সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

রানু

 রানু

------

১৯৯৬ সাল। নিউ ইয়র্কে একটা অপ্রত্যাশিত চিঠি পেয়েছিলাম। আমি থাকতাম নিউ ইয়র্ক মূল সিটিতে। থার্ড এভিনিউতে। জাতিসংঘ সদর দফতর আর বেলভিউ হসপিটালের মাঝামাঝি। যাকে স্থানীয় ভাষায় ম্যানহাটন(Manhattan)বলে। আমার ঠিকানা ছিলো...

Karim Chowdhury 

444 3rd Avenue 

Apt# 09

NY 10016

USA

এয়ারমেইল খামের বাঁ দিকে প্রেরকের নাম লেখা;

রানু 

চন্দ্রঘোনা 

বাংলাদেশ 

আমি খুবই অবাক হয়েছিলাম। কেননা আমার চোদ্দগোষ্ঠীর কেউ কোনো কালেই চন্দ্রঘোনা ছিলো না। নিজের আত্নীয় হোক আর অপরিচিত কেউ হোক, কারো চিঠি পেলে আমি সঙ্গে সঙ্গে চিঠি খুলতাম না। আমেরিকায় আমাদের অন্যতম একটা কাজ ছিলো, প্রতিদিন কাজ শেষে বাসায় ফিরে রুমে ঢুকার আগেই লেটার বক্স খোলা। ওই দেশের বিভিন্ন কোম্পানি থেকে চিঠি আসে। ক্রেডিট কার্ডের বিল আসে। আমি আবার টাইম, নিউজউইক- এর গ্রাহক। তাই ম্যাগাজিন আসে।

লেটার বক্স থেকে চিঠি নিয়ে আগে ১০/১৫ মিনিট ভাবতাম। কি হতে পারে চিঠির ভেতরের বিষয় বস্তু। ইউরোপ, আমেরিকায় যারা থাকেন তাদের বেশিরভাগ চিঠিতেই টাকা পাঠানোর কথা থাকে। আমি আবার ব্যাচেলর। খুব চিন্তায় পড়ে গিয়েছিলাম ওই চিঠি পেয়ে। কে এই রানু? এসব ভাবতে ভাবতে আর বিয়ার খেতে খেতে চিঠিটা খুললাম। একটা মেয়ে লিখেছে সেই চিঠি। তার চিঠির প্রথম লাইনটি আজো মনে আছে।

“প্রিয় করিম,

Friendship is much more tragic than love because it lasts longer. Oscar Wilde."

চিঠির বিষয় বস্তু; যায়যায়দিন ম্যাগাজিনে আমার লেখা পড়ে তার খুব ভালো লেগেছে। তাই আমাকে চিঠি লিখেছে। আমার লেখা সে খুবই পছন্দ করে। চিঠিতে সে আমার বন্ধু হবার আকুতি জানিয়েছে। এখন যেমন ফেইসবুক, ম্যাসেঞ্জারে বন্ধু হয় অনেকটা তেমন। তখন মোবাইল ফোন, ফেইসবুক, ইন্সটাগ্রাম, ইউটিউব কিছুই ছিলো না। ১৯৯৬ সালের কথা। বিল ক্লিনটন তখন আমেরিকার প্রেসিডেন্ট। চিঠি, ল্যান্ডফোন আর ফ্যাক্সই ছিলো যোগাযোগের মাধ্যম। তাও ল্যান্ডফোন বেশিরভাগ মানুষের বাসায় ছিলো না। আমাদের ছাত্রজীবনে পত্রমিতালি করেও ছেলেমেয়ের বন্ধুত্ব হতো। দৈনিক ও সাপ্তাহিক পত্রিকায় বন্ধু চেয়ে অনেক ছেলে ও মেয়ে ঠিকানা দিতো। চিঠি লেখার মাধ্যমে বন্ধুত্ব হতো। যাকে আমরা পত্রমিতালি বলতাম।

আমি ভদ্রভাবে তাকে ছোট করে উত্তর দিলাম এবং জানতে চাইলাম, আমার ঠিকানা সে কোথায় পেয়েছে? ফিরতি চিঠিতে সে জানালো, যায়যায়দিন ম্যাগাজিনে আমার লেখা পড়ে সে চন্দ্রঘোনা থেকে যায়যায়দিন সম্পাদক মি.শফিক রেহমানকে চিঠি লিখে আমার ঠিকানা চেয়েছে। তখন যায়যায়দিনের গবেষণা সহকারী মি.সজীব ওনাসিস তাকে আমার ঠিকানা পাঠিয়েছে। সজীবের নিজ হাতে লেখা আমার ঠিকানাটাও সে চিঠির সঙ্গে জুড়ে দিয়েছিলো বিশ্বাস যোগ্যতার জন্য। তার সাহস দেখে আমি অবাক হয়েছি।

সিনিয়ররা জানেন যায়যায়দিন খুবই জনপ্রিয় ও পাঠকপ্রিয় ম্যাগাজিন ছিলো। 

এরপর থেকে প্রতি সপ্তাহে রানু আমাকে একটা চিঠি লিখবেই। চিঠিতে তার পারিবারিক অবস্থার বর্ননা  দিয়েছিলো। তারা পিঠাপিঠি দু’বোন। ভাই নেই। সে ছোট। ওই সময়ই সে গ্র্যাজুয়েশন করেছিলো। তার অফিসিয়াল নাম ফাতেমা ইয়াসমিন রানু। তার বড় বোনের নাম নাসরিন ফাতেমা মারজান। বাবা চন্দ্রঘোনা পেপার মিলে চাকরি করেন। ২০০০ সালে রানুর বাবা মারা যান। তাও চিঠিতে সে আমাকে জানিয়েছিলো। আমাকে সে ছবিও পাঠিয়েছিলো। শ্যামলা গায়ের রঙ। মিষ্টি চেহারা। স্লিম ফিগার। অনেক পরে সে অনুরোধ করে তাকে আমার ছবি পাঠাতে। তার অনুরোধে আমি কিছু  ছবি পাঠিয়েছিলাম। এই ছবি পাঠানোই সমস্যা হলো। আমি দেখতে সুন্দর ও স্মার্ট ছিলাম। 

ছবি দেখে মেয়েটি আমাকে ভালোবেসে ফেলে। লেখার ফ্যান তো আগেই। ম্যাগাজিনে আমার লেখা পড়ে সে ধরেই নিয়েছে আমি অবিবাহিত। এরপর থেকে তার চিঠি লেখার ধরন বদলে যায়। তার চিঠি হয়ে যায় অনেকটা প্রেমের চিঠি। তার চিঠির ভাষাশৈলী অত্যন্ত চমৎকার ছিলো। রানু খুব বিনয়ী ও মার্জিত ভাষায় চিঠি লিখতে পারতো। আমি কোন জেলার সে জানতো না তখনো। এক চিঠিতে সে লিখলো,

”আমার গ্রামের বাড়ি ফেনি জেলার দাগনভুঁইয়া উপজেলায়। তোমার গ্রামের বাড়ি কোন জেলায় করিম?” আগে নিজের বাড়ির পরিচয় দিয়ে আমার বাড়ি কোথায় জানতে চেয়েছে। চমৎকার ভদ্রতা! 

এখন ওয়াশিংটন ডিসিতে আছেন শিরিন আপা Shireen Afzal। এই আপার বাসায় আমার নিয়মিত যাওয়া আসা ছিলো। আপা থাকতেন কুইন্সে। আপাও জানতেন রানুর কথা। কতো ভাত খেয়েছি আপার বাসায়। শিরিন আপা তখন নিউ ইয়র্ক ছিলেন। আমার প্যান্ট শার্টের বুতাম ছুটে গেলে আপার কাছে নিয়ে যেতাম। আপা লাগিয়ে দিতেন। দুষ্টুমি করে বলতেন, দেশে গেলে রানুই জামাকাপড় ঠিক করে রাখবে। আপার সঙ্গে এখনো যোগাযোগ আছে। আপাকে নিয়ে নিউ ইয়র্ক থেকে “ফোনবোন” গল্পও লিখেছিলাম  যায়যায়দিনে। আপার বাড়ি বরিশাল। আপার হাসব্যান্ড আফজাল ভাই ও একমাত্র সন্তান চোদ্দ বছর বয়সী ছেলে শাফিন-এর সঙ্গেও আমার ঘনিষ্ঠতা ছিলো। শাফিন আমাকে মামা ডাকতো। এক জীবনে কতো মানুষের সঙ্গে পরিচয় ছিলো! 

আর জানতেন জ্যাকসন হাইটসের ৭৩ স্টৃটে অবস্থিত “অনন্যা” লাইব্রেরির মালিক শহিদ ভাই। রোববার সারাদিন আমার আড্ডা ছিলো ওই লাইব্রেরিতে। 

১৯৯৬ সাল থেকে ২০০৩ সাল এই আট বছর প্রতি সপ্তাহে রানু আমাকে একটা চিঠি লিখতো। প্রতি ঈদে রানু পার্সেল করে আমার জন্য বাংলাদেশ থেকে পাঞ্জাবি, টুপি, কলম পাঠাতো। চিঠিতে লিখে দিতো, পরের লেখাটা যেনো ওর পাঠানো কলম দিয়ে লিখি। 

আমি নিষেধ করলেও সে শুনতো না। একদিন আমি লিখলাম, তোমার কিছু প্রয়োজন হলে আমাকে জানিও। উত্তরে সে লিখলো, "আমার কিছুই লাগবে না  করিম। আমি বরাবরই স্বচ্ছল পরিবারের সন্তান।"

এক পর্যায়ে সে আমাকে বিয়ে করার আগ্রহ জানালো। আমি তাকে লিখলাম, আমি বয়সে তোমার বেশ বড়। এমন অসম বিয়ে আমার পছন্দ নয়। তাছাড়া আমি কবে দেশে ফিরি তার কোনো ঠিক নেই। আর আমি কিছুটা উদাসীন প্রকৃতির খেয়ালি চরিত্রের পাগল টাইপ মানুষ।

উত্তরে সে লিখলো, "পুরুষের আবার বয়স কিসের? আমি তোমাকে আমার করে চাই। তুমি দেশে চলে এসো। তোমার কিচ্ছু করতে হবে না। শুধু লেখালেখি করবে। আমার সঙ্গে থাকবে। আমি শুধু তোমাকে ভালোবাসবো। আমিই তোমাকে খাওয়াবো,পরাবো। আমাদের যে এসেট আছে তাতে তোমার কোনো অভাব হবে না। আর লেখকরা একটু পাগল টাইপ হয়। আমি জানি। আমি এমন পাগলই ভালোবাসি।" 

১৯৯৯ সালের শেষ দিকে আমি ফ্লোরিডায় মুভ করি। আগের মতোই সে আমাকে চিঠি লিখে। ফ্লোরিডায় আমার বন্ধু কবির Chowdhury Erfanul Kabir,  ইমতিয়াজ, নোয়াখালীর দিদার ভুঁইয়া, বাবু, ময়মনসিংয়ের লিটু ভাই Leetu Zaman  লিটু ভাইয়ের ওয়াইফ বহ্নি ভাবীও জানতেন। বহ্নি ভাবী খুব গল্প উপন্যাস পড়তেন। আমার কাছ থেকে যায়যায়দিন নিয়ে আমার সব লেখা পড়তেন। রুচিশীল, মার্জিত, সংস্কৃতিমনা, শান্ত, ভদ্রমহিলা বহ্নি ভাবী। আমি বয়সে বড় হলেও আমাকে আদর করতেন। মন্টু ভাই ডাকতেন। সিলেটের খাইরুল, দিনাজপুরের অমিয়, আমার ছাত্রজীবনের বন্ধু সোহেল সবাই এই কাহিনী জানতো। রানুর চিঠি গেলেই আমি সবাইকে পড়ে শুনাতাম।

একদিন অমিয় বললো, আচ্ছা মন্টু ভাই, রানুকে বিয়ে করার পর যদি দেখেন রাতে ঘুমালে রানুর লোল পরে (মানে কাত হয়ে ঘুমালে মুখ দিয়ে লালা পরে) তখন আপনি কি করবেন? এসব আরো অনেক দুষ্টুমি কথা বলতো বন্ধুরা। 

দিদার, বাবু নোয়াখালীর বলে তাদের বলতাম, দেখো, আমি কিন্তু গ্রেটার নোয়াখালীর জামাই হতে যাচ্ছি। দেখলেই সালাম দিবা। ডোন্ট ডু বেয়াদবি উইথ মি। এভাবে চিঠি লেখালেখি চলতেই থাকলো। তবে আমি কখনোই রানুকে লাভ ইউ বলিনি। তাকে ছোট মনে করেই আমি আবেগ নিয়ন্ত্রণ করে চিঠি লিখতাম। লেখকরা পাঠককে যেভাবে চিঠি লিখে সেভাবেই। উত্তর না দিয়ে উপায় ছিলো না। কারণ সে প্রতি সপ্তাহে চিঠি লিখবেই। আর আমারো লুকিয়ে থাকার পরিবেশ ছিলো না। কারণ ম্যাগাজিনে আমার লেখা প্রকাশিত হতো এক দুই সপ্তাহ পর পর। এভাবে আট বছর গেলো।

২০০৪ সালের জানুয়ারি মাসের ২৮ তারিখ আমি দেশে ফিরে আসি। আমার বাবা মা তখন জীবিত নেই। তাই দেশে এসে আমি আমার ছোট আপা ফরিদা'র শহরের  গাংচর ‘আনোয়ার লজ’ বাসায় উঠি। আমার তালতো ভাই সবগুলোই 'পাগল'। আপাকে বললাম, তালতো ইকবাল ভাইকে বললাম রানুর কথা। তালতো ভাই ইকবাল আমার বড়। বেশ কয়েকবছর হয় মেয়ে নুসরাতের বাসা ক্যালিফোর্নিয়ায় আছেন ভাবীসহ। তিনি বললেন, যাও না একবার দেখে আসো। আমেরিকা ফেরত পাত্র। এই সুযোগে শত শত মেয়ে তুমি দেখতে পারবা। হেলায় সুযোগ নষ্ট করবা না। বিয়েতো করবা একটাই। 

চট্টগ্রাম আমার প্রিয় জেলা। আমি যা কিছু পছন্দ করি তার সবই আছে চট্টগ্রামে। পাহাড়, নদী, লেক, সমুদ্র। চট্টগ্রামের রান্না গরুর মাংস আমার বিশেষ প্রিয়। ঝাল বেশি আমি পছন্দ করি। জীবনে প্রথম চাপাতি আর ঝাল গরুর মাংস খেয়েছি চট্টগ্রামের এক হোটেলে। ছাত্রজীবনে। নুপুর, জলসা সিনেমা হলে অনেক ছবি দেখেছি। নিউমার্কেট ছিলো অন্যতম আকর্ষণীয় স্থান। পলো গ্রাউন্ডে রেলওয়ে কলোনিতে, জিইসির মোড়ে অনেক আড্ডা মেরেছি। কাপ্তাই লেকে গেলে প্রাণ জুড়িয়ে যেতো। রাঙামাটির কথা বলাই বাহুল্য। ফয়'স লেক তো দ্রষ্টব্যই। পতেঙ্গা বিচে গিয়েছি অসংখ্যবার। বন্ধুরা মিলে শাটল ট্রেনে ভার্সিটিতে অনেক গিয়েছি। শাহজালাল, শাহপরান হলে অনেক থেকেছি। এসবই ইন্টারমিডিয়েট  লাইফের কথা। যদিও আমি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র। তবে ওই সময় প্রায়ই চট্রগ্রাম ঘুরতে যেতাম। কিন্তু চট্রগ্রামের ভাষা আমার কাছে বিশেষ দুর্বোধ্য। জাপানে গিয়ে চট্টগ্রামের কয়েক বন্ধুকে বলেছিলাম, তোমাদের ভাষা জাপানি ভাষার চেয়েও কঠিন। চট্রগ্রাম অনেক গেলেও চন্দ্রঘোনা কখনোই যাইনি।

ফেব্রুয়ারি মাসের ১ তারিখ আমি চট্টগ্রাম গেলাম। উঠলাম নিজাম রোডের 'হোটেল পেনিনসোলা'য়। এটি ফাইভ স্টার হোটেল। কিন্তু চন্দ্রঘোনায় যাবো কিভাবে? চট্রগ্রাম চিনলেও চন্দ্রঘোনার কিছুই চিনি না। চট্রগ্রাম থেকে চন্দ্রঘোনার দুরত্ব ৪৯ কিলোমিটার। যোগাযোগ ব্যবস্থা অনুন্নত বলে দুই ঘন্টার জার্নি। আসা যাওয়া চার ঘন্টা। পরদিন সকালে একটা ট্যাক্সি ক্যাবের ড্রাইভারের সঙ্গে কথা বললাম। চন্দ্রঘোনা পেপার মিলে যাবো। এক ঘন্টা থাকবো। তুমি ওয়েট করবা। আবার তোমাকে নিয়েই এই হোটেলে ফিরে আসবো। কতো নিবা ভাড়া? সে দুই হাজার টাকা চাইলো। এই ভাড়া বড়জোর এক হাজার টাকা। ধনী দেশ থেকে গরীব দেশে এলে প্রথম প্রথম সবকিছু সস্তা মনে হয়। ১০০ ডলার চেইঞ্জ করলে ৭/৮ হাজার টাকা। এখন তো ১০ হাজার টাকার বেশি। দুই হাজার টাকায়ই রাজি হলাম।


সেই প্রথম আমার চন্দ্রঘোনা যাওয়া। খোঁজে রানুদের বাসা বের করলাম। কিন্তু বাসায় তালা। প্রতিবেশীকে জিজ্ঞেস করে জানলাম, ওরা বাজারে গেছে। তখন সকাল এগারোটা বাজে। আমি বাসার সামনে দাঁড়িয়ে রইলাম। কিছুক্ষণ পর দেখি একজন ভদ্রমহিলা ও দুইজন মেয়ে আসছে। কাছে এসেই রানু একটা চিৎকার দিয়ে বললো, করিম!!! আগেই উল্লেখ করেছি রানুর বাবা মারা গেছেন। তারা ফেনি জেলার হলেও চন্দ্রঘোনায় রয়ে গেছে। 

রানুর গায়ের রঙ শ্যামলা হলেও চেহারা খুব মিষ্টি। স্লিম ফিগার। 

বসলাম, আমাকে মিষ্টি আর দধি দিলেন। খেলাম। কিছুক্ষণ গল্প করে বিদায় নিলাম। রানুর সঙ্গে সেই প্রথম এবং শেষ দেখা। চন্দ্রঘোনার প্রকৃতি খুবই মনোরম ও নয়নাভিরাম। মানুষ খুব কম।

একদিন রানু আমার কুমিল্লার বাসায় টিএন্ডটি ফোনে কল করে। ফোনটা ধরতেই রানু বললো, করিম, তুমি আমাকে বিয়ে করবা এমন কথা দাওনি। কিন্তু তুমি আর আসবে না তা আমি বুঝে ফেলেছি। স্বান্তনা দিয়ে বললাম, রানু আমি আবার আসবো তুমি মন খারাপ করো না। কিন্তু দেশে ফেরার কিছু দিনের মধ্যেই আমার কিছু পারিবারিক ও সামাজিক সমস্যা প্রকটভাবে দেখা দেয়। জীবন এলোমেলো হয়ে যায়। জীবন প্রবাহের তীব্র ঝড় রানুর কাছ থেকে আমাকে দূরে সরিয়ে দেয়। যা রানুকে বলতে পারিনি। হয়তো রানু আমাকে ভুল বুঝে আছে।

পরে রানু আমাকে ফোনে বলেছিলো, তারা বাসা বদল করে মাটিরাঙ্গা লিচু বাগানের কাছে বাসা নিয়েছে।  ঠিকানাটা জানলে একবার যেতাম। কেমন যেনো আছে রানু এখন? কোথায় যেনো আছে? বিয়ে করে স্বামী সন্তান নিয়ে হয়তো ব্যস্ত। 

Karim Chowdhury 

9 December, 2023

Cumilla

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

আমার দেখা ১৯৭৪ সালের দুর্ভিক্ষ

আমার দেখা ১৯৭৪ সালের দুর্ভিক্ষ সরকারঃ শেখ মুজিবের শাসনামল ১৯৭৪-এর দুর্ভিক্ষ বাংলাদেশে ১৯৭৪ সালের মার্চে শুরু হয়ে সেই বছরেরই ডিসেম্বরের দিকে গিয়ে শেষ হয়। এই দুর্ভিক্ষে অসংখ্য মানুষ অনাহারে মারা গিয়েছিল। এই দুর্ভিক্ষকে স্মরণকালের মধ্যে সবচেয়ে ভয়ানক হিসেবে গন্য করা হয়। ওই সময় আমি বুঝতাম। ক্লাশ ফোরে পড়তাম। আহারে ! কি যে অভাব ! অনেকের মতো আমরাও ভাত না খেয়ে রুটি খেয়েছি । তাও পরিমিত । কখনো জাউ খেয়েছি । শুকনো মরিচ পাওয়া যেতো না । কাঁচা মরিচের কেজি ছিলো ১৫০ টাকা । লবন ১২০ টাকা । আর সোনার ভরি ছিলো তখন ১৫০ টাকা । সোনা শুধু ওই সময় কম দাম ছিলো । চারদিকে অভাব । সারাদেশের মানুষের হাহাকার । কতো মানুষ না খেয়ে মারা গেছেন ! বিদেশি রিলিফ সব আওয়ামী লীগের লোকেরা চুরি করেছে । আর বেশিরভাগ রিলিফ সীমান্ত দিয়ে ভারতে চলে পাচার হয়েছিলো । তখন বর্ডার খোলা ছিলো তখন । মহিলাদের শাড়ি কাপড় ছিলো না । অনেকে মাছ ধরার জাল পরে লজ্জাস্থান ঢেকেছিলো । এসব ছবি পত্রিকায়ও ছাপা হয়েছিলো । কিন্তু আওয়ামী লীগ নেতাদের কোনো অভাব ছিলো না । বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ শেষ হওয়ার মাত্র দুই বছর তিন মাসের মাথায় ...

বোতল

বোতল মানব জীবনে বোতল অপরিহার্য । বোতল অনেক অর্থেও ব্যবহার হয় । কোনো কোনো এলাকায় আনস্মার্ট, বেয়াক্কেল প্রকৃতির লোককেও বোতল বলা হয় । ইউরোপ আমেরিকায় থাকতে আমি ডৃংক করতাম । হার্ড ডৃংক কমই খেতাম । প্রতিদিনই বিয়ার খেতাম । বিয়ার স্বাস্থ্য ভালো রাখে ও কাজ করতে এনার্জি জোগায় । পরিমিত বিয়ার খেলে কেউ মাতাল হয় না । মাঝে মাঝে বিশেষ কোনো পার্টিতে হুইস্কি খাওয়া হতো । তাও দামি ব্র্যান্ডের । জনি ওয়াকার ব্ল্যাক লেবেল, টিচার্স, পাসপোর্ট, হেনেসি, শিভাস রিগাল, জ্যাক ড্যানিয়েলস । সাকুরায়ও অনেক সময় এসব ব্র্যান্ডের হুইস্কি পাওয়া যায় না । তো দেশে আসার পরও কিছু দিন ডৃংক করেছিলাম । কুমিল্লায় সরকার অনুমোদিত একটা মদের দোকান আছে চক বাজারে । নামঃ নাদের ট্রেডিং কোং । এটা প্রায় আজ ৫০ বছর । এখানে বিদেশি ব্র্যান্ডের ডৃংক পাওয়া যায় না । দেশিয় কোম্পানি ‘কেরো এন্ড কোং’ যা দর্শনায় অবস্থিত তার তৈরি ভদকা, হুইস্কি, জিন পাওয়া যায় । আমাদের সমাজতো রক্ষনশীল । তাই কান্দিরপাড় থেকে একটা স্প্রাইট কিনে অর্ধেক খেতে খেতে চক বাজার যেতাম । নাদেরে যখন পৌঁছতাম তখন স্প্রাইটের বোতল অর্ধেক খালি হয়ে যেতো । আমি বাবুল ভাইকে স্প্...

অশ্লীল নাম

বাংলাদেশের কিছু প্রতিষ্ঠান ও স্থানের বিচিত্র বা বিকৃত অর্থের নাম যা পরিবর্তন করা উচিতঃ ১. বোদা মহিলা মহাবিদ্যালয়, বোদা, পঞ্চগড় ২. চুমাচুমি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, রাঙ্গামাটি ৩. সোনাপোতা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, খুলনা ৪. মানুষমারা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, নীলফামারি ৫. সোনাকাটা ইউনিয়ন, তালতলী, বরগুনা ৬.বড়বাল ইউনিয়ন, মিঠাপুকুর, রংপুর ৭.সোনাখাড়া ইউনিয়ন, রায়গঞ্জ, সিরাজগঞ্জ ৮. ধনকামড়া গ্রাম, ভোদামারা, দিনাজপুর ৯.গোয়াকাটা, দোহার, ঢাকা ১০. গোয়াতলা, ময়মনসিংহ ১১.লেংটার হাট, মতলব, চাঁদপুর