়ে করলে আমার পারিবারিক সমস্যা হবে। আমাকে ক্ষমা করে দিও। শিয়া-সুন্নী বিয়ে হয়। কিন্তু আমি এক সময় তেহরান ফিরে যাবো। তোমার কথা আমি সারাজীবন মনে রাখবো। তোমাকে ভালোবাসবো। 


আমি বলতে  দ্বিধা করবো না, লেয়লাকে শক্ত করে  বুকে জড়িয়ে ধরে ওর গালে ঠোঁটে চুমু খেয়ে আমি হেসকি তুলে কেঁদে ফেলেছিলাম। কোথায় যেনো আছে লেয়লা এখন?

তেহরান না ভিয়েনায়? কেমন যেন আছে? তরুণী লেয়লা এখন মধ্য বয়সি এক মহিলা!


নোটঃ ফেইসবুকে অনেক খোঁজে লেয়লাকে পেয়েছি।  কিন্তু তার একাউন্টটি এক্টিভ থাকলেও কোনো কার্যক্রম নেই। লেয়লা এখন তেহরান আছে। ফেইসবুকে জানলাম। 

কেমন যেনো আছে লেয়লা এখন? বেঁচে থাকলে তরুণী লেয়লা এখন মধ্যবয়সী এক ভদ্রমহিলা। 

© Karim Chowdhury 

      27 March, 2022

      Cumilla

      Bangladesh

-----------

ফ্র্যাংকলি বললে ঘটনাটি এমন। তখন ভিয়েনায় থাকতাম। কাজ করতাম ম্যাকডোনাল্ডসে। ভিয়েনা থেকে ১৫ কিলোমিটার দূরে। জায়গাটির নাম শপিং সিটি স্যুদ (Shopping City Sued)। এখানে বেশ বড় একটা শপিং সেন্টার আছে। অনেকটা আমেরিকার ওয়ালমার্ট(Walmart) এর মতো। ম্যাকডোনাল্ডসটিও বেশ বড়। ম্যাক ড্রাইভতো আছেই। বাইরেও আলাদা ম্যাক গার্ডেন আছে। নিজস্ব পার্কিং ব্যবস্থা। আমরা ৬৬ জন এমপ্লয়ি ছিলাম বিভিন্ন দেশের। 

একজন ম্যানেজার, চারজন অ্যাসিসটেন্ট ম্যানেজার। লেইট নাইট ডিউটিতে ম্যাকডোনাল্ডসের মাইক্রোতে আমাদের যার যার বাসায় পৌঁছে দেয়া হতো। এক গাড়িতে ইউরোপের একটি দেশে রাত ১২টা/১টার সময় বিভিন্ন দেশের ১০/১২ জন যুবক যুবতী কি হৈ হুল্লোড়টাই না করতাম আমরা!

ইরানের মেয়ে লেয়লাকে আমার খুব ভালো লাগতো। খুব সুন্দরী ছিলো লেয়লা। ইরানীরা লায়লা উচ্চারণ করে না। মেয়েটির পুরো নাম ছিলো লেয়লা খাকপুর

 (Leila Khakpoor)। শিয়া মুসলিম। শিয়াদের আমার ভালো লাগে। সুন্নীদের মতো এতো বিভক্তি শিয়াদের মধ্যে নেই। ১৯৮০-১৯৮৮ এই নয় বছর ইরাক-ইরান যুদ্ধ ছিলো। ওই সময় অনেক ইরানী ইউরোপে গিয়ে রাজনৈতিক আশ্রয় নিয়েছিলো। লেয়লাও তাদের একজন। 

তার সঙ্গে কাজ করতে গেলেই আমার দুর্বলতা প্রকাশ পেতো। রাতে ফেরার সময় আরো বেশি সমস্যা হতো। ওই সময় কয়েকটা হিন্দি গান আমার কালেকশনে ছিলো। অন্যতম ছিলো ‘হিরো’ ছবির.... 

“তু মেরা জানু হ্যায়...তু মেরা দিল বার হ্যায়..।"

কখনো কখনো আমি শখ করে ড্রাইভ করতাম। লেয়লার প্রতি আমার দুর্বলতার কথা ম্যাকডোনাল্ডসের সবাই জানতো। পাকিস্তানের তারিক, ইরানের হুমায়ুন, আজাম (মেয়ে), মিশরের এনাস(মেয়ে), তুরস্কের ইব্রাহিম উস্তা, রুমানিয়ার গাব্রিয়েলা (মেয়ে), এলেক্স, হাঙ্গেরির এরিকা (মেয়ে), টিবোর, আলবেনিয়ার ইনগ্রিদ(মেয়ে), সিরিয়ার ডাইম, ম্যানেজার সিলভিয়া (মেয়ে), জার্মানির ওরাসসহ সবাই কম বেশি আমাকে ইয়ার্কি করতো। আমাকে ক্ষেপানোর জন্য ওরা আমাকে 'মাজনু' ডাকতো কখনো। জার্মান ভাষায় মজনুকে মাজনু বলে। লেয়লা আমাকে মোটেও পাত্তা দিতো না। কাজের প্রয়োজন ছাড়া কোনো কথাই বলতো না। 

অনেকদিন পর একদিন ব্রেক টাইমে খাবার সময় এমপ্লয়িদের রুমে শুধু লেয়লা আর আমি। লেয়লা জানতো, আমি ভিয়েনায় ভালো পরিবেশে থাকি আর কিছুটা উঁচু শ্রেণির লোকদের সঙ্গে চলাফেরা করি। হঠাৎ লেয়লা যেচে আমাকে ডাক নাম ধরে জার্মান ভাষায় বললো, মন্টু, তুমি কি আমাকে একটা হেড এন্ড সোল্ডার (Head and Shoulder) শ্যাম্পু এনে দিতে পারবে ইউএন মার্কেট থেকে? (এখানে অবাক হওয়ার মতো তথ্য হলো, অস্টৃয়ার বাজারে হেড এন্ড শোল্ডার শ্যাম্পুটি তখন পাওয়া যেতো না। এবং রেড বুল ( Red Bull) এনার্জি ডৃংকটাও পাওয়া যেতো না। কেনো পাওয়া যেতো না তা কেউ আমাকে কনভিন্স করার মতো উত্তর দিতে পারেনি। একজন বলেছিলো,ওই দুই কম্পানির সঙ্গে অস্টৃয়ান সরকারের এখনো কোনো বিজনেস এগ্রিমেন্ট হয়নি।)

ভিয়েনায় ড্যানিউব নদীর পাড়ে জাতিসংঘের যে গুরুত্বপূর্ণ শাখা অফিস রয়েছে তার ভেতরে যে শপিং মল-যেখানে শুধু ইউএন অফিসের কর্মকর্তারাই কেনাকাটা করতে পারেন। বাইরের কোনো লোক সেখানে বলতে গেলে ঢুকতেই পারে না। পাস নিয়ে আমি গিয়েছিলাম দুই তিন দিন। ওই শপিং মলে এই শ্যাম্পুটা পাওয়া যেতো।

ইউএন অফিসে জব করেন আমার পরিচিত ফরহাদ ভাই। আমি সঙ্গে সঙ্গে লেয়লাকে বললাম, 

তোমার কয়টা লাগবে? 

লেয়লা বললো একটা হলেই চলবে। 

আমি তোমাকে টাকা এখন দেবো, না শ্যাম্পু আনার পর দেবো?  

আমি হেসে লেয়লাকে বললাম, আমিতো শ্যাম্পু বিক্রি করি না। 

আর রহস্যজনকভাবে লেয়লার দিকে ভ্রু কুঁচকে তাঁকিয়ে তাচ্ছিল্যভরা মুচকি হাসি দিয়েছিলাম। তুমি বললে, এক টাকা দিয়ে পুরো ভিয়েনা শহর আমি কিনে দেবো। আর তুমি আমাকে সামান্য শ্যাম্পুর টাকা দিবা!!!

সেদিন ছিলো বৃহস্পতিবার। লেয়লাকে বললাম, সোমবার নিয়ে আসবো তোমার শ্যাম্পু।

পরদিনই শুক্রবার ফরহাদ ভাইয়ের বাসায় গেলাম। ভাবীও আমাকে চিনতেন। বাসায় গিয়ে শুনি, ফরহাদ ভাই এক মাসের ছুটিতে দেশে এসেছেন। আয় হায়রে !!! আমি সোমবারে লেয়লাকে কিভাবে শ্যাম্পু দেবো?  ফরহাদ ভাইয়ের বাসা থেকে বের হয়ে এই সকাল ১১টায়ও আমি একটা বিয়ার খেলাম এক রেস্টুরেন্টে।

তরুণ বয়সের আবেগ! আমি জানতাম, অস্টৃয়ার প্রতিবেশি ইটালি, সুইজারল্যান্ড আর জার্মানিতে এই মাথা আর কাধের শ্যাম্পুটা এভেইলেবল। যে কোনো দোকানেই পাওয়া যায়। আগে দুইবার জার্মানি ও সুইজারল্যান্ড গিয়ে দেখেছি। আমি নিজেও এক ডজন শ্যাম্পু এনেছিলাম। সব বন্ধুবান্ধব নিয়ে গেছে।

লেয়লাকে সোমবারে এই শ্যাম্পু দিতে হলে আমাকে ওই তিন দেশের এক দেশে যেতে হবে। এ ছাড়া আমার সামনে আর কোনো অপশন নেই। কিন্তু আমি লেয়লাকে সোমবারে শ্যাম্পু দেবোই। আমি লেয়লাকে ভালোবাসি। লেয়লা আমার কাছে কিছু চেয়েছে। লেয়লার সঙ্গে আমি প্রেম করবো না। আমাকে ভালবাসতে লেয়লাকে বাধ্য করবো। বিয়ার খেতে খেতে সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের "কেউ কথা রাখেনি" কবিতার কয়েকটি লাইন আমার মনে পড়ে গেলো ......

" ভালোবাসার জন্য আমি জীবনকে বাজি রেখেছি

দুরন্ত ষাঁড়ের চোখে বেঁধেছি লাল কাপড়

এই বিশ্ব সংসার তন্ন তন্ন করে খুঁজে এনেছি 

একশো আটটি নীল পদ্ম..."

আমি কেনো পারবো না লেয়লার জন্য অন্য একটি দেশে গিয়ে সামান্য শ্যাম্পু আনতে?

শুক্রবার সব অ্যামব্যাসি খোলা ৫টা পর্যন্ত। ওখানে ছুটির দিন শনি/রবিবার। বাসা থেকে পাসপোর্ট নিয়ে গেলাম জার্মান দূতাবাসে। ৩০ মিনিটেই ওরা ৭ দিনের টুরিস্ট ভিসা দিলো। ভিয়েনার ভেস্ট বানহফ (West Banhoff) বা পশ্চিম রেলওয়ে স্টেশন থেকে জার্মানির নুরেমবার্গ (Nuremberg) শহরটি কাছাকাছি। এক্সপ্রেস ট্রেনে ৬ ঘন্টা লাগে যেতে। সারাদেশের ট্রেন সার্ভিসই ইলেক্ট্রিফাইফড। আসা যাওয়া ১২ ঘন্টা। পুরো একদিন লেয়লার শ্যাম্পুর জন্য ব্যয় করতে হবে।

শুক্রবার বিকেল ৪টায় কাজে গেলাম। রাত ১২ টা পর্যন্ত ডিউটি। লেয়লার সঙ্গেও দেখা। আমরা একই শিফটে কাজ করতাম। ১১ দিন দুপুর ২টা থেকে রাত ১০টা। আর ১১ দিন বিকেল ৪টা থেকে রাত ১২ টা। আমি ভোরে ঘুম থেকে উঠতে পারি না বলে সকাল ৬টা থেকে দুপুর ২ টার শিফটে  কাজ করতাম না। মাসে বাকি আট দিন ছুটি। ইউরোপে কাজের সময় সপ্তাহে পাঁচ দিন। দৈনিক ৮ ঘন্টা। সপ্তাহে ৪০ ঘন্টা। সেদিনও গাড়িতে হিরো ছবির গানটা বাজিয়েছিলাম। দেখি লেয়লাও মাথা নেড়ে গুনগুন করে গাইছে...

তু মেরা জানু হ্যায়...।

পরদিন শনিবার ছুটির দিন সকালে ঘুম থেকে উঠেই হাফপ্যান্ট, গেঞ্জি আর ক্যাডস পড়ে ভেস্ট বানহফ থেকে জার্মানিগামী ট্রেন ধরলাম সকাল ১১ টায়। ঠিক ৫ টায় জার্মানির নুরেমবার্গ নামলাম। আডেগ (Adeg) নামের একটা ডিপার্টমেন্ট ষ্টোর থেকে এক ডজন হেড এন্ড শোল্ডার শ্যাম্পু কিনলাম। প্রতিটা ৬ জার্মান মার্ক করে। দামি শ্যাম্পু। ছয় জার্মান মার্ক অনেক টাকা।জার্মান মার্ক খুব হার্ড কারেন্সি। তখনো ইউরোপীয় ইউনিয়ন হয়নি। সব দেশের আলাদা মুদ্রা। 

রাত ৯টা পর্যন্ত নুরেমবার্গ ঘোরাঘুরি করে ওখানেই এক রেস্টুরেন্টে রাতের খাবার খেয়ে ১০টার ট্রেনে চেপে ভোর চারটায় ভিয়েনা এসে পৌঁছলাম। রোববার দুপুর পর্যন্ত ঘুমিয়ে বিকেলে ‘জেনিফার লোপেজ’ একটা দামি পারফিউম আর বিভিন্ন রঙের এক ডজন লিপস্টিক আর ৪টা ডিওডোরান্ট ক্যামে (Camay) সাবান কিনে শ্যাম্পুসহ সবগুলো এক সঙ্গে সুন্দর গিফট র‍্যাপ দিয়ে প্যাক করে পরদিন সোমবার বিকেল চারটার শিফটে আমি ম্যাকডোনাল্ডসে গেলাম। ম্যাকডোনাল্ডসের বেইসমেন্টে প্রত্যেক এমপ্লয়ির জন্য ব্যক্তিগত জিনিস রাখার তালাসহ আলাদা বক্স আছে। আমি কাজে গিয়ে ওই বক্সে প্যাকেটটা রেখেছি। 

ব্রেক টাইমে যখন লেয়লা খাওয়ার জন্য এমপ্লয়ি রুমে গিয়েছে, তখনি আমি নিচে গিয়ে গিফট প্যাকেটটা এনে সবার সামনে লেয়লাকে দিয়ে ইংরেজিতেই বললাম, দিস ইস ফর ইউ লেয়লা। লেয়লা অবাক হয়ে জার্মান ভাষায় বললো, ভাস ইস্ত দাস? এটা কী? আমি বললাম, তোমার শ্যাম্পু। সে জার্মান ভাষায় বললো, সো ফিল গ্রসে পাক! এতো বড় প্যাকেট! সবার সামনে লেয়লা প্যাকেটটা খোলে বললো, আমিতো শুধু একটা শ্যাম্পুর কথা বলেছিলাম! ভাস হাস্ত দু গেসাক্ত? এটা তুমি কি করেছো? দু বিস্ত তেপাত। তুমি একটা পাগল। 

তুরস্কের উস্তা লেয়লাকে বললো, লেয়লা, তু মেরা জানু হ্যায়...। ইরানের হুমায়ুন বললো, দু বিস্ত নিখতস্ মন্টু। দু বিস্ত মাজনু। তুমি মন্টু না। তুমি মাজনু। লেয়লা ভ্রু কুঁচকে একেবারে নাকের উপরে কপালের চামড়ায় ভাজ ফেলে আমার দিকে অবাকভাবে এক দৃষ্টিতে তাঁকিয়েছিলো। 

এরপর থেকে লেয়লা আমার প্রতি দুর্বল হয়েছিলো। পাশাপাশি কাউন্টারে কাজ করার সময় মাঝে মাঝে লেয়লা আমার হাত ধরে কথা বলতো। চার বছর পর যেদিন আমি ম্যাকডোনাল্ডসের চাকরি ছেড়ে দেবো, সেদিন সবার কাছে বিদায় নিয়েছিলাম। লেয়লা ছলছল চোখে আমার দিকে তাঁকিয়ে বলেছিলো, কাল বিকেল ৫টায় আমি ভিয়েনার ‘চাটানোগা’ রেস্তোরায় তোমার জন্য অপেক্ষা করবো। ‘চাটানোগা’ ভিয়েনার খুব নাম করা রেস্তোরা। একেবারে ভিয়েনার মুল কেন্দ্রে। জায়গাটির নাম স্টেফানপ্লাটজ (Stephanplatz)। তুমি আসবে করিম? 

আমি বলেছিলাম, জিখা-অবশ্যই। লেয়লা আমার করিম নামটা শুদ্ধভাবে উচ্চারণ করতে পারতো। আমাকে বলেছিলো, ইরানীদের মধ্যে করিম নাম আছে। তার এক কাজিনের নামও করিম। পরদিন বিকেলে রেস্টুরেন্টে গিয়ে দেখি লেয়লা বসে আছে। লেয়লা বেশিরভাগ সময় কালো স্কার্ট আর টপস পরতো। ফর্সা গায়ের রঙে বেশ মানাতো ওকে। কালো চুল।

১০ মিনিট আমরা কেউ কোনো কথা বলতে পারিনি। এক সময় লেয়লা বললো, করিম, আমি তোমার হাতটা ধরে থাকি কিছুক্ষণ? আমি হাত বাড়িয়ে দিলাম। লেয়লা খাবারের অর্ডার দিলো। বিফ স্টেক। আমার প্রিয় খাবার। লেয়লা বিল দিলো। আমি দিতে চেয়েছিলাম। কিন্তু লেয়লা দিতে দিলো না। বাইরে এসে আমরা সেনট্রুমে হাঁটছিলাম হাত ধরে পাশাপাশি। ইউরোপে প্রত্যেক দেশের রাজধানীর মুল কেন্দ্রস্থলকে সেনট্রুম (Centrum) বলে। সেনট্রুম জার্মান ভাষা যাকে ইংরেজিতে সেন্টার বলে। সামারের চমৎকার বিকেল। কী রোমান্টিক বাতাস!

এক সময় লেয়লা বললো, করিম, তুমি কি আমার আরো একটু কাছে আসবে? আমি কাছাকাছি যেতেই লেয়লা শতশত মানুষের সামনে আমাকে বুকে জড়িয়ে ধরে অ্যারাবিয়ান স্টাইলে দুই গালে দুটো চুমু খেয়ে কান্না জড়িত গলায় বললো, আমি জানি, তুমি আমাকে অনেক ভালোবাসো। আমিও তোমাকে। কিন্তু আমি শিয়া আর তুমি সুন্নী মুসলিম। তাই আমি তোমাকে বিয়ে করতে পারবো না করিম। আমার বাবা মা তেহরান আছেন। তোমাকে বিয়ে করলে আমার পারিবারিক সমস্যা হবে। আমাকে ক্ষমা করে দিও। শিয়া-সুন্নী বিয়ে হয়। কিন্তু আমি এক সময় তেহরান ফিরে যাবো। তোমার কথা আমি সারাজীবন মনে রাখবো। তোমাকে ভালোবাসবো। 

আমি বলতে  দ্বিধা করবো না, লেয়লাকে শক্ত করে  বুকে জড়িয়ে ধরে ওর গালে ঠোঁটে চুমু খেয়ে আমি হেসকি তুলে কেঁদে ফেলেছিলাম। কোথায় যেনো আছে লেয়লা এখন?

তেহরান না ভিয়েনায়? কেমন যেন আছে? তরুণী লেয়লা এখন মধ্য বয়সি এক মহিলা!

নোটঃ ফেইসবুকে অনেক খোঁজে লেয়লাকে পেয়েছি।  কিন্তু তার একাউন্টটি এক্টিভ থাকলেও কোনো কার্যক্রম নেই। লেয়লা এখন তেহরান আছে। ফেইসবুকে জানলাম। 

কেমন যেনো আছে লেয়লা এখন? বেঁচে থাকলে তরুণী লেয়লা এখন মধ্যবয়সী এক ভদ্রমহিলা। 

© Karim Chowdhury 

      27 March, 2022

      Cumilla

      Bangladesh

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

আমার দেখা ১৯৭৪ সালের দুর্ভিক্ষ

আমার দেখা ১৯৭৪ সালের দুর্ভিক্ষ সরকারঃ শেখ মুজিবের শাসনামল ১৯৭৪-এর দুর্ভিক্ষ বাংলাদেশে ১৯৭৪ সালের মার্চে শুরু হয়ে সেই বছরেরই ডিসেম্বরের দিকে গিয়ে শেষ হয়। এই দুর্ভিক্ষে অসংখ্য মানুষ অনাহারে মারা গিয়েছিল। এই দুর্ভিক্ষকে স্মরণকালের মধ্যে সবচেয়ে ভয়ানক হিসেবে গন্য করা হয়। ওই সময় আমি বুঝতাম। ক্লাশ ফোরে পড়তাম। আহারে ! কি যে অভাব ! অনেকের মতো আমরাও ভাত না খেয়ে রুটি খেয়েছি । তাও পরিমিত । কখনো জাউ খেয়েছি । শুকনো মরিচ পাওয়া যেতো না । কাঁচা মরিচের কেজি ছিলো ১৫০ টাকা । লবন ১২০ টাকা । আর সোনার ভরি ছিলো তখন ১৫০ টাকা । সোনা শুধু ওই সময় কম দাম ছিলো । চারদিকে অভাব । সারাদেশের মানুষের হাহাকার । কতো মানুষ না খেয়ে মারা গেছেন ! বিদেশি রিলিফ সব আওয়ামী লীগের লোকেরা চুরি করেছে । আর বেশিরভাগ রিলিফ সীমান্ত দিয়ে ভারতে চলে পাচার হয়েছিলো । তখন বর্ডার খোলা ছিলো তখন । মহিলাদের শাড়ি কাপড় ছিলো না । অনেকে মাছ ধরার জাল পরে লজ্জাস্থান ঢেকেছিলো । এসব ছবি পত্রিকায়ও ছাপা হয়েছিলো । কিন্তু আওয়ামী লীগ নেতাদের কোনো অভাব ছিলো না । বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ শেষ হওয়ার মাত্র দুই বছর তিন মাসের মাথায় ...

বোতল

বোতল মানব জীবনে বোতল অপরিহার্য । বোতল অনেক অর্থেও ব্যবহার হয় । কোনো কোনো এলাকায় আনস্মার্ট, বেয়াক্কেল প্রকৃতির লোককেও বোতল বলা হয় । ইউরোপ আমেরিকায় থাকতে আমি ডৃংক করতাম । হার্ড ডৃংক কমই খেতাম । প্রতিদিনই বিয়ার খেতাম । বিয়ার স্বাস্থ্য ভালো রাখে ও কাজ করতে এনার্জি জোগায় । পরিমিত বিয়ার খেলে কেউ মাতাল হয় না । মাঝে মাঝে বিশেষ কোনো পার্টিতে হুইস্কি খাওয়া হতো । তাও দামি ব্র্যান্ডের । জনি ওয়াকার ব্ল্যাক লেবেল, টিচার্স, পাসপোর্ট, হেনেসি, শিভাস রিগাল, জ্যাক ড্যানিয়েলস । সাকুরায়ও অনেক সময় এসব ব্র্যান্ডের হুইস্কি পাওয়া যায় না । তো দেশে আসার পরও কিছু দিন ডৃংক করেছিলাম । কুমিল্লায় সরকার অনুমোদিত একটা মদের দোকান আছে চক বাজারে । নামঃ নাদের ট্রেডিং কোং । এটা প্রায় আজ ৫০ বছর । এখানে বিদেশি ব্র্যান্ডের ডৃংক পাওয়া যায় না । দেশিয় কোম্পানি ‘কেরো এন্ড কোং’ যা দর্শনায় অবস্থিত তার তৈরি ভদকা, হুইস্কি, জিন পাওয়া যায় । আমাদের সমাজতো রক্ষনশীল । তাই কান্দিরপাড় থেকে একটা স্প্রাইট কিনে অর্ধেক খেতে খেতে চক বাজার যেতাম । নাদেরে যখন পৌঁছতাম তখন স্প্রাইটের বোতল অর্ধেক খালি হয়ে যেতো । আমি বাবুল ভাইকে স্প্...

ফেবুতে মেয়েদের পোস্ট

ফেবুতে মেয়েদের পোস্ট সকালে ঘুম ভেঙে দেখি আট টা বাজে । শরীরটাও বেশি ভালো লাগছে না । আবার ঘুমাল াম । ১১টায় উঠলাম । ২ মগ চা খেলাম ( বাজারের হিসেবে ৮ কাপ হবে)। সবাই জানেন আমি স্মোক করি । চেইন স্মোকার । কম্পিউটার খোঁচাখুঁচি করে নিজে নিজেই ঠিক করলাম । প্রায় দুই ঘন্টা । আমি থাকি চার তলায় । দুপুর ১টা বাজে । খেতেও ইচ্ছে করছে না কিছু । তখনো মুখ ধুই নি । কম্পিউটারে খোঁচাখোঁচি করতে গিয়ে দেখি এক মেয়ে তার পা’য়ের একটা ছবি আপলোড করেছে । দেখলাম এই পা মানে ঠ্যাং এর ছবিতে লাইক পড়েছে ৯৪৭ টা । কমেন্ট অসংখ্য । ‘কতো সুন্দর এই পা । না জানি তুমি কতো সুন্দর । পা তো নয় যেন একটা গোলাপ ফুল’ । এ জাতীয় অনেক কমেন্ট । আমি পোষ্ট টা দেখে কিছুটা অবাক হলাম । একটা ঠ্যাং এর এতো কদর ! প্রায়ই লক্ষ্য করি, মেয়েরা যখনি কিছু আপলোড করে সেটা তাদের পায়ের ছবিই হোক,হাতের ছবিই হোক আর নাকের ছবিই হোক বা এক চোখের ছবিই হোক সে সব ছবিতে অগনিত লাইক আর কমেন্ট । মেয়ে বন্ধুদের ছোট করার জন্য বলছি না, ফেবুতে প্রায়ই দেখি মেয়েরা কোনো ছবি বা দু এক লাইন হাবিজাবি লিখলে লাইক আর কমেন্টের বন্যা বয়ে যায় । অনেক মেয়েরা শখ করে পিঠা, ...