অনেক পারিবারিক সমস্যার একটি
-------------------------------------------------
আমার সমবয়সী সব বন্ধুরাই কেউ শ্বশুর, কেউ নানা, কেউ দাদা হয়েছেন। বাংলাদেশের সমাজে অনেক সমস্যার মধ্যে বড় সমস্যা পারিবারিক সমস্যা। এমন পরিবার আমি দেখিনি যে পরিবারে সমস্যা নেই। অনেক সমস্যার মাঝে বড় একটি সমস্যা হলো বিবাহিতা মেয়েকে দীর্ঘ দিন বাবার বাড়িতে রাখা। আমার পরিচিত অনেক ঘনিষ্ঠজন আছেন। কাইন্ডলি কেউ পার্সোনালি নেবেন না। সারা বাংলাদেশে এই সমস্যা। আমার এই ছোট গবেষণা অনেকের বিপক্ষে যাবে। এমন কমেন্টারিতে (Commentary) সবাইকে খুশি করা যায় না। আশা করি, লেখাটির বিষয়বস্তু সকলে বিবেচনা করবেন৷ আট দশজন বিবাহিতা মেয়ের পিতার সঙ্গে মত বিনিময় করে এই কমেন্টারি লিখছি।
বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে দেখা যায়, বেশিরভাগ মধ্যপ্রাচ্য প্রবাসী ছেলেদের স্ত্রী তাদের বাবার বাড়িতে থাকে বিভিন্ন কারণে। ইউরোপ আমেরিকার মতো মধ্যপ্রাচ্য প্রবাসী ছেলেরা তাদের স্ত্রী ও সন্তানদের ওই দেশে নিতে পারে না। বিয়ের পর স্বামী বিদেশে থাকলে স্ত্রীরা শ্বশুর বাড়িতে থাকে না বিভিন্ন সমস্যার কারণে। স্বামী দেশে না থাকলে শ্বশুর বাড়িতেও মেয়েদের অনেক সমস্যা হয়। তাই তাদের ছেলেমেয়েদের দেখাশোনার জন্য মেয়েরা বাবার বাড়িতে থাকাকে উত্তম মনে করে। এতে স্বামীরও সম্মতি থাকে। আবার অনেক বিবাহিতা মেয়েরা পড়াশোনা করে। স্বামী বিদেশে থাকায় তারা বাবার বাড়িতে থেকে পড়াশোনা করে আর ছোট বাচ্চাদের মা বাবা দেখাশোনা করেন। এটা একটা দিক।
এখানে আরো একটা বড় সমস্যা আছে। এসব বিষয় ওপেনলি কেউ আলোচনা করে না। বাংলাদেশের মানুষের অর্থনৈতিক সমস্যার কারণে অনেক পুরুষ বছরের পর বছর স্ত্রীকে দেশে ফেলে বিদেশে থাকে। এটা সবচেয়ে বড় সমস্যা। প্রাপ্ত বয়স্ক প্রতিটি নারী পুরুষের শারীরিক চাহিদা আছে। পৃথিবীর ইতিহাসে বিয়ে প্রথার প্রচলন হয় এই শারীরিক চাহিদার কারণে। কিন্তু স্বামী, স্ত্রীর কাছ থেকে দূরে থাকার কারণে অনেক স্ত্রী স্বামীর অনুপস্থিতিতে পরকীয়া প্রেমে জড়িয়ে পড়ে। এর জন্য আমি ব্যক্তিগতভাবে স্ত্রীকে দায়ী করবো না। এমনও দেখেছি, পাঁচ বছরের বিবাহিত জীবনে স্ত্রী স্বামীকে পাঁচ মাসও কাছে পায়নি। যা ইসলাম ধর্মও অনুমোদন করে না। স্ত্রীকে ফেলে একজন স্বামী কতোদিন বাইরে থাকতে পারে এ নিয়ে ধর্মীয় বাধ্যবাধকতাও আছে। এমন বিয়ে ইসলাম ধর্মের পরিপন্থী।
ফলে স্ত্রী পরকীয়া প্রেমে জড়িয়ে পড়তে বাধ্য হয়। আমার ব্যক্তিগত মত, বিয়ে দেয়ার পর যদি স্বামী ছাড়াই স্ত্রীকে বা স্ত্রী ছাড়া স্বামীকে থাকতে হয় তবে এই বিয়ের প্রয়োজন আছে বলে আমি মনে করি না। এতে সামাজিক অবক্ষয় ও পারিবারিক অশান্তির সৃষ্টি হয়। একটা ছেলে বিদেশ থেকে দেশে আসে এক দুই মাসের ছুটিতে। বিয়ে করার উদ্দেশ্যে। ১৫ দিন, এক মাস লেগে যায় পাত্রী দেখা, বিয়ের প্রস্তুতি নিতে। বিয়ে করে ছেলেটা বড়জোর এক মাস স্ত্রীর সঙ্গে থাকে। এরপর বিদেশ গিয়ে দুই তিন বছর আসে না বা আসতে পারে না। রবীন্দ্রনাথ অনেক আগেই বলেছেন, "নর মাংসের স্বাদ পেলে বাঘের যে দশা হয় সেক্সের স্বাদ পেলে মেয়েদেরও এমন দশা হয়"।
স্বামীর দীর্ঘ অনুপস্থিতিতে স্ত্রীরা সেক্স ক্র্যাজি হয়ে উঠে। এবং এটা অত্যন্ত স্বাভাবিক।
পরকীয়ার সৃষ্টি এখান থেকেই। বাংলাদেশের সমাজে এই পরকীয়া এক ভয়াবহ সমস্যা। লাখ লাখ প্রবাসী স্বামীর স্ত্রী পরকীয়ায় জড়িয়ে পড়ছে। এর একমাত্র কারণ স্বামী সঙ্গ থেকে তারা বঞ্চিত। মেডিকেল সাইন্স বলে; এক, দুইটা বাচ্চা হবার পর মেয়েদের শারীরিক চাহিদা আরো বৃদ্ধি পায়। পত্রপত্রিকায়, টিভিতে, সমাজমাধ্যমে এই পরকীয়ার খবর প্রতিদিনই চোখে পড়ে।
আর এই পরকীয়ায় জড়িয়ে পড়া থেকে দূরে রাখতে প্রবাসী স্বামী চান তাদের স্ত্রী বাচ্চাকাচ্চা নিয়ে একা বাসায় না থেকে শ্বশুর বাড়িতে থাকুক। অনিচ্ছা স্বত্তেও অনেক অভিভাবক বিবাহিতা মেয়েকে তার বাড়িতে রাখতে বাধ্য হন। এতে মেয়েটির বাবার উপর আর্থিক চাপও বাড়ে। এক বা দুই সন্তান নিয়ে একটা মেয়ে বাবার বাড়িতে থাকলে বাবা মেয়ের কাছ থেকে বাড়ি ভাড়া ও খাওয়া খরচ কিছুতেই নেন না। অথচ এটা স্বামীর খরচ। স্বামী হয়তো স্ত্রীর হাত খরচ আর বাচ্চার জন্য কিছু খরচ দেন। বাকি সব খরচ বাবার উপর বর্তায়। অনেক সময় জরুরি চিকিৎসার ব্যয়ভারও বাবাকে বহন করতে হয়। বাবা মা, মেয়েকে জামাইকে না পারে কিছু কইতে না পারে সইতে। এটা তাদের গোপন বা অভ্যন্তরীণ দু:খ।
আরেকদিকে অনেক ছেলেরা ২৫/৩০ বছর বয়সেও বিয়ে করতে পারছে না আর্থিক অনটনের কারণে। এই সব ছেলেরা টার্গেট করে প্রবাসীদের স্ত্রীকে।
বাংলাদেশে একটা প্রবাদ আছে...
'গরীবের বউ সকলের ভাবী'। এখন প্রবাসীদের বউয়েরাও ওইসব ছেলেদের চোখে ভাবী।
এখানেও আরেক পারিবারিক সমস্যা আছে। অভিভাবক পড়েন শাখের করাতে। ওই পরিবারে যদি বিবাহিত ছেলে থাকে তবে ছেলের স্ত্রীর সঙ্গে বিবাহিতা মেয়েটির বনিবনা হয় না। অর্থাৎ ভাইয়ের বউয়ের সঙ্গে ননদ বা ননশের যুগ যুগ ধরে চলে আসা বাঙালীর ঐতিহ্যগত কলহের সূত্রপাত হয়। অভিভাবক না পারে মেয়েকে কিছু বলতে, না পারে ছেলের বউকে কিছু বলতে। ছেলের বউয়ের শ্বশুর বাড়ি আর মেয়ের বাবার বাড়ি। বিরাট সমস্যা। আর উভয়ের বাচ্চা থাকলে সমস্যা বিকট আকার ধারণ করে। একজনের বাচ্চা আরেকজনের বাচ্চাকে ডিস্টার্ব করলে তা নিয়ে বিবাদে জড়ানো নতুন কিছু নয়। অবুঝ বাচ্চারা এক সঙ্গে খেলে। খেলার সময় বাচ্চারা রাগারাগি করে একজন আরেকজনকে একটা কিল দিলে বাসায় মিসাইল বিস্ফোরিত হবে। ভাইয়ের বউ আর ননদের যুদ্ধ শুরু হয়ে যাবে।
সেজন্য বিয়ের আগে অভিভাবকদের এসব বিষয় বেশি বিবেচনায় নেয়া উচিৎ। নইলে শাখের করাতে পড়তে হবে।
তবে বিয়ের পর মেয়েরা স্বামীর তত্বাবধানে থাকাই উত্তম এবং উচিতও বটে। শীল পাটার ঘষাঘষি মরিচের মরণ। মেয়েটির বাবা মাকে স্বস্তি দেয়া উচিৎ। ২০/২৫ বছর মেয়েকে খাইয়ে, পরিয়ে, লেখাপড়া শিখিয়ে বিয়ে দেয়ার পরও কেনো বাবা মা মেয়ের কারণে ছেলের বিরাগভাজন হবেন? বাংলাদেশের সামাজিক ব্যবস্থায় অথবা ইসলামী রীতি অনুয়ায়ী মেয়ে নয়, ছেলে বাবার প্রতিনিধিত্ব করে। মেয়ের বিয়ের পর বাবা মা পর হয়ে যাবেন তা নয়। বাবা মার দায়িত্ব আর যন্ত্রণা সারাজীবনই থাকে। সন্তানরা তা বুঝে না।
যে সব ছেলেরা প্রবাসী তাদের উচিৎ এই সমস্যা দ্রুত সমাধান করা। খুব কাছে থেকে দেখেছি, আমার দূর সম্পর্কের এক ফুফু বিয়ের পর প্রায় ৭ বছর বাবার বাড়িতে ছিলেন। একদিন এমন ঝগড়া হয়েছে ফুফুর স্বামীর উপস্থিতিতে, প্রকাশ্য দিবালোকে ভ্যান গাড়ি ডেকে, মালামাল নিয়ে সবার সামনে দিয়ে ফুফু( তার স্বামী সন্তান নিয়ে) বাবার বাড়ি ছেড়ে চলে যান। আজ প্রায় ২৫ বছর তিনি বাবার বাড়ি আসেন না! তার স্বামীও শ্বশুর বাড়িতে আসেন না! সম্পর্ক এমন তিক্ত হবার আগেই সিদ্ধান্ত নেয়া উচিৎ।
আমার এই কমেন্টারি সমাজ বিশ্লেষণের মাধ্যমে লেখা।
কাউকে আঘাত দেয়া বা ছোট করা নয়।
সিনিয়র বলে আরো অনেক কথা খোলামেলা বলতে পারলাম না।
(*অন্যান্য ক্ষেত্রেও পরকীয়া প্রেমে জড়িয়ে পড়ে অনেকে। স্বামীর অবহেলা, শারীরিক অক্ষমতা, মানসিক দূরত্ব। এসব কারণে। তা এই কমেন্টারির উপজীব্য নয়।)
১৬ নভেম্বর, ২০২৩
কুমিল্লা।
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন