আশে পাশে অনেকেই টাকার গরমে হুটহাট একাধিকবার ওমরা করে ফেলছে। ইহরামের পোষাকপরা ছবিতে অনেকের ফেইসবুক ওয়াল ঝলমল করছে। শুধু নুর আর নুর। কাউকে থাইল্যান্ডের নাইট ক্লাবের গল্পের সঙ্গে ওমরাহ করার গল্প বলতেও শোনা যাচ্ছে। মূহুর্তে ব্যাংকক এর বার থেকে মক্কা গিয়ে পাপমুক্তি নিয়ে আবার পাতায়া চলে যাচ্ছে। বিভিন্ন তালের লোক বিভিন্ন তালে ওমরাহ করছে। টাকার ইবাদতে ঘুরাঘুরির মজাও কম নয়। সবচেয়ে দুশ্চরিত্রবান লোকটিও এখন একাধিকবার ওমরায় যায়, হজ্বে যায় তবে চরিত্র পাল্টায়না। ফিরে এসেই নামের আগে হাজি বা আলহাজ্ব লাগায়।
ওমরাহ অতিরিক্ত কর্তব্য আর যাকাত/দান-সদকা ফরয কিন্তু কয়জন মুসলিমই এই গুরুত্ব দেয় যে নিজ পরিবার, আত্মীয় বা সমাজের দারিদ্রতা বিমোচনের পরে ওমরা করবে? চারিদিকে লোক দেখানো ইবাদতের হিড়িক। লোক দেখানো দান-খয়রাত আর মানব সেবার ফাঁপা বেলুন ওড়ানো। প্রচারণাহীন দানে এই দেশের লোক খুব একটা মজা পায় না।
এদিকে নায়িকারা স্বল্প পোষাকে নাচ বিক্রি করে ওমরায় যাচ্ছে। ব্যবসায়ীরা নিত্যপন্যের বাজারে আগুন লাগিয়ে কাবা শরীফে পৌঁছে মানুষের জন্য দোয়া করছে, টাকা পাচারকারী দেশকে পঙ্গু করে ওমরায় গিয়ে কালো টাকা সাদা করছে, রাজনীতিবিদরা শোষণের পাপমুক্তির জন্য সৌদি রাজপরিবারের বিশেষ অতিথি হয়ে একেবারে হেরেমের ভেতরে ঢুকে নামাজ পড়ছে।
ইবাদত আমরা টাকায় কিনি আর সৌদি আরব তা বিক্রি করে, অদ্ভুত বটে! প্রতি বছর হজ্ব ও ওমরা বাবদ সৌদি আরব প্রায় ১২ বিলিয়ন আমেরিকান ডলার রাজস্ব আহরণ করে যা তাদের অপরিশোধিত তেল বিক্রির আয়ের চেয়েও বেশী। কোনো কোনো রিপোর্ট অনুসারে এই অংক সৌদির মোট রাজস্বের ৩০%। মানে কারো ইবাদত, কারো আয়ের পথ।
যাই হোক যেকোন ভালো কাজ মানুষকে করতে হবে, মানুষের জন্য কাজ করতে হবে, তবে সবচেয়ে জরুরী নিজেকে মানবিক গুণাবলী সম্পন্ন মানুষ হতে হবে। মানুষ হওয়ার যথেষ্ট উপাদান কুরআনে আছে। চারিদিকে হাজী সাহেবের অভাব নেই কিন্তু মানুষের অভাব প্রকট। দেখা যায় রাসুলের রওজায় যাওয়ার জন্য ব্যাকুল ও পেরেশান আশেকে রাসুলের হয়তো ন্যুন্যতম মনুষ্যত্ববোধও নেই। অনেকেই আল্লাহর অনেক আদেশ নিষেধের ধার ধারেনা কিন্তু হজ্ব বা ওমরা করে নিজের মতো করে বেগুণাহ মাসুম হয়ে যায়। কিন্তু মুসলিম না হয়ে হাজী হয়ে কী লাভ?
প্রতারণামমূলক ধার্মিকতা, নাস্তিকতার চেয়ে ভয়াবহ!
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন