আসসালামু আলাইকুম।
এই চিঠিটি আমি লিখেছিলাম ১৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪ তারিখে। প্রায় ৬ মাস আগে। রেজিস্ট্রি পোস্ট করে পাঠিয়েছিলাম। ভেবেছিলাম নিজেদের পারিবারিক সমস্যা নিজেদের মধ্যেই সমাধান করা যাবে। বাইরের মানুষকে জানাবো না। যেহেতু ৬ মাসেও আমার সাথে তারা যোগাযোগ করেনি তাই আমি আমার আত্নীয় ও গ্রামের মানুষদের জানানোর প্রয়োজন অনুভব করছি।
কেননা ইতিমধ্যে আমি সহিদ চৌধুরীর পরিবার থেকে আমাকে হত্যার হুমকি দেয়া হয়েছ। উনার মেজো জামাই মালয়েশিয়া থেকে হোয়াটসঅ্যাপে আমার দুই হাত কেটে ফেলবে বলে হুমকি দিয়েছে। আমাকে কেউ মারতে আসলে আমিতো প্রতিরোধ করবোই। ফলে যে কোনো দুর্ঘটনার জন্য সহিদ চৌধুরীর পরিবার দায়ী থাকবে। তিনি এখন মেয়ের জামাই দিয়ে আমাকে হুমকি দিচ্ছে। আমি গ্রামে ছিলাম না ২৯ বছর। তাই তারা আমার বিরুদ্ধে কিছু বানোয়াট, মিথ্যা, মনগড়া ন্যারেটিভ তৈরি করে গ্রামের মানুষকে বিভ্রান্ত করছে। আমি তাদের জন্য কি করেছি সেগুলো তারা গোপন রাখে। জনে জনে গিয়ে বলা তো সম্ভব না। তাই ৬ মাস আগের ডাক বিভাগের মাধ্যমে পোস্ট করা সেই চিঠি অনলাইনে দিয়ে সবাইকে একযোগে জানিয়ে দিলাম।
এই চিঠিতে আমার সংক্ষিপ্ত জীবন কাহিনী বিধৃত হয়েছে। কিছু অংশ বাদ দেয়া হয়েছে আর কিছু সংযোজন করা হয়েছে। আপনারা পড়লে খুশি হবো। কৃতজ্ঞ থাকবো। এই গ্রামের সন্তান হিসেবে আমার বক্তব্য জানার অধিকার আপনাদের আছে।
আফরোজা আক্তার চৌধুরী (বিলকিস)
পিতা: সহিদুর রহমান চৌধুরী
ঘোরামারা চৌধুরী বাড়ি।
----------------------------------------------------------
তোর বাপ তোদেরকে মিথ্যা বলে আত্মীয়-স্বজন সবাইকে ছোট করছে আর তোদেরকে মাথার উপরে উঠাইছে। তোদেরকে বুঝাইতে চাইছে তোর বাপ আমার জন্য আর মায়ের জন্য বিরাট কিছু করে ফেলছে। তোরাও মনে করিস আত্নীয় স্বজনের মাঝে তোর বাপ একজন নবী।
তোর বাপ কার জন্য কি করছে সেটার আসল কাহিনী আমার কাছ থেকে শুন। আমার জন্ম ১৯৬২ সালে। তোর বাপ বিয়ে করছে ১৯৭৪ সালে। আমি তখন ক্লাস ফাইভে পড়ি। সবকিছু মনে আছে। কাশেম ভাই আগে ছোটনা বিয়ে করছিলেন। সেই বউয়ের সাথে কাশেম ভাইয়ের ছাড়াছাড়ি হয়ে যায় ১৯৭৩ সালে। আমি অনেক দিন কাশেম ভাইয়ের সাথে ছোটনা ভাবীদের বাড়িতে বেড়াতে যেতাম। সেই ভাবীর নাম ছিল সুফিয়া আক্তার খানম। সুন্দরী, শিক্ষিত, অভিজাত, ধনী পরিবার ছিলো ভাবীদের। ছোটনা খান বাড়ি তাদের বাড়ি। এই বিয়ে বড় দুলাভাই আলী আকবর সাহেব করিয়েছিলেন। আমাকে ভাবী অনেক আদর করতেন। কোলেও নিছেন। থ্রিতে থাকতে আমাকে পড়াইছেনও। তিনি শিক্ষিত ছিলেন। সেই সময় তিনি আইএ পাস ছিলেন।
সেই বিয়ে ভেঙে যাওয়ার পর কাশেম ভাই বাবলুর মাকে বিয়ে করেন। তখন কাশেম ভাই টঙ্গীর অলিম্পিয়া টেক্সটাইল মিলে টাইম কিপার হিসেবে চাকরি করতেন। আর ভাবীকে বাড়িতে রেখেছিলেন।
তোর বাপ বিয়ে করার পরই আলাদা হয়ে বাড়ির লোকজনকে ডাকে। আমাকে আর মাকে কে খাওয়াইবো এই বিচার চেয়ে? তোর বাপ দিনে ১০০ বার বলতো, 'আমার একটা ভবিষ্যৎ আছে না?' গফুর চাচা, মোস্তফা চাচার দাদা, আমিন ভাইয়ের বাবা সুজাত চাচা, মান্নান চাচা,কাদির চাচা, (আবুল খায়ের ভাইয়ের বাবা) খালন চাচাসহ বাড়ির সবাই আমাদের উঠানে বসে মিটিং করে সিদ্ধান্ত দেয় যে, আমি কাশেম ভাইয়ের ঘরে আর মা তোর বাপের ঘরে খাবে। এভাবে বছর খানেক চললো। মালেক ভাই তখন মিরপুর সেনানিবাসে ভাবী বাচ্চাদেরকে নিয়ে থাকেন। তাই এসব ঝামেলায় ওনাকে আর ডাকা হয়নি।
আমাদের বেশ কিছু জমি ছিলো। বড় ক্ষেত আর চন্দ্রা ক্ষেতের কথা আমার মনে আছে। এখন হাসেম মিয়ার( আবুল হাসেম চৌধুরী) যে বসত এটাও আমাদের ছিলো। ১১ গন্ডা। ৫০০ টাকায় মা বিক্রি করেছিলেন এই ১১ গন্ডা গফুর চাচার কাছে।
বড় ক্ষেত বলতাম কারণ এই জমি এক কানি চার গন্ডা। এখনো এই জমি আছে জসিম তাদের কাছে। যুব উন্নয়নের পিছনে। শুনেছি এই জমি আলম তারা কিনে নিয়েছে।
১৯৭০ সালে অভাবের কারণে মা এই জমিটা বিক্রি করে দেন জুলফু ভাইয়ের কাছে ৪৫০০ টাকায়। জুলফু ভাইকে (জসিমের আব্বা) মা বলেছিলেন, আমার পুতেরা যদি কোনদিন পয়সাওয়ালা হইয়া জমিডা ফেরত নিতে চায়, এই দামে জমিডা ফেরত দিবা। জুলফু ভাই রাজি হয়েছিলেন।
১৯৭১ সালে যুদ্ধের পর মালেক ভাই ৭২ সালে বাড়িতে আসেন। এসে মালেক ভাই মাকে বললেন যে,জুলফু ভাইরে খবর দেন। আমরা আমাদের জমিডা ফেরত নেব। তখন জুলফু ভাইরে খবর দিলে খুশু ফুফুর জামাই আনোয়ার সাহেব আসেন মালেক ভাইয়ের সাথে কথা বলতে। আমাদের উঠানে দাঁড়িয়ে এই নিয়ে তর্কাতর্কি হয়। তারা জমি ফেরত দিতে রাজি হয় নাই। তখন মালেক ভাইয়ের কোমরে পিস্তল ছিল। পিস্তল হাতে নিয়ে খুশু ফুফুর জামাইয়ের মাথার মধ্যে পিস্তল ধরে এবং বলে গুলি করে দেবো। তুমি জামাই। তুমি কেন আসলা কথা বলতে? যেহেতু মালেক ভাই মুক্তিযুদ্ধ থেকে এসেছে এবং অস্ত্র আছে হাতে তাই তারা ভয় পাইছে। মালেক ভাই বিরাট সাহসী এক পুরুষ মানুষ ছিলেন। লম্বা, সুদর্শন পুরুষ ছিলেন মালেক ভাই।
পরে জুলফু ভাই খবর পাঠায় যে, জমি তারা ফেরত দেবে তবে বর্তমান বাজার মূল্যে ফেরত নিতে হবে। মা এই জমি বিক্রি করছিলেন ১৯৭০ সালে ৪৫০০ টাকায়। আর ১৯৭২ সালে এটা ফেরত নেওয়ার জন্য দাম হয়েছে ১০৫০০ টাকা। তখন কাশেম ভাই, মালেক ভাই, তোর বাপ মিলে টাকা দিয়ে এই জমিটা ফেরত আনেন। তোর বাপ আর কাশেম ভাই টাকা ধার আনেন আলী আকবর দুলাভাই আর দেলোয়ার দুলাভাইয়ের কাছ থেকে। সেই টাকাও দুলাভাইদেরকে ঠিকমতো দেয়া হয় নাই। এই নিয়ে অনেক ঝগড়াঝাটিও হইছিলো। মা তখন বললেন, মন্টু তো ছোট। তার তো কিছু নাই। তারে তোরা আড়াই গন্ডা জায়গা দে। তখন আমার নামেও আড়াই গন্ডা দেওয়া হইছে। তখন এই জমি সবাই ভাগাভাগি কইরা নেয়। ছয় গন্ডা কাশেম ভাই, ছয় গন্ডা মালেক ভাই, ছয় গন্ডা তোর বাপ। মোট ১৮ গন্ডা। আমার নামে আড়াই গন্ডা। হইলো সাড়ে বিশ গন্ডা। আর বাকিটা ছিল মার নামে।
যখন কাশেম ভাই ভাবীকে নিয়ে বাড়ি থেকে চলে যাবে বলে সিদ্ধান্ত হয়েছে তখন তোর বাপ পাগলের মতো হইয়া বাড়ির সব লোকেরে আবার ডাকে। আমারে আর মারে এখন কে খাওয়াইবো? তোর বাপ বাল করছে। কাহিনী শুন। বহুত বেদনা নিয়ে আমি বড় হইছি। এরপর বাড়ির সবাই আবার বসে আমাদের উঠানে। মিটিংয়ে মালেক ভাইরে খবর দিয়ে মিরপুর থেকে বাড়িতে আনে। মিটিংয়ে সিদ্ধান্ত হয়। মালেক ভাইয়ের ছয় গন্ডা, কাশেম ভাইয়ের ছয় গন্ডা তোর বাপেরে দিয়ে দিবে। বিনিময়ে তোর বাপ, মা আর আমারে খাওয়াইবো। কাশেম ভাই আর মালেক ভাই তোর বাপের চেয়ে কোটি গুন ভালো মানুষ।
তোরা বলোছ তোর বাপ সব আত্নীয় স্বজনরে দেখছে। উনি তো তোদেরই খাওয়াইতে পারতো না। অন্যরে কি বাল দেখবো? আমি তো তখন প্রাইমারি স্কুলে পড়ি। এইভাবে তোর বাপের ঘরে আমি আর মা খাইতে লাগলাম। অন্য কোন খরচ নাই। আব্বা সকালে উঠে ফজরের নামাজ পড়ে নুরু বুবুর বাসায় চলে যান সাইকেল চালিয়ে। বড় আপা তখন জাফর খান রোডে থাকতেন। দুলাভাই আব্বাকে অন্য রকম রেসপেক্ট করতেন। দুপুরে খাইয়া, রাতে খাইয়া আব্বা বাড়িতে আসে। কাজেই আব্বার হিসাব নাই। আমি জন্মের পর দেখেছি আব্বা বড় আপার বাসায় থাকেন। ১৯৮৯ সালের ২৭ নভেম্বর আব্বা মারাও যান বড় আপার বর্তমান বাসায়।
তোর বাপের ৬ গন্ডা আগেই বিক্রি করে দিছে। এইভাবে কিছুদিন তোদের ঘরে মা আর আমি খাইয়া, মা দেখলেন যে অসুবিধা হইতেছে। মা জমি আর আমারে নিয়া আলাদা হয়ে যান। সেই জমিতে ধান চাষ করা হয়। মা আর আমি এক সাথে খাই। মা-ই রান্না করতেন। এইভাবে আমরা মা পুত কিছুদিন আলাদা খাই। পরে তোর বাপ হিটলারি কইরা আবার আমারে আর মারে খাওয়ানোর বিনিময়ে কাশেম ভাইয়ের ছয় ৬ গন্ডা, মালেক ভাইয়ের ৬ গন্ডা, আমার আড়াই গন্ডা আর মায়ের নামে সাড়ে ৩ গন্ডা যেটা ছিল সেটা তোর বাপে নিয়া নেয়।
১৯৭৫ সালের ডিসেম্বর মাসে আমি সেভেন পাস করি। যে বছর শেখ মুজিব মারা যান। রেজাউল ভাই মানে ফরিদা আপার হাসব্যান্ড একদিন মাকে বলেন, মা, আমার তো শালী নাই। বাড়িতে থাকলে মন্টুর লেখাপড়া হবে না। আমি তাকে আমার বাসায় নিয়ে যাবো। তখন আমি চলে গেলাম গাংচর 'আনোয়ারা লজ' ফরিদা আপার বাসায়। ভর্তি হলাম ইউসুফ হাই স্কুলে। তখন থেকে রেজাউল ভাই আমার খরচ দেয়। মা বাড়িতে। ফরিদা আপার বাসায় দুই বছর থাকার পর ১৯৭৭ সালের ১৫ ডিসেম্বর রাতে রেজাউল ভাই এক্সিডেন্ট করে পঙ্গু হয়ে যান। রেজাউল ভাই তখন চান্দিনার এক মাইল পশ্চিমে আড়িখোলা হাবিবুর রহমান টেক্সটাইল মিলে সুপারভাইজার হিসেবে চাকরি করতেন। রেজাউল ভাই এক্সিডেন্ট করার পর আমি চলে আসি বড় আপার ঝাউতলা সৈয়দ শামসুল হক সড়কের বাসায় আহমেদ মঞ্জিলে। ১৯৭৮ সালে।
এখানে ছিলাম এক বছর। এরপর আলী আকবর দুলাভাই আড়িখোলা হাবিবুর রহমান টেক্সটাইল মিলে বুবুসহ সবাইকে নিয়ে চান্দিনা চলে যান। মিলের অফিসার্স কোয়ার্টারে ৷ আব্বাকেও নিয়া যান। এখন আমি কই যাই? আমি শহরের স্কুলে পড়ি। আমি ঝাউতলা তাহের, জাহাঙ্গীর তারার বাসায় থাকি। ধর্ম সাগর পার রাত কাটাই। এইভাবে চলতেছিলো। তোর বাপ কোনো খবর নেয় নাই।
কিছু দিন পর ১৯৭৯ সালের প্রথম দিকে ফিরোজা আপার হাসব্যান্ড দেলোয়ার দুলাভাই টঙ্গীর বাসা ছেড়ে মনোহরপুর সোনালী ব্যাংকের পিছনে আনোয়ারা ভিলায় বাসা ভাড়া নেয়। মা পাগলের মতো দুলাভাইয়ের কাছে যান। গিয়ে আমার সমস্ত কিছু বলেন। আমারে লইয়া মা বিপদে পড়ছেন। এখন আমারে কি করা যায়। এইসব বুঝাইয়া বলেন। তখন দেলোয়ার দুলাভাই বলেন, তারে আমার বাসায় থাকতে কন। একদিন বিকালে আনোয়ার মামু, নাজমার চাচতো ভাই- দুলাভাইয়ের ভাতিজা পুলিশ লাইন আসে আমাকে খুঁজতে। আমাকে দেখে বলে, মন্টু মামু, নানি বাসাত আইছে। আপনেরে যাইতে কইছে। তখন আমি গিয়ে সোনালী ব্যাংকের পিছনে 'আনোয়ারা ভিলা' বাসায় উঠি। দুলাভাই বলেন, তুমি আমার বাসায় থাকো। আর লেখাপড়া করো। ভাগ্নীদের দিকে খেয়াল রাইখো। সেই থেকে আমি ১৯৮৩ সাল পর্যন্ত এই বাসায় ছিলাম। এই লাড়ালাড়িতে আমার ব্রেক অফ স্টাডি হয়। এখান থেকেই আমি মেট্রিক, ইন্টার পাস করি।
৮৩ সালের শেষ দিকে নাজমার আব্বা রামঘাট বাসা করলে আমি সেখানে চলে যাই। ১৯৮৪ সালের জুলাই মাসে আমি শিক্ষা বোর্ডে চাকরি নেই। দুইটা ফার্স্ট ডিভিশন পেয়েও টাকার অভাবে আমার ইউনিভার্সিটিতে ভর্তি বন্ধ হয়ে যায়। নইলে আমি আজ দেশের বুদ্ধিজীবী থাকতাম। তোরা কস তোর বাপ সবার জন্য করছে। কি বাল করছে? ১৯৮৯ সাল পর্যন্ত রামঘাট ফিরো বুবুর বাসায় ছিলাম। ১৯৮৬ সালের জানুয়ারি মাসে আমি এক বন্ধুর কাছ থেকে টাকা নিয়ে স্টুডেন্ট ভিসা নিয়ে জাপান চলে যাই শিক্ষা বোর্ডের চাকরিতে রিজাইন করে। সেখানে ভাষাগত সমস্যায় লেখাপড়া সম্ভব নয় বলে ৮৭ সালের ফেব্রুয়ারিতে ফিরে এসে বিএ পরীক্ষা দিয়ে সেকেন্ড ডিভিশনে পাস করি। তোরা গান গাস তোর বাপ এই করে ফেলছে, সেই করে ফেলেছে। ঠিক জিহবা টেনে ছিড়ে ফেলবো তোদের। বাল করছে তোর বাপ। মা, আর আমারে খাওয়ানোর জন্য দেয়া কাশেম ভাই ও মালেক ভাইয়ের ৬+৬=১২ গন্ডা, আমার আড়াই গন্ডা আর মার জমি সব তোর বাপ খাইছে। তোর বাপ ১৯৮১/৮২ সালে আমিন ভাইসহ সিরিয়া যাইবো বলে সেই জমি বিক্রি করে দূর্গাপুরের হুমায়ুন চেয়ারম্যানের বড় ভাই হাবীব সাহেবকে টাকা দেন। কিন্তু যাইতে পারে নাই। সেই টাকা নিজে খাইছে আর তোরারে খাওয়াইছে।
বিএ পাস করে আমি ঢাকায় জেনিসের ডাইরেক্টর হিসেবে দায়িত্ব পালন করার জন্য ঢাকা চলে যাই ১৯৮৮ সালের ডিসেম্বরে এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগে ভর্তি হই। এক বছর আমি ফকিরাপুল মোড়ে নুরানী হোটেলের ৫৫ নাম্বার রুমে থাকি আর জেনিসের কাজ করি। তখন জেনিস এখানে ছিলো। ডিআইটি এক্সটেনশন রোডে। মুন্না জাপান। জেনিসের অফিস নেওয়া থেকে সবকিছু আমি করি। ফাঁকে ফাঁকে ইউনিভার্সিটিতে যাই। ক্লাসও করি। মুন্নার লগে আমার মতবিরোধ হইছে এই জিদ্দে আমি জেনিস ছেড়ে দেই এবং ইউরোপে চলে যাই ১৯৮৯ সালের ডিসেম্বরে।
মতবিরোধের কারণ আমার ভালো লেখাপড়া, দেশের এক নাম্বার বিশ্ববিদ্যালয়ে নামি-দামি সাবজেক্টে এম.এ পড়ি। দেখতে সুন্দর, স্মার্ট। জেনিসের কাজে সিনসিয়ারিটি, সততা এসব দেখে মুন্নার বাবা মা তাদের চতুর্থ মেয়ে শেলিকে আমার কাছে বিয়ে দিতে চায়। আমি শেলিকে বিয়ে করবো না। মুন্নার আট বোন। একটাও দেখতে সুন্দর না। ওরা মাঝে মাঝে ফিরো আপার বাসায় যেত। একদিন আপা আমাকে বলে 'মুন্নার বইনডি একটাও সুন্দর না। দেখলে মায়া লাগে না।'
৯৫ তে গেলাম আমেরিকায়। তো তোর বাপ যে তোরারে কইছে আত্মীয়-স্বজন খাওয়াইছে, এই করছে, সেই করছে,কি বাল ফালাইছে তোর বাপ? হিসাব দিলাম। আমারে আর মাকে নিয়া তোর বাপ ব্যবসা করছে। আর তোরা বলিস তোর বাপ সবাইরে খাওয়াইছে। ফাইজলামি মারাও?
রেজাউল ভাই এক্সিডেন্ট করার পর কিছুদিন ফরিদা আমাদের বাড়িতে ছিলেন। তোদের ঘরে খাইছে। এরপর ফরিদা আবার চলে গেছেন নুরু বুবুর বাসায়। তারপর ফিরো বুবুর বাসায়। এই বাসা, সেই বাসা থেকে চাকরি করছে। আর বাড়িতে আসলে তোর বাপের লগে দেখা করতে এক পোটলা নিয়া আসতো। মাগনা খাইছে না তোর বাপের ঘরে কেউ। দুই বেলা খাইলে ১০ বেলার টাকা দিয়া গেছে। সেখান থেকে তোরাও খাইছোস। এমন কোন আত্মীয়-স্বজন নাই যে তোর আব্বারে সাহায্য করে নাই। শেষমেশ তোর বাপ ফরিদার অংশও লেইখ্যা লইছে।
৯৫ সালে আমি ইউরোপ থেকে দেশে এসে যখন কোহিনূরের বিয়ে হয় তখন মা একদিন আমাকে ডেকে নিয়ে বললেন, তোর বাপের যক্ষা রোগের চিকিৎসার টাকা নাই। আমারও টাকা তখন শেষ। আমার গলায় তখন দুইটা স্বর্ণের চেইন ছিল। এক পাকিস্তানি বন্ধু তারিক আমারে উপহার দিছিলো ইউরোপে। কোহিনূরের বিয়ের ভিডিওতে আমার গলায় সেই চেইন দুইটা আছে।
আমি কাপরিয়াপট্টি লুতু ভূঁইয়া জুয়েলার্সে গিয়ে সেই চেইন দুইটা ১১ হাজার টাকা বিক্রি করে তোর আব্বার হাতে ১০ হাজার টাকা দিছিলাম চিকিৎসা করার জন্য। কু*ত্তা*র বাচ্চা আজ আমার কোন খোঁজ নিস না তোরা!
১৯৯৬ সালে তোর বাপ আমেরিকায় আমাকে চিঠি লিখে যে, নার্গিসের বিয়ে ঠিক হইছে। কি করবে বুঝতে পারছে না। উনি আমার পরামর্শ চায় চিঠিতে। তোর বাপ আমারে দুই পয়সার কেয়ার করে না। এখন আমার কাছে তোর বাপ পরামর্শ চায়! আমি আমেরিকায় থাকিতো তখন আমি মোটা। পরামর্শের আড়ালে তিনি আমার কাছে টাকা চাইছে। নার্গিসের বিয়ের জন্য আমেরিকা থেকে প্রথমে ৫০ হাজার টাকা পাঠিয়েছি তোর বাপের একাউন্টে। সেই ১৯৯৬ সালে। তখন ৫০ হাজার টাকায় ১ কানি জমি কেনা যায়। ২৮ বছর আগে।
দুই তিন মাস পর তোর মা আমারে চিঠি লিখে জানাইলো, তোর মা তো লিখতে পড়তে পারে না তাই চিঠি নার্গিস লিখতো। সেই চিঠিতে তোর মা লিখেছে,
"তুমি আলম, শাহ আলমকে বলিও না। (আলম, শাহ আলমের সাথে আমার খুব ঘনিষ্ঠতা ছিলো)। তোমার ভাইয়ের যে রোগটা হইছে এইটা নার্গিসেরও হইছে। চিকিৎসায় তোমার সব টাকা শেষ। এখন তুমি টাকা না দিলে নার্গিসকে বিয়ে দিতে পারবো না।"
সত্য না মিথ্যা কার বালে জানে। আমি আবার ৫০ হাজার টাকা পাঠাইছি নার্গিসের বিয়ের জন্য তোর বাপের একাউন্টে। এই নার্গিস কোনো দিন আমার একটা খোঁজ নিছে? তাইরে বিয়া দিছি আমার টাকা দিয়া। বেঈমান।
রবির সাথে তোর অপকর্মের পর আমি যখন তোর বাপের সাথে যোগাযোগ বন্ধ করে দিছিলাম। তখন তুই আমাকে নিউইয়র্কে চিঠি লেখস নাই বদমাইশ? মনে নাই সেই লাইন?
"কাকা, আপনি না আমাকে আম্মু ডাকতেন। মানুষ ভুল করে আবার ক্ষমাও পায়। কাকা, আমাকে ক্ষমা করে দিয়ে আম্মু বলে আপনার বুকে টেনে নেন।"
মনে থাকবো ক্যামনে? তোদের জন্মই তো হইছে বেঈমান হইয়া।
এরপর আমি নিউইয়র্ক থেকে ফ্লোরিডায় গেলাম। তোর ভাই ওই বেঈমান সোহাইগ্যা আমারে চিঠি লেখছে। সে ভিক্টোরিয়া কলেজে ম্যানেজমেন্টে ভর্তি হইছে। তার নাকি পড়ার খরচ চলে না। তোর বাপ লিটনের ব্রিক ফিল্ডে চাকরি করে। আমি দক্ষিণ বাড়ির হাকিম ভাইয়ের ফোনে ৬৮০২ নাম্বারে কল করে সোহাইগ্যারে জিগাইলাম, কতো টাকা তার পড়ার খরচ? সে জানালো, বাড়ি থেকে ক্লাস করে। মাসে ১৫০০ টাকা হলেই চলবে। ২৬/২৭ বছর আগে ১৫০০ টাকা অনেক। আমি বললাম, আমেরিকা থেকে প্রতিমাসে ১৫০০ টাকা পাঠানো সমস্যা। তখন অনার্স কোর্স তিন বছর ছিলো। আমি বললাম, মাসে ১৫০০ টাকা হলে বছরে ১৮ হাজার টাকা। তিন বছরে ৫৪ হাজার টাকা। আমি তিন বছরের অনার্স খরচ একবারে তার একাউন্টে পাঠাইছি ৬০ হাজার টাকা।
কয়েক মাস পর সোহাইগ্যা আমারে আবার চিঠি লেখছে, তোদের মাটির ঘরটা ভাইঙ্গা লাইছে। তোদের জায়গা হয় না। তার একটা বড় ভাই নাই। আমিই তার বড় ভাই। টাকার জন্য চাচারেও ভাই ডাকে! কতো বড় চালাক ! এইসব বলে আমাকে দুর্বল করে টাকা খাইতো। টাকার কি মাহাত্ম্য। এখন আমি টাকা দিলে একটা ঘর করতে পারে। যদি কোনদিন অবস্থা ভালো হয় তখন আমারে দেখবে। আমি তখন তোদের ঘর করার জন্য সোহাইগ্যার একাউন্টে ৯০ হাজার টাকা পাঠাইছি। ব্যাংক একাউন্ট নাম্বার আমার কাছে আছে।
একদিন জায়গা নিয়ে বাড়িতে ঝগড়ার পর সেই সোহাইগ্যা আমার গেইটে লাথি মাইরা কইছিলো, মোবাইল ফোনটা নাকি আমার পোন্দে দিয়া ভইরা দিবে। আমি বাড়ি ছাড়ছি তোর বাপ আর সোহাইগ্যার জন্য। তোদের অত্যাচারে। তোর বাপ লাথি দিয়া আমার ওয়াল ভাঙছিলো। যেদিন সোহাইগ্যা আমার গেইটে লাথি দিয়া বলছিলো, মোবাইল ফোনটা পুন্দে দিয়া ভইরা দিবে। আমি তখন বাসার ভিতর থেকে ভিডিও করছিলাম। সেদিন যদি দুই বছরের জেমিমা কুমিল্লা বাসায় না থেকে ঢাকা বাসায় থাকতো, তো সেদিনই সোহাইগ্যারে মাইরা ফেলতাম। আমার গেইটের ভিতর দা, ছেনি, খুন্তি, কোদাল, বিষ সব ছিলো। ফুল গাছের পরিচর্যা করার জন্য এসব দরকার ছিলো। এরপর সারাজীবন জেল খাটতাম। আইজ ১৬ বছর তোরা সোহাইগ্যার মৃত্যু দিবস পালন করতে হইতো।
তার অনার্স পড়ার টাকা দিছি। থাকার জন্য ঘর কইরা দিছি। আর আমার গেইটে সোহাইগ্যা লাথি দেয়! এমন পোলা মাইরা ফেলাই উচিৎ।
আমি যখন দা নিয়া বাইর হতে চাইছিলাম তখন জেমিমার মা আমার হাত ধরে জেমিমারে দেখাইয়া ইঙ্গিত দিলো, তুমি কিছু করলে জেমিমারে তারা মাইরা ফেলবো। বাইচ্চা গেছে সোহাইগ্যা সেদিন। আল্লাহর কাছে শুকরিয়া আদায় কর।
এখন থেকে আমি মাঝে মাঝে বাড়িতে আসবো। তোদের ফ্যামিলির কেউ আমার সাথে এই জীবনে আর কোনো কথা বলবি না। তোদের সাথে সম্পর্ক জীবনেও শেষ মরণেও শেষ। আমিতো অসুস্থ। সারাদিন বাসায় শুয়ে থাকি। ডাল, ভাত কয়টা রান্না করে খাই। প্রতিদিন বিকেলে দুই ঘন্টা হাঁটি। শংকরপুর দিয়ে চক্ষু হাসপাতাল হয়ে বরদুইল পর্যন্ত যাই। আবার কোনো দিন রেল স্টেশনে হাঁটতে যাই। এখন ঘোড়ামারার দিকে হাঁটবো।
আমি ওয়াল করায় আলম তাদের অসুবিধা বেশি হইছিলো। হেরা তো আমার ওয়াল ভাঙেনি। তোর বাপ আমার ওয়াল ভাঙছে। এর জন্য তুই দায়ী। তোদের দিকে আমার একটা পকেট গেইট ছিলো। আমি সেটাই বন্ধ করছিলাম। তুই দেইখ্যা বাপেরে ব্রিক ফিল্ডে ফোন কইরা খোঁচা মারছোস। তাই উনি উত্তেজিত হইয়া আইসা আমার ওয়াল ভাঙছে। তুই এই বাড়িত বিয়া কইরা তোর বাপের গুপ্তচর হিসেবে কাজ করোছ। আরেক দিন আমি তোর বাপের লগে তর্কাতর্কি করায় তুই সেইদিক থাইকা দৌঁড়াইয়া আইসা আমারে কইছিলি,
' আমার বাপ এইনি পাওয়া আছিলো'। তুই হইলি সবচেয়ে খারাপ একটা মেয়ে৷ তুই সেইদিক থাইকা এই দিকে আসছিস কেনো ? আমার পোলা মাইয়া নাই বলে আমারে একা পাইয়া তোরা বাপ, পুত, মাইয়া দৌঁড়াইয়া আইতি। তোর বাপের সাথে তর্কাতর্কি হলেই তোরা মাইয়া পোলা তোদের বাপের পক্ষ হইয়া দৌঁড়াইয়া আইতি। তোরারে আমি ৫০ বছর ধইরা চিনি। তুই হইলি আমার সব ভাতিজিদের মধ্যে সবচেয়ে খারাপ। প্রেমের নামে তুই যা করছোস তা আর কেউ করেনি।
আমেরিকা থেকে এসে ২৮ জানুয়ারি ২০০৪ আমি গাংচর ফরিদা আপার বাসায় উঠেছিলাম। ওমা! দেখি সেখানে হ্যাপি। বাড়িতে এসে যেনো আমি অন্য কারো ঘরে না উঠি সেজন্যই তোর বাপ আগেই হ্যাপিরে সেই বাসায় পাঠাইছে। পরদিন হ্যাপি আমাকে বাড়িতে নিয়ে আসে এবং তোদের ঘরে উঠি।
হ্যাপিরে হোন্ডার পিছে নিয়া ডেইলি ২/৩ হাজার টাকার বাজার করিনি? তোদের কোনো অভাব ছিলো? তোদের রুমে স্টিল আলমারিতে টাকার বান্ডেল রাখতাম। আলমারিও আমিই কিনেছিলাম। চাবি হ্যাপির কাছে ছিলো। কোন দিন হিসাব চাইনি। আমার হোন্ডা সোহাইগ্যা দিনের পর দিন চালাইছে না? ট্রাক্টর কিনে 'হ্যাপী ট্রান্সপোর্ট ' নাম দিছিলাম না? মাইসে বুদ্ধি দেয় জায়গা কিনার আর তোর বাপ বুদ্ধি দিছে ট্রাক্টর কিনার!!! ট্রাক্টর কিনার পর কোম্পানি একটি রঙিন টেলিভিশন উপহার দেয় আমাকে। সেই টেলিভিশনও আমি তোদের ঘরে দেই। এরপর ডিস শাহীনকে ২০০০ টাকা দিয়ে তার কিনে তোদের বাসায় ডিসের কানেকশান দেই । তোরা কি জীবনে টেলিভিশন দেখছোস নি? আমার ঘরে তখনও টেলিভিশন নাই। এইবার বুঝছোসনি কি করছি তোদের জন্য? হ্যাপির বিয়ে হইছে আমার বাসায়। হ্যাপির বিয়ের পর আমি আমার বাসা ছেড়ে তোদের টিনের ঘরে এসে ১৫ দিন থাকি। হ্যাপি আর কাজল যেন আমার বাসায় নতুন কাপল হিসেবে হানিমুন করতে পারে। সেই হ্যাপি কোন দিন আমার খোঁজ নিছে? তোরা সবডি বেঈমান।
আমেরিকা থেকে এসে এক বস্তা টাকা নিয়ে আমি তোদের ঘরে উঠছিলাম। তখন আমার বয়স ৪২। আমার জন্য অনেকগুলো বিয়ে আসছিলো। পুলিশ লাইন উজালা পয়েন্টের মালিক মুসলেম সাহেব তার দ্বিতীয় মেয়ে আমার কাছে বিয়ে দেয়ার প্রস্তাব পাঠায়।
মান্নান চাচা ( মনু চাচা) আমাকে এরশাদকে দিয়ে ডেকে উনার বাসায় নিয়ে বলেন, ভাই, ভাবী তো নাই।(মানে আমার আব্বা আম্মা।) চাচা হিসেবে তো আমাদের দায়িত্ব আছে। চাচা বিয়ে নিয়ে আলোচনা করেন আমার সাথে। এই বিষয় এরশাদও জানে। চাচাতো ভাই এরশাদ এখনো জীবিত আছে। জিজ্ঞেস করে জেনে নিস। আমি একদিন তোর বাপকে বললাম। তিনি মুখ ভার করে ভাব নিয়ে কিছু বলেন নি। তোর বাপ মেয়ের জামাইদের সাথে বন্ধুর মতো হাসাহাসি করে। আর আমার সাথে ভাব নিয়ে গম্ভীর হয়ে ব্যক্তিত্ব প্রকাশ মারায়। এটাও উনার এক চিটারি।
এরপর মিনু ফুফুর জামাই রউফ স্যার একদিন আমাকে ফোন করে বলেন, তোমার তো বিয়েশাদী করা দরকার। তোমার বয়সের সাথে মিল রেখে একটা ভালো মেয়ে আছে আমার কাছে। মেয়েটা ঢাকা বিএএফ শাহীন স্কুলের সহকারী প্রধান শিক্ষক। তোমার সাথে মানাবে। আমি ফুফাকে বললাম, ফুফা আমিতো সহিদ ভাইয়ের কাছে আছি। উনিই আমার অভিভাবক। নিজের বিয়ের কথা কিভাবে উনাকে বলি। আপনি ফোন করে উনার সাথে আলাপ করেন।
ফুফা উনাকে ফোন করে আমার বিয়ের কথা বললে, তোর বাপ ফুফাকে বলেন,
"হেতে পাগল। পরে কোনো ঝামেলা হইলে আমি দায়িত্ব নিতে পারবো না।" উনি একজন শিক্ষিত মহিলার সাথে আমার বিয়ে দিতে চেয়েছিলেন। একজন বড় ভাই কি এমন কথা বলতে পারেন? তোর বাপ আর তোরা চাসনি আমি বিয়ে করি। আমি ব্যাচেলর থাকলে তোদের লাভ। আমার বাড়ি করায় তোদের এতো আগ্রহ। আমার বিয়েতে আপত্তি কেনো? সব বুঝছি পরে। তোর বাপ ভাবছে, হেতে (আমি) ছোটবেলা থেকে শহরে আছিলো। এরপর ইউরোপ আমেরিকা। হেতে কি আর গ্রামে থাকবো নি? ঝোঁকের মাথায় বাড়ি কইরা আবার বিদেশে যাইগ্যাইবো।। বাড়ি তো তোরাই ভোগ করবি।
উল্টো তোর বাপ পাগল হয়ে গেছিলো হ্যাপিকে বিয়ে দেয়ার জন্য। ৪২ বছরের ছোট ভাই অবিবাহিত অথচ তিনি তার ২০ বছরের মেয়ের বিয়ের জন্য অস্থির! আমাকে বাদ দিয়ে তিনি হ্যাপিকে বিয়ে দেন। দেড় বছর পর আমি কাউকে না জানিয়ে একক সিদ্ধান্তে বিয়ে করি এই জিদ্দে। আমাকে বিয়ে করানো তোর বাপের দায়িত্ব ছিলো না? দেড় বছর আমি অপেক্ষা করছি। তোর বাপ আমাকে বিয়ে করায় নাই।
তোর বাপ যে আমিন ভাইদের কাছে পুকুর পাড়ে ১ গন্ডা জায়গা বিক্রি করছে সেখানে আমার জায়গা নাই? আমি, বাবলুরা তো সাইন দেইনি। সেখানে আমার জায়গা আমাকে বুঝিয়ে দিতে বলবি।
আলম গ্যারেজ করার পর তোর বাপ আমারে কইলো, আলম তোদের দক্ষিণ দিকের গেইট বন্ধ করে দিবে।তাই আমি আমার পুকুর পাড়ের জায়গা থেকে আড়াই হাত প্রস্থ আর ৬৫ ফুট লম্বা জায়গা যেন তোর বাপেরে দেই। আমি কইলাম অসুবিধা নাই। আপনি ব্যবহার করেন। পরে আমি যখন হাসান আর জসিমের কাছে পুকুরে ৩ গন্ডা জায়গা বিক্রি করি, তোর বাপ ডিসি অফিসের কাছে রেজিস্ট্রি অফিসে যায়। হাসান জসিমের দলিলের সাথে তোর বাপ চালাকি করে আমার আড়াই হাত প্রস্থ, ৬৫ ফুট লম্বা জায়গা সাব কাবলা দলিল করে নেয়। আমি সই করে দেই। কেনো? তোর বাপ আমার জায়গা দলিল করে নিবে? এই জায়গার দাম কতো? উনার মতলব ভালো হইলে হেবা দলিল করতে পারতো না?
লেখলে আরও বহুকিছু লিখতে পারি। তোদের কাহিনির তো শেষ নাই।
শেষ কথা, ভদ্রলোকের মতো আমি যে হিসাব নিচে দিচ্ছি এই টাকাগুলি দিয়ে দিতে বলবি তোর বাপ আর সোহাইগ্যারে। বেশি চাইবো না আর নইলে ২৫/২৮ বছর আগের এত টাকা বর্তমান মূল্য ১ কোটি টাকা দেওন লাগবো।
নার্গিসের বিয়ে----১ লাখ
সোহাইগ্যার পড়ার খরচ ৬০ হাজার
তোদের ঘর করার খরচ ৯০ হাজার
আর যে জায়গা দিছি তা তার দাম।
আমিন ভাইদের কাছে যে এক গন্ডা বিক্রি করছে সেখানে আমার জায়গার দাম।
বাকিগুলি মাফ করে দিলাম। তোরা এখন ভালো আছোস। তোর বাপ তিন মাইয়া বিয়া দিয়া এখন মেয়ে জামাইদের কাছ থেকে সাহায্য পায়। সোহাইগ্যা এক বউ ছাইড়া আরেক ধনী মাইয়া বিয়া করছে।
আমার প্রাপ্ত বয়স্ক কোনো সন্তান নাই যে এই বৃদ্ধ বয়সে
আমারে দেখবো।
কার মাইয়া পোলা কি সব কেলেংকারী করছে সব জানি। আমাকে ক্ষেপাইতে মানা করছি। নইলে আরও আমলনামা প্রকাশ করবো।
এই চিঠি আমি অনলাইনে দিতাম না। ৬ মাসেও যেহেতু তোরা আমার সাথে এই নিয়ে যোগাযোগ করিস নাই তাই সবাইকে জানানোর জন্য এই চিঠি অনলাইনে দিলাম।
তোর বাপ নাকি কইছে, দরকার হইলে তারে ( আমারে) মাইরালামু। তবুও টাকা দেমু না। আমার এক ছাত্র এখন সেনাবাহিনীর ক্যাপ্টেন। তাকে বলে রাখছি। অপারেশন ডেভিল হান্ট চলছে।
তোরে চিঠি লিখে জানাইছি কারণ তুই এখন এই পরিবারের হর্তাকর্তা।
(তোর বাপেরে পুকুর বা বসত থেকে আধা গন্ডা বিক্রি করতে বলবি। এতেই আমার পাওনা টাকা হয়ে যাবে।এতো হোগা ছড়াইয়া থাকার দরকার নাই। মাইসেরে পোন্দাইয়া নিজের পোলা মাইয়ার জন্য সম্পদ রাখে তোর বাপে।)
করিম চৌধুরী
গোমতী হাউজিং
তারিখ : ১৮ই সেপ্টেম্বর ২০২৪
বি.দ্র. এই বিষয়ে আমার সাথে তোদের পরিবারের কারো কোনো কথা বলার দরকার নাই। তৃতীয় কোনো ব্যক্তির মাধ্যমে আমার নামে চেক দিয়ে দিলেই চলবে।
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন