সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

বেঁচেই আছি হারাম খেয়ে

 বেঁচেই আছি হারাম খেয়ে

------------------------------------

আমার কিছু কিছু স্মৃতিচারণ অনেকের ভালো লাগবে না জেনেও আমি লিখি। ১৮/১৯ বছর ইউরোপ আমেরিকায় ছিলাম বলে আমার লেখায় পশ্চিমা কালচার আসে। যা আমাদের ধর্মের সঙ্গে যায় না। 

লেখালেখির সঙ্গে ধর্মকে না মেশানোই ভালো। আমি আমার অভিজ্ঞতা ও স্মৃতিকথা লিখে আনন্দ পাই। যারা পড়েন তারা কিছু তথ্যও পান। 

আমি আমার জন্য লিখি এবং আমার  টাইমলাইনে লিখি। আমি আমার অভিজ্ঞতা ও স্মৃতিকথা লিখে আনন্দ পাই। ইনিয়ে বিনিয়ে ঘুরিয়ে প্যাঁচিয়ে কথা বলতে পারি না। আমি স্ট্রেইট কথা বলতে ভালোবাসি। আমি আমার দোষের কথা, বদভ্যাসের কথাও লিখি। 

এক সময় আমি বেশ ডৃংক করতাম। দেশে আসার পরও কয়েক বছর অভ্যাস ছিলো। আজ বারো বছর আমি আর অ্যালকোহল ছুঁই না। 

ঢাকা সাকুরা বার-এ বেশি যাওয়া হতো। মাঝে মধ্যে পিকক, নাইটিংগেল, শেরাটন, সোনারগাঁও বারেও যাওয়া হতো।

২০০৯ সালে সাকুরা বারে গিয়ে বসেছি। মুসলিম অধ্যুষিত  বাংলাদেশে কতো মানুষ ডৃংক করে তা ওইসব বারে গেলে বুঝা যায়। সাকুরা বার শাহবাগ। হোটেল শেরাটনের ঠিক উল্টো দিকে। দোতলায়। লোকেশনটাও সুন্দর। শাহবাগ এলাকা। সাকুরার পেছনে পিকক। ঢাকায় শত শত বার আছে।

সাকুরা বারের সময় বিকেল ৫টা থেকে রাত ১১টা পর্যন্ত। ১১টায় বন্ধ হবেই। ৬টার পর গেলে আর টেবিল চেয়ার পাওয়া যায় না। তাই আগেই চলে যাই। নইলে কাউন্টারে বসে খেতে হয়। এতো মানুষ। দেয়ালে লাগানো ৩/৪ টা এলইডি টিভি চললেও সিগারেটের ধোঁয়ায় টিভি ঝাপসা দেখা যায়। যারা ডৃংক করে তারা প্রায় সকলেই সিগারেট খায়। তাছাড়া ডৃংক করার সময় একটার পর একটা সিগারেট খাওয়া হয়। আমি তখনো মার্লবরো সিগারেট খাই। এক দেড়শো মানুষ এক সঙ্গে সিগারেট খেলে বন্ধ এসি রুমে কি পরিমান ধোঁয়া হয় তা যারা গেছেন তারাই জানেন। 

তো আমি এক টেবিলে বসে দুটো হাইনিক্যান বিয়ার আর দুই প্যাগ জনি ওয়াকার ব্ল্যাক লেবেলের অর্ডার দিই। একটু পর একজন ইয়াং সুদর্শন পুরুষ এসে আমার মুখোমুখি বসলেন। এটা দুই জনের টেবিল। গোল। ওয়েটার আমার বিয়ার হুইস্কি সার্ভ করার পর ভদ্রলোক আস্ত এক বোতল ভদকা অর্ডার করলেন। ভদকা হুইস্কির চেয়ে অনেক বেশি হার্ড ডৃংক। গন্ধও বেশি। আমি ইউরোপে অনেকবার রাশিয়ান ভদকা খেয়েছি। রাশিয়ান ভদকা বিখ্যাত। 

এসব বারে এক টেবিলে অপরিচিত কেউ বসলেও অনেক কথা হয়। বন্ধুত্বও হয়ে যায় অনেকের সঙ্গে। আমি বিয়ার হুইস্কি খাচ্ছি আর উনি ভদকা খাচ্ছেন। আমার খাওয়ার স্টাইল দেখে তিনি বুঝে ফেলেছেন আমি ইউরোপ বা আমেরিকায় থাকি। হুইস্কির সঙ্গে আমি কয়েনথ্রু, সোডা ওয়াটার,বরফ টুকরো,লেবুর স্লাইস নিয়েছি।

তিনি যেচেই আমার সঙ্গে পরিচিত হোন। আমি আমার পরিচয় দিলাম তিনিও তার পরিচয় দিলেন। পুলিশের একজন মাঝারি লেবেলের কর্মকর্তা। এএসপি। এভাবে ঘনিষ্ঠতা হলে আবার এসব বারে একজন আরেকজনকে ডৃংক অফার করে। তিনি আমাকে প্রশ্ন করলেন আমি ভদকা পছন্দ করি কিনা। বললাম, আমি রাশান ভদকা পছন্দ করি। উনার ভদকাটা রাশান ছিলো না। আমি উনাকে এক প্যাগ ব্ল্যাক লেবেল অফার করি। এক চুমুক খেয়েই তিনি কথা বলতে শুরু করলেন ঘনিষ্ঠভাবে। বারে এমন হয়। আমিও বেশ ঘনিষ্ঠভাবেই আচরণ করলাম। অনেক কথা হলো।

ফ্রেন্ডলি বললাম, আপনারা শিক্ষিত ছেলে। আপনারা তো জানেন ইউরোপ আমেরিকায় পুলিশের সেবা কেমন? যে কোনো বিপদেই মানুষ পুলিশের কাছে যায়।  রিমোট এরিয়ায় রাত ২/৩ টায় গাড়ি না পেলেও মানুষ পুলিশের সাহায্য নেয়। একান্তই গাড়ি না পাওয়া গেলে পুলিশের গাড়িতে তাকে তার ঠিনানায় পৌঁছে দেয়া হয়। আমি নিজেও ইউরোপ আমেরিকায় পুলিশের কাছে এই সুবিধা পেয়েছি।  

কিন্তু বাংলাদেশের মানুষ পুলিশি হয়রানীর ভয়ে বিপদে পড়েও পুলিশের কাছে যায় না। আপনি কিভাবে ব্যাখ্যা করবেন? 

তিনি বললেন, আপনি আমার সিনিয়র। একই বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র হিসেবে বড় ভাই। তাই খোলামেলা বলি, আমরা চাইলেও পারি না। আমাদের হাত পা বাঁধা। অপরাধীদের ধরলেই মন্ত্রী, এমপি, প্রভাবশালী রাজনৈতিক নেতা ছেড়ে দিতে বলেন। ফোন আসে সাথে ধমকও। তাদের কথার বাইরে যাওয়া আমাদের পক্ষে সম্ভব নয়। আমি মাস্টার্স শেষে বিসিএস দিয়ে এএসপি হয়েছি। অথচ একজন মেট্রিক পাস এমপি'র ক্ষমতা ও পদ মর্যাদা আমার চেয়ে অনেক বেশি। এরা সকলেই ক্যাডার পুষেন। বেশি অপরাধ এই ক্যাডাররাই করে। এমপি সাহেব তো ফোন করে তাকে ছাড়িয়ে নেবেনই। উনার পক্ষ হয়ে গুন্ডামি করে মানুষকে মারধর করার কিছু লোকতো লাগেই তাদের। সব মন্ত্রী, এমপি, রাজনৈতিক নেতারা সবচেয়ে খারাপ পোলাপানদের পালে। আমরা কি করতে পারি? ইউরোপ আমেরিকায় সিনেটর, কংগ্রেসম্যানরা ক্যাডার পালে না। অপরাধীকে ধরলে উনারা পুলিশকে ফোন করে না। 

আপনারা এই অবস্থার পরিবর্তন করে দেন। দেখেন আমরা কি করতে পারি।

আমি ফ্রেন্ডলি জিজ্ঞেস করলাম, আপনি ঘুষ খান? তিনিও নেশার ঠেলায় বলে ফেললেন, 'আবার জিগায়'।

সত্যি বলার মোক্ষম সময় এটাই। ডৃংক করলে মানুষ সত্য কথা বলে৷ সেজন্য বলা হয়ে থাকে, সবচেয়ে বেশি মিথ্যা বলা হয় ধর্মগ্রন্থ ছুঁয়ে। আদালতে। আর সবচেয়ে বেশি সত্য কথা বলা হয় মদের গ্লাস হাতে। বারে।

আমি মজা করে বললাম, আজতো আপনি দুইটা হারাম খেলেন। ঘুষ এক হারাম আর মদ আরেক হারাম। 

তিনি হু হু করে হেসে বললেন, মাত্র দুইটা না। সারাদিন হারামের উপরই থাকি। বেঁচেই আছি হারাম খেয়ে।

Karim Chowdhury 

4 May,2023

Cumilla.

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

আমার দেখা ১৯৭৪ সালের দুর্ভিক্ষ

আমার দেখা ১৯৭৪ সালের দুর্ভিক্ষ সরকারঃ শেখ মুজিবের শাসনামল ১৯৭৪-এর দুর্ভিক্ষ বাংলাদেশে ১৯৭৪ সালের মার্চে শুরু হয়ে সেই বছরেরই ডিসেম্বরের দিকে গিয়ে শেষ হয়। এই দুর্ভিক্ষে অসংখ্য মানুষ অনাহারে মারা গিয়েছিল। এই দুর্ভিক্ষকে স্মরণকালের মধ্যে সবচেয়ে ভয়ানক হিসেবে গন্য করা হয়। ওই সময় আমি বুঝতাম। ক্লাশ ফোরে পড়তাম। আহারে ! কি যে অভাব ! অনেকের মতো আমরাও ভাত না খেয়ে রুটি খেয়েছি । তাও পরিমিত । কখনো জাউ খেয়েছি । শুকনো মরিচ পাওয়া যেতো না । কাঁচা মরিচের কেজি ছিলো ১৫০ টাকা । লবন ১২০ টাকা । আর সোনার ভরি ছিলো তখন ১৫০ টাকা । সোনা শুধু ওই সময় কম দাম ছিলো । চারদিকে অভাব । সারাদেশের মানুষের হাহাকার । কতো মানুষ না খেয়ে মারা গেছেন ! বিদেশি রিলিফ সব আওয়ামী লীগের লোকেরা চুরি করেছে । আর বেশিরভাগ রিলিফ সীমান্ত দিয়ে ভারতে চলে পাচার হয়েছিলো । তখন বর্ডার খোলা ছিলো তখন । মহিলাদের শাড়ি কাপড় ছিলো না । অনেকে মাছ ধরার জাল পরে লজ্জাস্থান ঢেকেছিলো । এসব ছবি পত্রিকায়ও ছাপা হয়েছিলো । কিন্তু আওয়ামী লীগ নেতাদের কোনো অভাব ছিলো না । বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ শেষ হওয়ার মাত্র দুই বছর তিন মাসের মাথায় ...

বোতল

বোতল মানব জীবনে বোতল অপরিহার্য । বোতল অনেক অর্থেও ব্যবহার হয় । কোনো কোনো এলাকায় আনস্মার্ট, বেয়াক্কেল প্রকৃতির লোককেও বোতল বলা হয় । ইউরোপ আমেরিকায় থাকতে আমি ডৃংক করতাম । হার্ড ডৃংক কমই খেতাম । প্রতিদিনই বিয়ার খেতাম । বিয়ার স্বাস্থ্য ভালো রাখে ও কাজ করতে এনার্জি জোগায় । পরিমিত বিয়ার খেলে কেউ মাতাল হয় না । মাঝে মাঝে বিশেষ কোনো পার্টিতে হুইস্কি খাওয়া হতো । তাও দামি ব্র্যান্ডের । জনি ওয়াকার ব্ল্যাক লেবেল, টিচার্স, পাসপোর্ট, হেনেসি, শিভাস রিগাল, জ্যাক ড্যানিয়েলস । সাকুরায়ও অনেক সময় এসব ব্র্যান্ডের হুইস্কি পাওয়া যায় না । তো দেশে আসার পরও কিছু দিন ডৃংক করেছিলাম । কুমিল্লায় সরকার অনুমোদিত একটা মদের দোকান আছে চক বাজারে । নামঃ নাদের ট্রেডিং কোং । এটা প্রায় আজ ৫০ বছর । এখানে বিদেশি ব্র্যান্ডের ডৃংক পাওয়া যায় না । দেশিয় কোম্পানি ‘কেরো এন্ড কোং’ যা দর্শনায় অবস্থিত তার তৈরি ভদকা, হুইস্কি, জিন পাওয়া যায় । আমাদের সমাজতো রক্ষনশীল । তাই কান্দিরপাড় থেকে একটা স্প্রাইট কিনে অর্ধেক খেতে খেতে চক বাজার যেতাম । নাদেরে যখন পৌঁছতাম তখন স্প্রাইটের বোতল অর্ধেক খালি হয়ে যেতো । আমি বাবুল ভাইকে স্প্...

ফেবুতে মেয়েদের পোস্ট

ফেবুতে মেয়েদের পোস্ট সকালে ঘুম ভেঙে দেখি আট টা বাজে । শরীরটাও বেশি ভালো লাগছে না । আবার ঘুমাল াম । ১১টায় উঠলাম । ২ মগ চা খেলাম ( বাজারের হিসেবে ৮ কাপ হবে)। সবাই জানেন আমি স্মোক করি । চেইন স্মোকার । কম্পিউটার খোঁচাখুঁচি করে নিজে নিজেই ঠিক করলাম । প্রায় দুই ঘন্টা । আমি থাকি চার তলায় । দুপুর ১টা বাজে । খেতেও ইচ্ছে করছে না কিছু । তখনো মুখ ধুই নি । কম্পিউটারে খোঁচাখোঁচি করতে গিয়ে দেখি এক মেয়ে তার পা’য়ের একটা ছবি আপলোড করেছে । দেখলাম এই পা মানে ঠ্যাং এর ছবিতে লাইক পড়েছে ৯৪৭ টা । কমেন্ট অসংখ্য । ‘কতো সুন্দর এই পা । না জানি তুমি কতো সুন্দর । পা তো নয় যেন একটা গোলাপ ফুল’ । এ জাতীয় অনেক কমেন্ট । আমি পোষ্ট টা দেখে কিছুটা অবাক হলাম । একটা ঠ্যাং এর এতো কদর ! প্রায়ই লক্ষ্য করি, মেয়েরা যখনি কিছু আপলোড করে সেটা তাদের পায়ের ছবিই হোক,হাতের ছবিই হোক আর নাকের ছবিই হোক বা এক চোখের ছবিই হোক সে সব ছবিতে অগনিত লাইক আর কমেন্ট । মেয়ে বন্ধুদের ছোট করার জন্য বলছি না, ফেবুতে প্রায়ই দেখি মেয়েরা কোনো ছবি বা দু এক লাইন হাবিজাবি লিখলে লাইক আর কমেন্টের বন্যা বয়ে যায় । অনেক মেয়েরা শখ করে পিঠা, ...