সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

গোলামের পুত

 গোলামের পুত

২০১৩ সালে মেন্টালি খুব ডিস্টার্বড ছিলাম। কনজুগাল লাইফে বিপর্যয়সহ সামাজিক, ব্যক্তিগত অনেক কারণে। ওই সময় আমি নিজেকে সম্পূর্ণ আলাদা করে ফেলি। কারো সঙ্গেই যোগাযোগ রাখিনি। তখন কুমিল্লা সিএমএইচ-এর সামান্য দূরে একটা চার তলা বাসার দোতলায় ছিলাম কয়েকমাস। বাসায় কেয়ারটেকার থাকলেও সে সকাল ছয়টায় মূল কলাপসিবল গেট খুলে দেয়। যে কেউ আসা-যাওয়া করতে পারে ওই চারতলা বিল্ডিংয়ে। আমি তখন ঘুমাই রাতের ২টা ৩টার সময়। উঠি সকাল দশটা এগারোটায়।

একদিন সকাল সাতটার সময়  ডোর বেল বাজলো। আমার চোখে দুনিয়ার ঘুম। ২টা স্লিপিং পিল খেয়ে ঘুমিয়েছি রাত ৩টায়। আমার রুমে কেউ আসে না। পরিচিতজন, আত্নীয়স্বজন জানেই না আমি কোথায় আছি। মহাবিরক্তি নিয়ে উঠে দরজাটা খুললাম। দেখি ৩৫/৪০ বছরের এক ভিখারিনী হাত পেতে আমার কাছে ভিক্ষা চাইলো। তাৎক্ষণিক আমার মাথায় রক্ত উঠে গেল। উত্তেজনায় আমি হিতাহিত জ্ঞান হারিয়ে ফেলি। একজন অশিক্ষিত, অভদ্র, অসভ্য মানুষ হয়ে গেলাম মুহুর্তেই। দরজার পাশে দুই হাত লম্বা ছোট একটা কাঠের চারকোণা লাঠি ছিলো। লাঠিটা হাতে নিয়ে আমি হুংকার দিয়ে বললাম, 

"চো*দা*নি*র ঝি আইজ ভিক্ষা তোর ওই জায়গা দিয়ে দিবো। খাড়া।" আমার হাতে লাঠি আর অশ্লীল কথা শুনে মহিলা সিঁড়ি দিয়ে দৌঁড়ে নিচে নামতে লাগলো। আমিও তার পিছে পিছে নামছি। বাসা থেকে বের হয়েও তাকে দৌঁড়াতে লাগলাম। মহিলা দৌঁড়ায় আর মাঝে মাঝে পেছনে তাঁকিয়ে হাঁফিয়ে হাঁফিয়ে আমাকে গালি দিয়ে বলে, " মা গো, গোলামের পুত করে কী?"

আমি বলি, 'খাড়া। ভিক্ষা নিবি না? আইজ তোরে ভিক্ষা দিমুই'। মহিলা দৌঁড়াতে দৌঁড়াতে বলে...."আরে গোলামের পুত আমি জীবনেও আর এই বাসাত ভিক্ষার লাইগ্যা আইতাম না।"

কুমিল্লায় গ্রামের অল্প শিক্ষিত মহিলারা 'গোলামের পুত' বলে একটা গালি দেয়। ফকিন্নিও আমাকে 'গোলামের পুত' বলে গালি দিয়েছে।

পরে ভেবে আমি অনুতপ্ত হয়েছি। মনে মনে মহিলাটাকে খোঁজেছি। পাইনি। পেলে তাকে ৫ হাজার টাকা দিতাম। হয়তো আমার দৌঁডানি খেয়ে সে এই এলাকাই ছেড়ে দিয়েছে।

এই ঘটনা আমার মনে দাগ কেটেছে। 

এখন ভাবি, মহিলার জীবনে জানি এমন ঘটনা আর ঘটেছে কিনা। সাজ সকালে ভিক্ষা চাইতে এসে এমন দৌঁড়ানি মনে হয় মহিলার মনেও দাগ কেটে আছে। তবে একটা ভালো কাজ হয়েছে। ভদ্রমহিলা জীবনে আর কারো বাসায় ডোর বেল বাজিয়ে ভিক্ষা চাইবে না। তার কেবলই মনে হবে ডোর বেল বাজালেই লাঠি হাতে কেউ দৌঁড়ানি দেবে।আ

মার এই উত্তেজনাকে মেডিকেল সাইন্সে বলে 'অথেরোস ক্লোরোসিস।

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

আমার দেখা ১৯৭৪ সালের দুর্ভিক্ষ

আমার দেখা ১৯৭৪ সালের দুর্ভিক্ষ সরকারঃ শেখ মুজিবের শাসনামল ১৯৭৪-এর দুর্ভিক্ষ বাংলাদেশে ১৯৭৪ সালের মার্চে শুরু হয়ে সেই বছরেরই ডিসেম্বরের দিকে গিয়ে শেষ হয়। এই দুর্ভিক্ষে অসংখ্য মানুষ অনাহারে মারা গিয়েছিল। এই দুর্ভিক্ষকে স্মরণকালের মধ্যে সবচেয়ে ভয়ানক হিসেবে গন্য করা হয়। ওই সময় আমি বুঝতাম। ক্লাশ ফোরে পড়তাম। আহারে ! কি যে অভাব ! অনেকের মতো আমরাও ভাত না খেয়ে রুটি খেয়েছি । তাও পরিমিত । কখনো জাউ খেয়েছি । শুকনো মরিচ পাওয়া যেতো না । কাঁচা মরিচের কেজি ছিলো ১৫০ টাকা । লবন ১২০ টাকা । আর সোনার ভরি ছিলো তখন ১৫০ টাকা । সোনা শুধু ওই সময় কম দাম ছিলো । চারদিকে অভাব । সারাদেশের মানুষের হাহাকার । কতো মানুষ না খেয়ে মারা গেছেন ! বিদেশি রিলিফ সব আওয়ামী লীগের লোকেরা চুরি করেছে । আর বেশিরভাগ রিলিফ সীমান্ত দিয়ে ভারতে চলে পাচার হয়েছিলো । তখন বর্ডার খোলা ছিলো তখন । মহিলাদের শাড়ি কাপড় ছিলো না । অনেকে মাছ ধরার জাল পরে লজ্জাস্থান ঢেকেছিলো । এসব ছবি পত্রিকায়ও ছাপা হয়েছিলো । কিন্তু আওয়ামী লীগ নেতাদের কোনো অভাব ছিলো না । বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ শেষ হওয়ার মাত্র দুই বছর তিন মাসের মাথায় ...

বোতল

বোতল মানব জীবনে বোতল অপরিহার্য । বোতল অনেক অর্থেও ব্যবহার হয় । কোনো কোনো এলাকায় আনস্মার্ট, বেয়াক্কেল প্রকৃতির লোককেও বোতল বলা হয় । ইউরোপ আমেরিকায় থাকতে আমি ডৃংক করতাম । হার্ড ডৃংক কমই খেতাম । প্রতিদিনই বিয়ার খেতাম । বিয়ার স্বাস্থ্য ভালো রাখে ও কাজ করতে এনার্জি জোগায় । পরিমিত বিয়ার খেলে কেউ মাতাল হয় না । মাঝে মাঝে বিশেষ কোনো পার্টিতে হুইস্কি খাওয়া হতো । তাও দামি ব্র্যান্ডের । জনি ওয়াকার ব্ল্যাক লেবেল, টিচার্স, পাসপোর্ট, হেনেসি, শিভাস রিগাল, জ্যাক ড্যানিয়েলস । সাকুরায়ও অনেক সময় এসব ব্র্যান্ডের হুইস্কি পাওয়া যায় না । তো দেশে আসার পরও কিছু দিন ডৃংক করেছিলাম । কুমিল্লায় সরকার অনুমোদিত একটা মদের দোকান আছে চক বাজারে । নামঃ নাদের ট্রেডিং কোং । এটা প্রায় আজ ৫০ বছর । এখানে বিদেশি ব্র্যান্ডের ডৃংক পাওয়া যায় না । দেশিয় কোম্পানি ‘কেরো এন্ড কোং’ যা দর্শনায় অবস্থিত তার তৈরি ভদকা, হুইস্কি, জিন পাওয়া যায় । আমাদের সমাজতো রক্ষনশীল । তাই কান্দিরপাড় থেকে একটা স্প্রাইট কিনে অর্ধেক খেতে খেতে চক বাজার যেতাম । নাদেরে যখন পৌঁছতাম তখন স্প্রাইটের বোতল অর্ধেক খালি হয়ে যেতো । আমি বাবুল ভাইকে স্প্...

ফেবুতে মেয়েদের পোস্ট

ফেবুতে মেয়েদের পোস্ট সকালে ঘুম ভেঙে দেখি আট টা বাজে । শরীরটাও বেশি ভালো লাগছে না । আবার ঘুমাল াম । ১১টায় উঠলাম । ২ মগ চা খেলাম ( বাজারের হিসেবে ৮ কাপ হবে)। সবাই জানেন আমি স্মোক করি । চেইন স্মোকার । কম্পিউটার খোঁচাখুঁচি করে নিজে নিজেই ঠিক করলাম । প্রায় দুই ঘন্টা । আমি থাকি চার তলায় । দুপুর ১টা বাজে । খেতেও ইচ্ছে করছে না কিছু । তখনো মুখ ধুই নি । কম্পিউটারে খোঁচাখোঁচি করতে গিয়ে দেখি এক মেয়ে তার পা’য়ের একটা ছবি আপলোড করেছে । দেখলাম এই পা মানে ঠ্যাং এর ছবিতে লাইক পড়েছে ৯৪৭ টা । কমেন্ট অসংখ্য । ‘কতো সুন্দর এই পা । না জানি তুমি কতো সুন্দর । পা তো নয় যেন একটা গোলাপ ফুল’ । এ জাতীয় অনেক কমেন্ট । আমি পোষ্ট টা দেখে কিছুটা অবাক হলাম । একটা ঠ্যাং এর এতো কদর ! প্রায়ই লক্ষ্য করি, মেয়েরা যখনি কিছু আপলোড করে সেটা তাদের পায়ের ছবিই হোক,হাতের ছবিই হোক আর নাকের ছবিই হোক বা এক চোখের ছবিই হোক সে সব ছবিতে অগনিত লাইক আর কমেন্ট । মেয়ে বন্ধুদের ছোট করার জন্য বলছি না, ফেবুতে প্রায়ই দেখি মেয়েরা কোনো ছবি বা দু এক লাইন হাবিজাবি লিখলে লাইক আর কমেন্টের বন্যা বয়ে যায় । অনেক মেয়েরা শখ করে পিঠা, ...