সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

সোনা

 সোনা

----------

সোনা নিয়ে অনেক কথা আছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের ভোল্ট থেকে সোনা চুরি হওয়া থেকে সোনা খুবই গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছিলো। বাংলাদেশে 'সোনা' বেশ জনপ্রিয়। মানুষের নাম আছে সোনা মিয়া। জায়গার নাম আছে সোনারগাঁও, সোনাগাজী, সোনাপুর।

বাচ্চাদের আদর করে 'সোনামণি' ডাকেনি এমন মানুষ পাওয়া যাবে খুব কম। মেয়েদের তো সোনা ছাড়া চলেই না। এমন মেয়ে মধ্যবিত্ত, নিম্ন মধ্যবিত্ত পরিবারে পাওয়া যাবে কিনা জানিনা যার কাছে একটাও সোনার গয়না নেই। সোনার বহুমুখী ব্যবহার। স্বর্ণ কবে থেকে সোনা হলো তা জানি না। 

অনেক এলাকায় নারী পুরুষের শরীরের বিশেষ অংশকেও সোনা বলা হয়। হয়তো সোনা দামি বলে। সোনা যেমন আদরের তেমনি তাচ্ছিল্যেরও। সোনা নিয়ে গালিও আছে। দেশের অনেক অব্যবস্থাপনায় অনেক ভদ্রলোককেও গালি দিয়ে বলতে শোনেছি, “সোনার দেশ”।

ইন্টারমিডিয়েটে পড়তাম তখন। রেইসকোর্স, কান্দিরপাড়, ঝাউতলায়ই আমার ইন্টারমিডিয়েট পর্যন্ত জীবন কেটেছে । যা জীবনের খুব গুরুত্বপূর্ণ সময়। টাটকা যৌবন। উচ্ছ্বলতায় ভরপুর। বিকেলে কান্দিরপাড়েই আড্ডা। কতো মানুষ কম ছিলো!  ১৯৮৪/৮৫ সালে কথা। আমরা কয়েক বন্ধু কান্দিরপাড় দাপিয়ে বেড়াতাম। এক বিকেলে উঠলাম পৌর মার্কেটের একেবারে খোলা ছাদে। পাশেই টাউন হল ময়দান। পুবালী চত্বর। বীরচন্দ্র মিলনায়তন। কুমিল্লা ক্লাব। জিলা স্কুল। পুবে জিলা স্কুল রোড, নিউ মার্কেট। দক্ষিণে কলেজ রোড। ভিক্টোরিয়া কলেজের ইন্টারমেডিয়েট সেকশন দেখা যায়। 

আমি, মিন্টু, হিরো, জাহাঙ্গীরই, তাহের, বাদল, খোকন, শাহ আলম। অনেক কথার মাঝে হিরু প্রস্তাব করলো, চল সবাই একটা করে গান গাই। দারুণ আবহাওয়া। আমি সঙ্গে সঙ্গেই প্রস্তাবে সায় দিলাম হাত তুলে। বিপদে পড়লো বেশি শাহ আলম। তারপর তাহের, জাহাঙ্গীর। তাহের, জাহাঙ্গীর আতিক ভাইয়ের ছোট ভাই। অন্যরা সবাই কম বেশি গান পারি। শাহ আলমের মুখটা এতোই বিষণ্ণ হলো যে, মনে হচ্ছিলো একটু পর তার ফাঁসি। বিষণ্ণ মুখ নিয়ে সে তীব্র আপত্তি জানালো তিন তলার খোলা আকাশে। এই প্রস্তাব বাতিলে সে ভিন্ন প্রস্তাব দিলো। এতে তাহের, জাহাঙ্গীরও সায় দিলো। কিন্তু সংখ্যা গরিষ্ঠের সমর্থনে হিরোর প্রস্তাব বহাল রইলো। শাহ আলম আমার বয়হুড ফ্রেন্ড। গ্রামে পুকুরের উত্তর পাড় আমাদের বাড়ি আর দক্ষিণ পাড় শাহ আলমদের বাড়ি। তারপরও শাহ আলম আপত্তি জানিয়ে বললো, 

“হে, আমি যেইটা পারমু না তোমরা হেইটাই দাও”। আমি সুযোগ পেয়ে শাহ আলমকে বললাম, আবার প্রেম করতে চাও কোন আক্কেলে? প্রেমিক সবাই হতে পারে না। প্রেম করতে গান লাগে। আর যদি তুই কখনো প্রেম করার আগ্রহ দেখাস তো তোর একদিন আর আমার যে কয়দিন লাগে।

শেষ পর্যন্ত সিদ্ধান্ত হলো, যে যা পারে তা-ই গাইবে। এক লাইন হলেও। হিরো গাইলো মান্নাদের 

“কতোদিন দেখিনি তোমায়।“ 

আমি গাইলাম অনুপ ঘোষালের  

”এনেছি আমার শত জনমের প্রেম

আঁখি জলে গাথা মালা।"

অন্যরাও এক দুই লাইন গাইলো । শাহ আলমের কাছে এসে আর গান বের হয় না। সে গাইতে অস্বীকৃতি জানালো। আমরা সকলে চাপ দিয়ে বললাম, নো, ইউ হ্যাভ টু গাইতে হবে। কান্না জড়িত গলায় শাহ আলম গাইতে লাগলো, "সোনা সোনা সোনা...'

”লোকে” বলার আগেই আমরা সবাই আকাশ ফাটানো হাসি দিলাম। সবাই শাহ আলমকে ধরলাম। দুনিয়ায় এতো গান থাকতে তুই ‘সোনা’র গান গাইলি কেনো? গানেও সোনা!!!

সোনা নিয়ে ফিচার লিখতে বলা হলে আরো বেশি লিখতাম। সোনা কথাটি সব অর্থেই বহুল ব্যবহৃত। সোনা নিয়ে নারী- পুরুষ সকলেরই কম বেশি স্মৃতি আছে। এটা স্বর্ণই হোক আর সোনাই হোক। মরহুম সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর সোনা নিয়ে বিখ্যাত উক্তি অনেকেরই মনে থাকার কথা। কথিত আন্তর্জাতিক ট্রাইব্যুনালে ফাঁসির আদেশের পর বিচারের প্রতি অনাস্থা জানিয়ে তিনি বিচারকে উদ্দেশ্য করে বলেছিলেন, 

"সোনা মিয়াকে লাল মিয়া বানাইছো। 'মিয়া' কিন্তু ঠিকই আছে শুধু সোনাডা 'লাল' হইছে। এভাবেই তোমরা বিচার করছো।" 

আরেকবার ২০০১- ২০০৫ বিএনপির সময় ওআইসি'র ( Organisation of Islamic Conference) মহাসচিব হিসেবে সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীকে সরকার মনোনয়ন দিলে তৎকালীন বিরোধী নেত্রী শেখ হাসিনা সংসদে বলেছিলেন,

" সোনা চোরচালানীকে সরকার ওআইসির মহাসচিব পদে মনোনয়ন দিয়েছে। আমরা এর তীব্র নিন্দা জানাই।" 

নির্বাচনে মি.চৌধুরী হেরে যান। জেদ্দা থেকে ঢাকায় ফিরলেই ঢাকা এয়ারপোর্টে সাংবাদিকরা হাসিনার বক্তব্য তুলে ধরে তার মন্তব্য জানতে চাইলে মরহুম চৌধুরী অশ্লীল ইঙ্গিত করে বলেছিলেন,

" শেখ হাসিনা আমার সোনা নিয়া টানাটানি করে কেনো? ওয়াজেদ মিয়ার কাছেই না যাইবো।"

Karim Chowdhury 

30 November, 2023

Cumilla

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

আমার দেখা ১৯৭৪ সালের দুর্ভিক্ষ

আমার দেখা ১৯৭৪ সালের দুর্ভিক্ষ সরকারঃ শেখ মুজিবের শাসনামল ১৯৭৪-এর দুর্ভিক্ষ বাংলাদেশে ১৯৭৪ সালের মার্চে শুরু হয়ে সেই বছরেরই ডিসেম্বরের দিকে গিয়ে শেষ হয়। এই দুর্ভিক্ষে অসংখ্য মানুষ অনাহারে মারা গিয়েছিল। এই দুর্ভিক্ষকে স্মরণকালের মধ্যে সবচেয়ে ভয়ানক হিসেবে গন্য করা হয়। ওই সময় আমি বুঝতাম। ক্লাশ ফোরে পড়তাম। আহারে ! কি যে অভাব ! অনেকের মতো আমরাও ভাত না খেয়ে রুটি খেয়েছি । তাও পরিমিত । কখনো জাউ খেয়েছি । শুকনো মরিচ পাওয়া যেতো না । কাঁচা মরিচের কেজি ছিলো ১৫০ টাকা । লবন ১২০ টাকা । আর সোনার ভরি ছিলো তখন ১৫০ টাকা । সোনা শুধু ওই সময় কম দাম ছিলো । চারদিকে অভাব । সারাদেশের মানুষের হাহাকার । কতো মানুষ না খেয়ে মারা গেছেন ! বিদেশি রিলিফ সব আওয়ামী লীগের লোকেরা চুরি করেছে । আর বেশিরভাগ রিলিফ সীমান্ত দিয়ে ভারতে চলে পাচার হয়েছিলো । তখন বর্ডার খোলা ছিলো তখন । মহিলাদের শাড়ি কাপড় ছিলো না । অনেকে মাছ ধরার জাল পরে লজ্জাস্থান ঢেকেছিলো । এসব ছবি পত্রিকায়ও ছাপা হয়েছিলো । কিন্তু আওয়ামী লীগ নেতাদের কোনো অভাব ছিলো না । বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ শেষ হওয়ার মাত্র দুই বছর তিন মাসের মাথায় ...

বোতল

বোতল মানব জীবনে বোতল অপরিহার্য । বোতল অনেক অর্থেও ব্যবহার হয় । কোনো কোনো এলাকায় আনস্মার্ট, বেয়াক্কেল প্রকৃতির লোককেও বোতল বলা হয় । ইউরোপ আমেরিকায় থাকতে আমি ডৃংক করতাম । হার্ড ডৃংক কমই খেতাম । প্রতিদিনই বিয়ার খেতাম । বিয়ার স্বাস্থ্য ভালো রাখে ও কাজ করতে এনার্জি জোগায় । পরিমিত বিয়ার খেলে কেউ মাতাল হয় না । মাঝে মাঝে বিশেষ কোনো পার্টিতে হুইস্কি খাওয়া হতো । তাও দামি ব্র্যান্ডের । জনি ওয়াকার ব্ল্যাক লেবেল, টিচার্স, পাসপোর্ট, হেনেসি, শিভাস রিগাল, জ্যাক ড্যানিয়েলস । সাকুরায়ও অনেক সময় এসব ব্র্যান্ডের হুইস্কি পাওয়া যায় না । তো দেশে আসার পরও কিছু দিন ডৃংক করেছিলাম । কুমিল্লায় সরকার অনুমোদিত একটা মদের দোকান আছে চক বাজারে । নামঃ নাদের ট্রেডিং কোং । এটা প্রায় আজ ৫০ বছর । এখানে বিদেশি ব্র্যান্ডের ডৃংক পাওয়া যায় না । দেশিয় কোম্পানি ‘কেরো এন্ড কোং’ যা দর্শনায় অবস্থিত তার তৈরি ভদকা, হুইস্কি, জিন পাওয়া যায় । আমাদের সমাজতো রক্ষনশীল । তাই কান্দিরপাড় থেকে একটা স্প্রাইট কিনে অর্ধেক খেতে খেতে চক বাজার যেতাম । নাদেরে যখন পৌঁছতাম তখন স্প্রাইটের বোতল অর্ধেক খালি হয়ে যেতো । আমি বাবুল ভাইকে স্প্...

অশ্লীল নাম

বাংলাদেশের কিছু প্রতিষ্ঠান ও স্থানের বিচিত্র বা বিকৃত অর্থের নাম যা পরিবর্তন করা উচিতঃ ১. বোদা মহিলা মহাবিদ্যালয়, বোদা, পঞ্চগড় ২. চুমাচুমি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, রাঙ্গামাটি ৩. সোনাপোতা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, খুলনা ৪. মানুষমারা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, নীলফামারি ৫. সোনাকাটা ইউনিয়ন, তালতলী, বরগুনা ৬.বড়বাল ইউনিয়ন, মিঠাপুকুর, রংপুর ৭.সোনাখাড়া ইউনিয়ন, রায়গঞ্জ, সিরাজগঞ্জ ৮. ধনকামড়া গ্রাম, ভোদামারা, দিনাজপুর ৯.গোয়াকাটা, দোহার, ঢাকা ১০. গোয়াতলা, ময়মনসিংহ ১১.লেংটার হাট, মতলব, চাঁদপুর