লাওস Laos
-------------------
কুয়ালালামপুর থেকে এয়ার এশিয়ায় উড়ে এসেছিলাম লাওস। দশ বছর আগে। ২০১২ সালে। আড়াই ঘন্টার ফ্লাইট। লাওস আমাদের ঘরের কাছে। সাবেক বার্মা-বর্তমান মায়ানমারের প্রতিবেশি দেশ লাওস। আয়তন ২,৩৬,৮০০ বর্গ কিলোমিটার। বাংলাদেশের প্রায় দ্বিগুণ। লোক সংখ্যা মাত্র ৬০ লাখ। এক দলীয় সমাজতান্ত্রিক সরকার পরিচালিত গরিব দেশ। অফিসিয়াল নাম 'লাও পিপলস ডেমোক্রেটিক রিপাবলিক' ( LPDR)। রাজধানী ভিয়েনতিয়েন ( Vientiane)। মেকং (Mekong) নদীর পাড়ে।
ভুবেস্টিত দেশ লাওস। সমুদ্র নেই। মায়ানমার, থাইল্যান্ড, ভিয়েতনাম, কম্বোডিয়া আর চীন এর প্রতিবেশি। থাইল্যান্ডের মতোই লাওসের মেয়েরা। ফ্রি গোয়িং। ভিয়েনতিয়েন এয়ারপোর্টে ল্যান্ড করে বিমান থেকে বের হয়ে দেখি একটা কাঠের দোতলা ঘরই এয়ারপোর্ট। বিমান থেকে নামার জন্য বোর্ডিং বৃজের কোনো ব্যবস্থা নেই। হেঁটে হেঁটে ইমিগ্রেশনে যেতে হয়েছে। পুরো এয়ারপোর্টে তিনটা ছোট বিমান দেখেছিলাম। ইমিগ্রেশন কিন্তু খুব কড়াকড়ি। কি জানি বাংলাদেশি পাসপোর্ট দেখে হয়তো। মহিলা ইমিগ্রেশন অফিসারটি আমার পাসপোর্ট খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখছিলো। আমার মেশিন রিডেবল পাসপোর্ট। সঙ্গের বাকি তিনটা পুরনো পাসপোর্টে জাপান, জার্মানি, অস্টৃয়া, নিউজিল্যান্ড, ইংল্যান্ড, হংকং, চায়না, থাইল্যান্ড, ইন্ডিয়া, বেলজিয়াম, নেদারল্যান্ডস, চেক রিপবলিক, সুইজারল্যান্ড, আমেরিকাসহ আরো অনেক দেশের ভিসা ছিলো। কুয়ালালামপুরের লাওস এমব্যাসি থেকে ভিসা নিয়ে এসেছি।
মনে অপরাধবোধ না থাকলে ইমিগ্রেশনের সঙ্গে তর্ক করা যায়। দেরি দেখে মহিলাকে কিছুটা রাগ করে ইংরেজিতে বললাম, তোমার চোখে কি কোন সমস্যা আছে? এতো কি দেখছো? আমার ইংরেজি শুনে মহিলা কিছুটা থতমত খেয়ে বললো, তোমার কাছে টাকা আছে? ইমিগ্রেশন অফিসার ভ্রমণকারীর আর্থিক স্বচ্ছলতা চাইতে পারে। আমার পকেটে তখন প্রায় ৯ হাজার ডলার। ৫ হাজার ডলার ট্রেভেলার্স চেক আর ৪ হাজার ডলার ক্যাশ। সবগুলো ডলার তার কাউটারের সামনে রাখলাম। এতো টাকা দেখে মুহূর্তেই তার চেহারা বদলে গেলো। এই টাকায় এক বছর লাওসে রাজার মতো থাকা যায়। ১৫ থেকে ২০ ডলারে উন্নতমানের হোটেল পাওয়া যায়। ৫ ডলারে কম দামি হোটেল। পেয়িং গেস্ট থাকলে মাসে সর্বোচ্চ ৫০ ডলার দিলেই যথেষ্ট। মহিলা অফিসারটি আর কোনো কথা না বলে পাসপোর্টে এন্টৃ সীল মেরে দিয়ে বললো, স্যাংক ইউ, স্যাংক ইউ। মানে থ্যাংক ইউ, থ্যাংক ইউ। এরা ইংরেজি মোটেও জানে না। এমনকি ইমিগ্রেশন অফিসাররাও।
এয়ারপোর্টেই ১০০ ডলার চেইঞ্জ করে পেলাম ২ লাখ ৫০ হাজার কিপ। লাওসের মুদ্রার নাম কিপ (Kip)। ভাষা লাও। ১০/১৫ হাজার ডলার দিয়ে লাওসে ভালো বিজনেস করা যায়। মেকং নদীর পাড়ে একটা হোটেলে উঠেছিলাম।
দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ায় মেকং নদী খুব বিখ্যাত নদী। এর মুখ সাউথ চায়না সী তে। ভিয়েতনামের রাজধানী হো চি মিন সিটি, কম্বোডিয়ার রাজধানী নম পেন ( Phnom Penh), লাওস, মায়ানমার, থাইল্যান্ড ও চায়না ঘুরেছে এই নদী। এর দৈর্ঘ্য ৪৩৫০ কিলোমিটার। বিশ্বে মেকং নদী ১২তম বৃহৎ নদী।
হোটেলে উঠার কিছুক্ষণ পরই কম বয়সি হোটেলের একটা মেয়ে এসে আকার ইঙ্গিতে জানতে চাইলো, আমার মারিজুয়ানা লাগবে কিনা। জানতে চাইলাম, তোমাদের দেশে মারিজুয়ানা পাওয়া যায়? মেয়েটি অবাক হয়ে বললো, আমাদের দেশে টুরিস্ট আসে শুধু মারিজুয়ানা খেতে। বললাম, না। আমার লাগবে না। আমার দেশেও টনে টনে পাওয়া যায়। আমি তোমার দেশের বিয়ার খাবো। গাঁজা খাবো না। ছাত্র জীবনে বইতে পড়েছিলাম, ‘গোল্ডেন ট্রাইএঙ্গেল’ (যা মায়ানমার, লাওস এবং কম্বোডিয়ার বর্ডারে অবস্থিত।) মাদক দ্রবের জন্য বিখ্যাত জায়গা। বিশ্বের বেশিরভাগ মাদক রফতানি হয় এই 'গোল্ডেন ট্রাইএঙ্গেল' থেকে।
লাওসের একটা মাছ খুব বিখ্যাত। সুস্বাদু। প্রায় ১২ ইঞ্চি লম্বা মাছটি। দেখতে আমাদের কাতল মাছের মতো। শুনেছি, শুধু মেকং নদীতেই এই মাছটি পাওয়া যায়। তাই এর নাম ‘মেকং ফিস’। পাঁচদিন শুধু এই মাছই খেয়েছি।
কয়েকটি ছবি। একটি লাওস অভিমুখী এয়ার এশিয়ার বিমান থেকে নেয়া। একটি ভিয়েনতিয়েনে ল্যান্ডিংযের পূর্ব মুহূর্তে। একটি লাওসের মেয়েরা। আর মেকং নদীর পাড়ে আমি।
Karim Chowdhury
25 November, 2022
Cumilla
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন