সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

খেলা

 খেলা

--------

পরিশ্রমী খেলাধুলার প্রতি আমার আগ্রহ স্কুল জীবন থেকেই নেই। কানামাছি, গোল্লাছুট, কুতকুত, দড়ি লাফানি, হাডুডু, দাঁড়িয়াবান্দা, হাইড এন্ড সিক ছোটবেলা যাকে বলতাম লুকপলান্তি, মার্বেল খেলাসহ অনেক খেলা আছে। বড় হয়েতো আর এসব খেলা যায় না। এসব ছোটদের খেলা। স্কুল জীবনে মাঝে মাঝে ফুটবল খেলেছি। কিন্তু অনেক কষ্ট। এতো দৌঁড়াদৌঁড়ি!

কলেজ জীবনে ক্রিকেট খেলা দেখতাম। অনেকেই অবাক হবেন, ক্রিকেট আমার পছন্দের খেলা নয়। এতো দীর্ঘ সময়ের খেলা! সারাদিন ধরে খেলে! কখনো তিন চার দিন ধরে খেলা! 

অন্য সব খেলার মতো ক্রিকেট খেলা নিয়েও অনেক জোকস চালু আছে। তারই একটি-

সাবেক জার্মান ডিকটেটর এডলফ্ হিটলার তার সহযোগী আইখম্যানকে বললো, বৃটিশরা এটা কি খেলে যা জার্মানরা খেলে না? জার্মান পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ জাতি। ডয়েচলান্ড বলে কথা। [ইংরেজিতে জার্মানি। জার্মান ভাষায় ডয়েচলান্ড( Deutschland) ]। আমাদেরকেও এই খেলায় এফিশিয়েন্ট হতে হবে। ইংরেজদের কোনো কিছুই আনচ্যালেঞ্জড ছেড়ে দেয়া হবে না। এখন থেকে জার্মানরাও ক্রিকেট খেলবে। তবে তার আগে আমি খেলাটি একবার দেখতে চাই।

ফুয়েরার (নেতা) এর ইচ্ছা পূরণে সঙ্গে সঙ্গে এসে গেলো ক্রিকেটের ভিডিও টেপ। সারাদিন হিটলার খেলা দেখলো। প্রথম দল ব্যাট করার পর হিটলার জানতে চাইলো কে জিতলো? সহযোগিরা জানালো, এখনো কেউ জিতেনি। সমপরিমাণ খেলা চলবে। অন্য দল ব্যাট করবে। উত্তেজিত হয়ে হিটলার বললো, এখনো খেলা শেষ হয়নি? কতো দিন ধরে খেলবে?

ক্রিকেট খেলার নিয়ম, রান সংখ্যা, বোলিং, ব্যাটিং, ক্যাচ আউট, রান আউট, ষ্টাম্প আউট, কট আউট, ছক্কা মারা, চার মারা, কতো বলে ওভার, কোনটা ওয়াইড বল, কোনটা নো বল, কোনটা এল.বি. ডাব্লিউ, ইনিংস কি? ওয়ান ডে ম্যাচ, টেষ্ট সিরিজ, কতো রানে সেঞ্চুরি এসব কিছু শুনে দ্বিগুণ উত্তেজিত হয়ে হিটলার বললো-এটা ইংরেজদের একটা প্যাঁচানি হিসাব। এতো হিসাব টিসাব দিয়ে জার্মানিকে হারিয়ে দেয়ার একটা নতুন পলিসি। তখন প্রচারমন্ত্রী গোয়েবলসকে ডেকে বললো, ফরজিকত্ (সাবধান)! এই খেলা জার্মানি কখনো খেলবে না। অ্যারষ্টে ওন্দ লেকস্তে ফেয়ারভারুং (প্রথম এবং শেষ ওয়ার্নিং)। জাতিকে তা জানিয়ে দাও। সেই থেকে জার্মানি ক্রিকেট খেলে না।


বাংলাদেশে ক্রিকেট যথেষ্ট জনপ্রিয় হলেও কেউ কেউ হিটলারের মতোই বলেন, এটা দীর্ঘ সময়ের খেলা। এই খেলায় আনন্দ কম, উত্তেজনা নেই বললেই চলে। সারাক্ষণ একটা হিসাবের মধ্যে থাকতে হয়। কতো ওভারের খেলা। কতো বল গেলো, কতো বল রইলো, এখন রান রেট কতো? কতো হওয়া দরকার? কতো উইকেট হাতে আছে? জয়ের জন্য ছক্কা মারা দরকার কি না-আরে এতো হিসাব করলে মানুষ আনন্দ করবে কখন? জ্বলজ্যান্ত একটা মানুষ ক্রিকেট খেলতে গিয়ে হয়ে যায় উইকেট। অনেকেই আবার ডাক্তারের মতো বলেন, এই খেলাটা আনহাইজিনিক। বলটা যে থুতু দিয়ে ঘষে এটা স্বাস্থ্য সম্মত নয়।


আমি কম পরিশ্রমী কিছু খেলা খেলতে পারি। তাস খেলার মধ্যে কয়েক রকমের খেলা খেলতে পারি। ব্রিজ, 29, হার্টস, স্পেইড ট্রাম, নাইন কার্ড, তিন তাস। শেষের দুইটা জুয়া হিসেবে বেশি খেলা হয় তাই এই দুটো খেলা কম খেলেছি। ব্রিজ, 29 বেশ প্রিয়। 


ইউরোপে গিয়ে পুল খেলার প্রতি খুব আগ্রহ জন্মায়। খুবই অবাক হয়ে ভাবতাম, ছোট এই গোল বলকে লাঠি দিয়ে খোঁচা মেরে কিভাবে পকেটে ফেলে। এক সময় বেশ ভালো পুল খেলা শিখে ফেলি। প্রায় প্রতিদিনই রেস্টুরেন্টে বা বারে গেলে দুই চার গেইম পুল খেলা হতোই। 

আর পারি দাবা ও লুডু খেলা। এখনো মোবাইল ফোনে লুডু খেলি বিভিন্ন দেশের মানুষের সঙ্গে। 


যদিও খেলিনি। তবে খেলাধুলার মধ্যে ফুটবল আমার প্রিয় খেলা। বেশ উপভোগ করি। ৯০ মিনিটের খেলা। প্রতিমুহূর্তেই টান টান উত্তেজনা। ইংলিশ প্রিমিয়ার লীগ, লা লিগা, কোপা আমেরিকার খেলা বেশ লাগে। সময় পেলে দেখি। ইংলিশ লীগে ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড, চেলসি, লিভারপুল, আর্সেনাল ক্লাবের খেলা ভালো লাগে। স্প্যানিশ লীগে রিয়েল মাদ্রিদ, বার্সেলোনা ক্লাবের খেলা ভালো লাগে। ইটালির জুভেন্টাস ও ন্যাপোলি ক্লাবের খেলা, জার্মান লীগে ব্রায়ান মিউনিখ ক্লাবের খেলাও পছন্দের। দক্ষিণ আমেরিকার অনেক দেশের খেলাই ভালো লাগে। উরুগুয়ে, প্যারাগুয়ে, কলাম্বিয়া, ব্রাজিল, আর্জেন্টিনার খেলা বেশি উপভোগ করি।


ফুটবল খেলায় আমি ব্রাজিল সমর্থক। ব্রাজিল ৫ বারের বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন দেশ। চাট্টিখানি কথা নয়। ব্রাজিল অনেক বড় বড় স্টার খেলোয়াড়ের জন্ম দিয়েছে। পেলে, রোবার্তো কার্লোস, জিকো, সক্রেটিস, কাকা, রোনালদিনহো, রোনালদো ব্রাজিলের তারকা খেলোয়াড় ছিলেন। যাদের নাম মানুষ আজো মনে রেখেছে। তাছাড়া ব্রাজিলের ৫ বার বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন হওয়ার রেকর্ড এখনো কোনো দেশ ভাঙতে পারেনি। ছোট ছোট পাসে ব্রাজিল চমৎকার খেলা উপহার দেয়।


আমাদের দেশে বিপুল সংখ্যক মানুষ ব্রাজিল- আর্জেন্টিনা এই দুই দলের সমর্থক। দুই দলের সমর্থকরাই পরস্পরকে প্রতিপক্ষ ভাবে। দুটো দেশই দক্ষিণ আমেরিকা মহাদেশে। অনেক সমর্থক দুটো দেশের রাজধানীর নাম জানে না!

আজকের ম্যাচে এই প্রতিপক্ষ ভাব আরো স্পষ্ট হয়েছে। আর্জেন্টিনা হারলে ব্রাজিল সমর্থকরা খুশি হয়। আবার ব্রাজিল হারলে আর্জেন্টাইন সমর্থকরা খুশি হয়। আজকেও তাই হয়েছে। ফেবুতে অনেকের পোস্ট দেখে তা-ই মনে হয়। সৌদি আরবের কাছে আর্জেন্টিনা গ্রুপ পর্বের প্রথম ম্যাচ হেরেছে। এটাকে আমি স্বাভাবিক বলে মনে করি। অনেক বড় বড় দলের এমন হয়েছে। ৫ বারের বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন ব্রাজিল একবার ৭ গোল খেয়েছিলো। 

পরের ম্যাচে আর্জেন্টিনা ঘুরে দাঁড়াবে। এমন নয় যে, আর্জেন্টিনা আউট। আর্জেন্টিনা দল হিসেবে শক্তিশালী। 

এই দুই দলকে অনেকে প্রতিপক্ষ কেনো ভাবে তা আমি বুঝতে পারি না। 

বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন দল হিসেবে আর্জেন্টিনা অনেক পিছিয়ে।

যেখানে ব্রাজিল ৫ বার বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন হয়েছে সেখানে আর্জেন্টিনা মাত্র দুই বার বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন হয়েছে। ব্যবধানটা অনেক বেশি। ইটালি ও জার্মানি চার বার বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন হয়েছে। আর্জেন্টিনার দ্বিগুণ। ফ্রান্স, উরুগুয়ে ও আর্জেন্টিনা দুইবার বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন হয়েছে যেখানে ইংল্যান্ড ও স্পেন একবার করে বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন হওয়ার গৌরব অর্জন করেছে। 


ব্রাজিল একমাত্র দেশ যে দেশ ১৯৩০ সালে শুরু হওয়া প্রতিটি বিশ্বকাপ খেলেছে। এই অনন্য রেকর্ডও আর কোনো দেশের নেই। বলা হয়ে থাকে টোটাল ফুটবলের জনক ব্রাজিল। 


আমার একটা ধারণা। আর্জেন্টাইন সমর্থকরা অনেকটা ব্যক্তি নির্ভর। ১৯৮৬ সালের মেক্সিকো বিশ্বকাপের পরই ডিয়েগো ম্যারাডোনার কারণে আর্জেন্টিনা অনেক জনপ্রিয় হয়ে যায়। বছর দুয়েক হয় ম্যারাডোনা মারা গিয়েছেন। তার মৃত্যুতে আর্জেন্টাইন সরকার তিন দিনের রাষ্ট্রীয় শোক পালন করেছে। তখন করোনার আক্রমণ তীব্র ছিলো বলে ম্যারাডোনার মৃত্যু খুব বেশি আলোচিত হয়নি। তার বিদেহী আত্মার সুখ কামনা করি। ম্যারাডোনার পর আর্জেন্টিনার সবচেয়ে জনপ্রিয় খেলোয়াড় লিওনেল মেসি। পর্টুগালের ক্রিচিয়ানো রোনালদো আর মেসির জনপ্রিয়তা প্রায় সমান। ব্যক্তি মেসির খেলা পছন্দ করে অনেকেই আর্জেন্টিনা সমর্থন করেন।  বার্সেলোনা ক্লাবের এই সাবেক তারকা খেলোয়াড় মেসির দুই দেশের (স্পেন ও আর্জেন্টিনা) নাগরিকত্ব থাকলেও স্পেন জাতীয় দল প্রতিবারই মেসিকে স্পেনের হয়ে খেলার অনুরোধ করে। কিন্তু মি.মেসি বিনীতভাবে সেই অনুরোধ ফিরিয়ে দিয়ে তিনি আর্জেন্টিনার হয়েই খেলেন।

কাতার বিশ্বকাপে আর্জেন্টিনা বিশ্ব চ্যাম্পিয়নে আরো এগিয়ে যাক এই কামনা করি। 

তবে ব্রাজিলের সমকক্ষ হতে হলে এবারসহ আরো দুবার আর্জেন্টিনাকে বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন হতে হবে। 

Karim Chowdhury 

22 November, 2022

Cumilla.

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

আমার দেখা ১৯৭৪ সালের দুর্ভিক্ষ

আমার দেখা ১৯৭৪ সালের দুর্ভিক্ষ সরকারঃ শেখ মুজিবের শাসনামল ১৯৭৪-এর দুর্ভিক্ষ বাংলাদেশে ১৯৭৪ সালের মার্চে শুরু হয়ে সেই বছরেরই ডিসেম্বরের দিকে গিয়ে শেষ হয়। এই দুর্ভিক্ষে অসংখ্য মানুষ অনাহারে মারা গিয়েছিল। এই দুর্ভিক্ষকে স্মরণকালের মধ্যে সবচেয়ে ভয়ানক হিসেবে গন্য করা হয়। ওই সময় আমি বুঝতাম। ক্লাশ ফোরে পড়তাম। আহারে ! কি যে অভাব ! অনেকের মতো আমরাও ভাত না খেয়ে রুটি খেয়েছি । তাও পরিমিত । কখনো জাউ খেয়েছি । শুকনো মরিচ পাওয়া যেতো না । কাঁচা মরিচের কেজি ছিলো ১৫০ টাকা । লবন ১২০ টাকা । আর সোনার ভরি ছিলো তখন ১৫০ টাকা । সোনা শুধু ওই সময় কম দাম ছিলো । চারদিকে অভাব । সারাদেশের মানুষের হাহাকার । কতো মানুষ না খেয়ে মারা গেছেন ! বিদেশি রিলিফ সব আওয়ামী লীগের লোকেরা চুরি করেছে । আর বেশিরভাগ রিলিফ সীমান্ত দিয়ে ভারতে চলে পাচার হয়েছিলো । তখন বর্ডার খোলা ছিলো তখন । মহিলাদের শাড়ি কাপড় ছিলো না । অনেকে মাছ ধরার জাল পরে লজ্জাস্থান ঢেকেছিলো । এসব ছবি পত্রিকায়ও ছাপা হয়েছিলো । কিন্তু আওয়ামী লীগ নেতাদের কোনো অভাব ছিলো না । বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ শেষ হওয়ার মাত্র দুই বছর তিন মাসের মাথায় ...

বোতল

বোতল মানব জীবনে বোতল অপরিহার্য । বোতল অনেক অর্থেও ব্যবহার হয় । কোনো কোনো এলাকায় আনস্মার্ট, বেয়াক্কেল প্রকৃতির লোককেও বোতল বলা হয় । ইউরোপ আমেরিকায় থাকতে আমি ডৃংক করতাম । হার্ড ডৃংক কমই খেতাম । প্রতিদিনই বিয়ার খেতাম । বিয়ার স্বাস্থ্য ভালো রাখে ও কাজ করতে এনার্জি জোগায় । পরিমিত বিয়ার খেলে কেউ মাতাল হয় না । মাঝে মাঝে বিশেষ কোনো পার্টিতে হুইস্কি খাওয়া হতো । তাও দামি ব্র্যান্ডের । জনি ওয়াকার ব্ল্যাক লেবেল, টিচার্স, পাসপোর্ট, হেনেসি, শিভাস রিগাল, জ্যাক ড্যানিয়েলস । সাকুরায়ও অনেক সময় এসব ব্র্যান্ডের হুইস্কি পাওয়া যায় না । তো দেশে আসার পরও কিছু দিন ডৃংক করেছিলাম । কুমিল্লায় সরকার অনুমোদিত একটা মদের দোকান আছে চক বাজারে । নামঃ নাদের ট্রেডিং কোং । এটা প্রায় আজ ৫০ বছর । এখানে বিদেশি ব্র্যান্ডের ডৃংক পাওয়া যায় না । দেশিয় কোম্পানি ‘কেরো এন্ড কোং’ যা দর্শনায় অবস্থিত তার তৈরি ভদকা, হুইস্কি, জিন পাওয়া যায় । আমাদের সমাজতো রক্ষনশীল । তাই কান্দিরপাড় থেকে একটা স্প্রাইট কিনে অর্ধেক খেতে খেতে চক বাজার যেতাম । নাদেরে যখন পৌঁছতাম তখন স্প্রাইটের বোতল অর্ধেক খালি হয়ে যেতো । আমি বাবুল ভাইকে স্প্...

অশ্লীল নাম

বাংলাদেশের কিছু প্রতিষ্ঠান ও স্থানের বিচিত্র বা বিকৃত অর্থের নাম যা পরিবর্তন করা উচিতঃ ১. বোদা মহিলা মহাবিদ্যালয়, বোদা, পঞ্চগড় ২. চুমাচুমি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, রাঙ্গামাটি ৩. সোনাপোতা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, খুলনা ৪. মানুষমারা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, নীলফামারি ৫. সোনাকাটা ইউনিয়ন, তালতলী, বরগুনা ৬.বড়বাল ইউনিয়ন, মিঠাপুকুর, রংপুর ৭.সোনাখাড়া ইউনিয়ন, রায়গঞ্জ, সিরাজগঞ্জ ৮. ধনকামড়া গ্রাম, ভোদামারা, দিনাজপুর ৯.গোয়াকাটা, দোহার, ঢাকা ১০. গোয়াতলা, ময়মনসিংহ ১১.লেংটার হাট, মতলব, চাঁদপুর