এক অকৃতজ্ঞ আর গাদ্দার পরিবারের আত্নকথা
*******************************************
নিজেকে নিয়ে ভালো থাকার স্বার্থপর জীবন আমার কাছে গ্রহণযোগ্য মনে হয়নি। তাই আমেরিকায় আমার একা ভালো থাকার এক সুবর্ণ সুযোগের সময় অনেককেই দূর থেকে কাছে টেনে নিয়েছিলাম। দূর থেকেও সুখ দুঃখের সাথী হয়ে পাশে ছিলাম।
আমার এক দূর সম্পর্কের ভাই। উনার তিন মেয়ে এক ছেলে। প্রথমে দুই মেয়ে তারপর ওই বেজন্মা ছেলে তারপর আরেক মেয়ে।
বড় মেয়ের বিয়ের সময় তার বাবা আমাকে নিউইয়র্কে চিঠি লিখে জানালো। যার মর্মার্থ: আমি টাকা না দিলে উনার পক্ষে মেয়েকে বিয়ে দেয়া সম্ভব নয়। আমি নিউইয়র্ক থেকে এক লক্ষ টাকা পাঠালাম। এটা ১৯৯৭ সালের কথা। ২৭ বছর আগের এক লাখ টাকা। ধুমধাম করে বিয়ে দেয়া হলো। সে সময় এক লাখ টাকা অনেক টাকা। পুরো গ্রাম খাওয়ানো যেতো।
তার কিছুদিন পর ওই বেজন্মা ছেলে আমাকে চিঠি লিখলো ফ্লোরিডায়। তার চিঠির মর্মার্থ.....
" আব্বা বেঁচে থাকার প্রয়োজনে লিটন কাকার ব্রিকফিল্ডে ম্যানেজারের চাকরি করে। এই টাকায় সংসার চলে না। এদিকে আমি ভিক্টোরিয়া কলেজে ম্যানেজমেন্টে অনার্সে ভর্তি হয়েছি। লেখাপড়া চালিয়ে যাওয়ার মতো টাকা আব্বার পক্ষে দেয়া সম্ভব নয়। আমার একটা বড় ভাই নাই। আপনিই আমার বড় ভাই।"
টাকার জন্য চাচাকেও ভাই ডাকে! টাকার কি মাহাত্ম্য! তখন অনার্স কোর্স তিন বছরের ছিলো। আমি তাকে ফোন করে জিজ্ঞেস করলাম, তোমার মাসে কতো টাকা পড়াশোনার খরচ? আমাকে সে জানালো, বাড়িতে থেকে ক্লাস করি। মাসে ১৫০০ টাকা হলে চলবে।
আমি তাকে বললাম, আমেরিকা থেকে প্রতিমাসে ১৫০০ টাকা পাঠানো সম্ভব নয়। আমি তোমার তিন বছর অনার্স পড়ার খরচ একবারে পাঠিয়ে দেবো। মাসে ১৫০০ টাকা হলে বছরে ১৮ হাজার টাকা। তিন বছরে ৫৪ হাজার। আমি তোমার একাউন্টে ৬০ হাজার টাকা পাঠিয়ে দিচ্ছি। তার একাউন্ট নাম্বার SB A/C 5555
সোনালী ব্যাংক, স্টেশন রোড শাখা, কুমিল্লা।
কিছুদিন পর সে আমাকে আবার চিঠি লিখে জানালো, আমাদের পুরনো মাটির ঘরটা ভেঙে ফেলেছি। এতে সবার জায়গা হয় না। তাই ৫ ইঞ্চি ওয়ালের উপর টিন দিয়ে চার রুমের একটা বাসা করলে আমাদের থাকার ব্যবস্থাটা হয়। আপনি যদি সাহায্য করেন তবে উপকার হয়।
আমি আবার আমেরিকা থেকে ফোন করে জানতে চাইলাম, ৫ ইঞ্চি ওয়াল দিয়ে উপরে টিন দিয়ে ফ্লোর পাকা করে চার রুমের বাসা করতে কতো টাকা লাগবে? আমাকে জানালো ৯০ হাজার। তখন ইট, বালু, সিমেন্ট, টিন সবকিছুর দাম কম ছিলো। ১৯৯৮ সালের কথা। ২৬ বছর আগে। আমার টাকায় করা সেই ঘরে তারা এখনো ঘুমায়।
তারপর অসুখবিসুখে ডাক্তারের খরচ বাবদ অনেক টাকা দিয়েছি। সব মিলিয়ে কয়েক লাখ টাকা তো হবেই। ২৫/৩০ বছর আগে। তবে এসব টাকা যে আমি ফেরত পাবো তা কখনোই ভাবিনি। মুক্তহস্তে দান করেছি।
টুকটাক আরো আছে।
ইউরোপ আমেরিকায় গিয়ে অনেকে আত্নীয়স্বজনদেরকে ঠিকানা ফোন নাম্বারও দেয় না। সকলেই টাকার জন্য চিঠি লিখে এই যন্ত্রণায়। আমি লেখার শুরুতেই উল্লেখ করেছি,'নিজেকে নিয়ে ভালো থাকার স্বার্থপর জীবন আমার কাছে গ্রহণযোগ্য মনে হয়নি।'
দেশে এসেও তাদের চলাচলের রাস্তার জায়গা নেই বলে আমি আমার পৈত্রিক জায়গা থেকে আড়াই হাত প্রস্থ আর ৬৫ ফিট লম্বা জায়গাটুকু আমি তার বাবার নামে বিনা পয়সায় সাফ কাবলা দলিল করে দিয়েছি। সেই রাস্তা দিয়েই তারা চলাচল করে এখন। ওর বাপ আরেক ক্রিমিনাল। শুনেছি, সবাইকে বলে বেড়ায় আমার কাছ থেকে নাকি উনি টাকা দিয়ে কিনে রেখেছে। বয়সে বড় নইলে জুতাইয়া লম্বা করে ফেলতাম। এই ঘটনার সাক্ষী আছে ওই বাড়ির অনেকে। তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য ব্যবসায়ী Hasan Kabir Chowdhury , ব্যাংকার জসিম আহমেদ চৌধুরী।
সেই বেজন্মা ছেলে এখন গার্মেন্টসে চাকরি করে (সেই চাকরিও নিজের যোগ্যতায় নিতে পারেনি। তার ছোট বোনের হাসব্যান্ড চাকরি যোগাড় করে দিয়েছে) আর শ্বশুর বাড়ির টাকায় কিছু টাকা হয়ে আমার সঙ্গে কোনো প্রকার যোগাযোগই রাখে না! দেখা হলে কথাও বলে না। কুকুরের বাচ্চাও এই বেজন্মার চেয়ে অনেক ভালো। কুত্তারে আদর করলে অনুগত থাকে। শুনেছি বিয়ে আগে একটা করেছিলো। তাও টিকেনি৷ পরে এক ঢাকাইয়া মেয়েকে যৌতুকের বিনিময়ে বিয়ে করে। সেই মেয়ের বাবার গাড়ি নিয়ে বাড়িতে এসে বুংবাং করে।
দেখা হলে আমার সাথে কথাও বলে না।
এতে আমি মোটেও দু:খিত না। ওদের জন্মই হয়েছে মাইগ্যা খাওয়ার জন্য। যেখানে লাভ সেখানেই ওদের দৌঁড়।
ছাত্রজীবনে ম্যাকিয়াভেলির The Prince বইতে পড়েছিলাম, 'মানুষের মতো স্বার্থপর প্রাণী এই পৃথিবীতে আর একটিও নেই'।
এই বেজন্মা শুধু স্বার্থপর নয়। তার আরেক জেঠাতো ভাই এখন কোটি কোটি টাকার মালিক। বেজন্মা এবং তার বাবা এখন ওই কোটিপতি জেঠাতো ভাইয়ের নুনুতে তেল মারে। যদি আরও কিছু খাওয়া যায়।
এই শু*য়ো*রের বাচ্চারা শান্তিপূর্ণ সমাজ আর পারিবারিক বন্ধনে বিষ ঢেলে দিয়েছে। নিজের স্বার্থে।আমার দীর্ঘ দিনের অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ ও প্রচন্ড প্রিয় এক পরিবারের সঙ্গে মধুর সম্পর্ক এই অজাত ফ্যামিলি চিরদিনের জন্য ধ্বংস করে দিয়েছে।
আমাদের বাড়ির নাম ঘোড়ামারা চৌধুরী বাড়ি। পুরো গ্রামের লোকেরাই এসব জানে।
আমি আমার পৈতৃক বাড়ি চিরদিনের জন্য পরিত্যাগ করেছি এই বেজন্মা আর তার ক্রিমিনাল বাপের জন্য।
আজ এই পর্যন্তই।
দরকার হলে পরে আরো লিখবো।
Karim Chowdhury
০৪ জুলাই, ২০২৪
কুমিল্লা।
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন