ব্যক্তিগত সুখ দু:খ, অসুস্থতা, সমস্যার কথা আমি ফেসবুকে লিখি না। এসব সমস্যা কমবেশি সবারই আছে। এগুলো ফেসবুকে লেখার কোনো মানে নেই। বিশেষ বিশ্বস্ত বন্ধুদের ইনবক্সে জানানো যায়।
তবে আজ কেনো যেন লিখতে একটু ইচ্ছে করছে।
সন্ধ্যায় কান্দিরপাড় গিয়েছিলাম। ফেরার পথে দুই সীটার একটা মিশুকে উঠলাম। আমি একাই আসবো। এগুলোতে বসলে রিকশার মতো অনুভব হয়। ভাড়া একটু বেশি। এই ব্যাটারি চালিত অটো এসে রিকশা নাই বললেই চলে।
আমি বাঁ হাতে মিশুকের ড্রাইভার এবং প্যাসেঞ্জারের মধ্যে যে পার্টিশন ওই স্টেইলেস স্টিলের পার্টিশনে মোট করে ধরেছিলাম। ঝাউতলা এসে এই মিশুক চালক সামনের একটা সিএনজিকে এত জোরে ধাক্কা দেয় যে আমি প্রচন্ড ব্যথায় 'ও মা বলে' চিৎকার দিয়ে উঠি। বাঁ হাতের আঙুল নিচের স্ট্যান্ডের সাথে চাপ খেয়ে রিং ফিঙ্গারের নখটা ফেটেই গেছে। বাঁ হাতের রিং ফিঙ্গারটায় অসহনীয় একটা যন্ত্রণা অনুভব করি মুহুর্তের মধ্যে। এমনকি আমার ডান হাতে থাকা মোটামুটি দামি মোবাইল ফোনটার ডিসপ্লেতেও এক কোণায় একটু স্পট পড়ে গেছে। কারণ ডান হাতে আমি মুখমণ্ডল যাতে পার্টিশানে ধাক্কা না খায় সেজন্য মোবাইল ফোনসহ পার্টিশনে ধরেছিলাম। বাঁ হাত তো চিপায় পরেই গেছে।
রাগী মানুষ হিসেবে আমার পরিচিতি আছে। অবাক হয়ে দেখলাম, আমি চালকের সাথে রাগ করিনি। ব্যথায় নির্বাক হয়েও ভাবলাম, তাকে কটু কথা বললে তো আর আমার ব্যথা কমে যাবে না। অযথা সে মনে কষ্ট পাবে। যদিও এটি দুর্ঘটনা নয়। চালকের অসতর্কতা। শুধু ছেলেটিকে বললাম ২৫-৩০ বছর আগে হলে তোমাকে কি যে করতাম এক আল্লাহপাকই জানেন।
ছেলেটাকে বললাম, একটু দাঁড়াও। তারপর মোবাইল ফোনের লাইট দিয়ে দেখলাম নখটা ফেটে গেছে। রক্ত বের হচ্ছে। ছেলেটাকে জিজ্ঞেস করলাম, বাড়ি কোথায়? সে বললো গাইবান্ধা। উত্তর বঙ্গের অনেক লোক কুমিল্লায় বিভিন্ন কাজ করে।
ছেলেটির বয়স ২২/২৩। একটু বোকা মনে হলো।দেখলাম সেও খুব অনুতপ্ত। বললাম, তাড়াতাড়ি মেডিসিন মার্কেটে যাও।
এমন তীব্র ব্যথা পেয়েও আমি ছেলেটিকে কিছু না বলায় নিজেই নিজের কাছে অবাক হলাম। নিজেকে মহৎ মনে হলো! এখন মনে হয় শান্ত হয়ে গেছি।
আমি এতই ব্যথা পেয়েছি যে জীবনে এমন শারীরিক ব্যথা অনুভব করিনি। এমনকি ছোটবেলায় উষ্টা খেয়ে আমি পায়ের নখও উল্টে ফেলিনি। অপারেশনেও এতো ব্যথা পাইনি।
সরাসরি মেডিসিন কমপ্লেক্সে এসে নেমে ভাড়া দিচ্ছি। ১০০ টাকার একটা নোট দিলাম। ভাড়া ৮০ টাকা। সিএনজিতে এই ভাড়া ২৫ টাকা। আরাম করে করে আসবো বলে ২৫ টাকার ভাড়া ৮০ টাকা দিলাম। ফাঁকতালে আঙুল একটা শেষ করলাম।
ও মা, ছেলেটা টাকা নিতে ইতস্তত করছে।
আমাকে বলে স্যার......
বললাম, আমি কি তোমাকে কিছু বলেছি? টাকা নাও তাড়াতাড়ি। আমি ওষুধ খাবো। ছেলেটা ভয়ে ভয়ে ভাড়া নিলো। আমি সঙ্গে সঙ্গে শাহজালাল ফার্মেসীতে গিয়ে দেলোয়ার আর ইকবালকে বললাম, তাড়াতাড়ি ওষুধ দাও। হাই এন্টিবায়োটিক। ব্যথায় আমার জান বেরিয়ে যাচ্ছে। দেলোয়ার, ইকবাল দুজনেই তুলা দিয়ে রক্ত মুছে দিলো। চেয়ার ঠেলে বসতে বললো। ইকবাল অনেকগুলো ওষুধ দিলো। পানির বোতল দিয়ে বললো, ৪টা ওষুধ এখনি খেয়ে ফেলুন। ওখানে দাঁড়িয়ে থেকেই এক কোর্স খেয়ে নিলাম। ওষুধের মধ্যে হলো Voltalin SR 100 mg. Triocim 200 mg. Surgel 40 mg. Fluclox 500 mg.Ceevit DS 100 mg.তুলা আর ব্যান্ডেজও দিয়ে দিলো ইকবাল।
রুমে এসে ডেটল দিয়ে এটাকে পরিষ্কার করে Moov Spray করে নিজেই ব্যান্ডেজ করে নিলাম। Moov Sprayতে সঙ্গে সঙ্গে ব্যথা চলে যায়।
এই হলো আজকের আমার সুখবর। কিন্তু সমস্যা হলো, আমিতো একা থাকি। নিজেই রান্না করে খাই। হোটেলের খাবারে আমার অসুবিধা হয়। বাঁ হাতের আঙুল ভেজানো যাবে না। পেঁয়াজ রসুন কাটবো কিভাবে? কাল আবার শুক্রবার। এখানের হোটেলগুলো বন্ধ। ভাবছি পলিথিনের ব্যাগ কেটে পুরো আঙুল বেঁধে দেবো সকালে। যাতে পানি না লাগে।
বাঁ হাত সোজা করে নিচে রাখা যায় না কিছুতেই। ব্যথা করে। তাই এটাকে অর্ধেক বাঁকা করে উপরে তুলে রাখতে হয়।
এই তীব্র ব্যথা নিয়ে আমি আবার ফেসবুকে লিখি এটা একটু কেমন দেখায় না?
যখন মোবাইল ফোন টিপতে ইচ্ছা করে না তখন আমি স্পিচ টু টেক্সট সফটওয়্যারটা ব্যবহার করি। মুখে বলি। লেখা টাইপ হয়ে যায়। দুই একটা বানান ভুল থাকে। দাড়ি কমা থাকে না। পরে দুই-একটা বানান সংশোধন করে দাড়ি কমাগুলো ঠিক করে দিই।
স্পষ্ট এবং সঠিক উচ্চারণ করলে বাংলা এবং ইংরেজিতে বানান ভুল হয় না Speech to Text সফটওয়্যারে। এক্ষেত্রে আমার উচ্চারণে কোন সমস্যা হয় না বলে আমার বানান খুবই কম ভুল হয়। স্পষ্ট উচ্চারণে তাই মুখে বলে বলেই লেখাটা লিখে নিলাম। তিনটা বানান ভুল ছিলো সেগুলো কারেকশন করে দাড়ি কমা দিয়ে দিলাম।
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন