আমি একজন কট্টর বিএনপি সমর্থক। ১৯৭৭ সাল থেকে। মনে আছে ১৯৭৭ সালের ২১শে এপ্রিল জিয়াউর রহমান প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ গ্রহণ করেন। সেই সময় থেকেই আমি বিএনপির সমর্থক। জিয়াকে দেখে, তার সততা, তার পরিশ্রম, দেশের জন্য তার মায়া, মানুষের জন্য তার মায়া, গ্রামেগঞ্জে ঘুরে বেড়ানো। এসবই জিয়ার আদর্শ ছিলো। জেনারেল জিয়াউর রহমানের সাথে আমি দুইটা
খাল কাটা কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ করেছিলাম। আমাদের স্কুল থেকে বাসে করে নিয়ে যাওয়া হয়েছিলো। সেই থেকে আমার মন মস্তিষ্ক হৃদয়ে বিএনপি গেঁথে গেছে।
কিন্তু আজ বিএনপি'র কিছু কর্মকান্ডে আমি অত্যন্ত ব্যথিত এবং মর্মাহত। আমি মনে করি না প্রফেসর ইউনূস ক্ষমতা প্রলম্বিত করার চেষ্টা করছেন। কয়দিন আগেও তিনি বিমস্টেক সম্মেলনে নির্বাচন কবে হবে তা বলেছেন।
এই সরকারের ম্যান্ডেট কি? আমরা পরিষ্কার বুঝি গণঅভ্যুত্থান হচ্ছে এই সরকারের ম্যান্ডেট। গণঅভ্যুত্থান কোন বায়বীয় বিষয় না। ঢাকা এবং অন্যান্য জেলার দেয়ালে এখনো লেখা আছে কোন আশা আকাঙ্ক্ষা নিয়ে এই গণঅভ্যুত্থান হয়েছিলো।
এই আশা আকাঙ্খার ৫০ ভাগ শেখ হাসিনার জন্য প্রযোজ্য। বাকি ৫০ ভাগ তাদের জন্য প্রযোজ্য। এখন যারা রাজনীতি করবেন, ভবিষ্যতে ক্ষমতায় যাবেন তাদের জন্য। প্রফেসর ইউনূস বা তার সরকারের অনেক উপদেষ্টাদের ব্যাপারে আমাদের মন্তব্য থাকতেই পারে।
আমরা তো একটা সুযোগ পেয়েছি। যেভাবে ফ্যাসিজম কায়েম হয় তথাকথিত নির্বাচনের পরপরই। সেই জায়গা থেকে বাংলাদেশ বের হতে পারবে কিনা, রাজনৈতিক সংস্কৃতিটা আমরা বদলাতে পারি কিনা, এবং সাত মাসে রাজনৈতিক দলগুলো বিশেষ করে বিএনপি এত কথা বলেছে কিন্তু কোন দলের সংস্কৃতি বদলানোর খবর আমরা কি পেয়েছি? পাইনি।
যেটি পেয়েছি আওয়ামী লীগ হওয়ার চেষ্টা করছে দলগুলো। আওয়ামী লীগ যা যা খারাপ কাজগুলো করেছিল, এখন যার যেখানে প্রভাব প্রতিপত্তি আছে সে আওয়ামী লীগ হওয়ার চেষ্টা করছে।
তারেক রহমানের বক্তব্য ছাড়া, তার ম্যাচিউরিটি ছাড়া মাঠে-ঘাটে প্রান্তরে যে চাঁদাবাজি দখলবাজি মাস্তানি থানা ঘেরাও এর মাঝে কোন পরিবর্তন দেখা যায়নি। এবং দেখুন মনে রাখতে হবে এই দলটি ১৬ বছর ক্ষমতার বাইরে ছিল। আমরা তখন প্রতিদিন এই দলের গণতান্ত্রিক অধিকারের পক্ষে কথা বলেছি। স্বৈরতান্ত্রিক শাসনের বিরুদ্ধে কথা বলেছি।
আমি নিজে ১৫ বছর বিএনপি'র পক্ষে লেখালেখি করেছি। জুলাই মাসের ১ তারিখ থেকে আগস্ট মাসের ৫ তারিখ পর্যন্ত একদিনের জন্যও রাতে ঘুমাইনি। অনলাইনে ছাত্রদের আন্দোলনকে সমর্থন করে লেখালেখি করেছি।
এখন যদি আমি বিএনপির পক্ষে কথা বলতে না পারি তবে তো আমাকে সন্দেহ করতে হবে না। আপনারা নিজেকে সন্দেহ করুন যে কি কারণে আমাদের মতো কট্টরপন্থী বিএনপির সমর্থকরা আজ আপনাদের বিরোধিতা করছে।
এসব কথা বললে অনেকেরই মনে হতে পারে যে আমরা অন্তর্বর্তী সরকারকে সমর্থন করছি। হ্যাঁ তা তো করছিই। আমরা সংস্কার চাই। আমরা রাষ্ট্র সংস্কার চাই। আমরা নতুন বন্দোবস্ত চাই। আমরা পুরনো রাজনৈতিক সংস্কৃতি দূরে ঠেলে নতুনত্বের দিকে যাত্রা করতে চাই। বিএনপির জন্য কি পরিণতি অপেক্ষা করতেছে তা ভবিষ্যৎ বলতে পারবে।
বিএনপি যদি দলের সংস্কার করে, রাজনীতি সংস্কার করে আর তার নেতৃত্বের সংস্কার করে, নেতৃত্বের আচরণের সংস্কার করে তাহলে বিএনপির জন্য একটা সুসময় অপেক্ষা করছে।
সংস্কারের কথা বললেই বিএনপি সন্দেহ বাতিক হয়ে ওঠে। সব সংস্কারের তো দরকার নাই। প্রধান প্রধান সংস্কারে রাজনৈতিক দলগুলো একমত হলে তিন মাসেই সম্ভব এবং ডিসেম্বরে নির্বাচন হতে পারে। কিন্তু কাদের জন্য আপনারা সংস্কার করবেন? কাদের দিয়ে সংস্কার করবেন? তারা যদি একমত না হয়, চোখ রাঙায়?
বিএনপির মির্জা আব্বাস তো বলেছে যে সরকারের সংস্কার মানিনা এবং আমরা ক্ষমতায় গেলে সেগুলো কারেকশন করবো।
বিএনপি আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধ চায় না। আওয়ামী লীগ ২০০০ লোক হত্যা করেছে। ৩১ হাজার মানুষ আহত হয়ে এখনো হাসপাতালে। বিএনপির লোকেরা আওয়ামী লীগের লোকদের আশ্রয়ে আছে। যারা শেখ হাসিনা ও আওয়ামী লীগকে সমর্থন করেছে তারাও হত্যাকারী।
ওই পুরনো ডায়লগ একটা 'রাজনীতিতে শেষ কথা বলে কিছু নাই'। এই কথা বলে সব রাজনীতিবিদরা লুচ্চা হয়ে গেছে। আজকে একদল করে কালকে আরেকদল করে। সকালে এক কথা বলে বিকালে আরেক কথা বলে বলে।
আবার এখন নতুন ডায়লগ সংস্কার একটি চলমান প্রক্রিয়া। চলমান প্রক্রিয়া হইতে ৫৪ বছর লাগে? ৫৪ বছর কি আপনারা চুল ফালাইছেন?
বিএনপির ডায়লগ নির্বাচিত সরকার সংস্কার করবে। এই বাগারম্বর আপনার রাজনৈতিক চেহারাটি মানুষের কাছে পরিষ্কার হচ্ছে।
বিএনপি নেতৃত্বকে খুব দ্রুত এগুলো বুঝতে হবে। ফেসবুক পোস্টে দেখেন না আপনারা নির্বাচনের কথা বললেই যে গালাগালি হয় কি পরিমাণ?
বাংলাদেশের রাজনীতির নামে অপরাজনীতি হয়ে আসছে গত ৫৪ বছর। বিএনপির আমলও বাদ যায় নাই। নেতৃত্বের নামে কুৎসা নেতৃত্বের বিকাশ ঘটে। যারা রাজনীতি করে তাদের মূলত কোনো পয়সা নেই। তাদের বৈধ আয় নেই এবং আমাদের চোখের সামনে তারা সম্পদের মালিক হয়ে যায়। আমরা কি বুঝতে পারিনা এরা কারা? আমরা বুঝতে পারি না কোন পথে তারা সম্পদ অর্জন করেন?
সাংবিধানিকভাবে যে স্বৈরতন্ত্র কায়েম করা যায় সেখান থেকে তো সংবিধানকে রক্ষা করতে হবে। ভোট নিয়ে ক্ষমতায় গিয়ে স্বৈরাচারী হয়ে উঠবেন এই পথ বন্ধ করতে হবে।
রাজনীতিবিদদেরকে মানুষ এখন আর বিশ্বাস করে না। ভোটের সময় মিষ্টি মিষ্টি কথা বলে ক্ষমতায় গিয়ে ৫৪ বছরে কি করেছে তা দেশের মানুষ দেখেছে। কাজেই রাষ্ট্র সংস্কার, সংবিধান সংস্কার, নির্বাচন কমিশন সংস্থার থেকে শুরু করে সবকিছু সংস্কার করে নতুন বাংলাদেশ গড়তে হবে। বিএনপি যত তাড়াতাড়ি এই সত্য উপলব্ধি করবে তত তাড়াতাড়ি বিএনপির জন্য ভালো হবে।
© Karim Chowdhury
09.04.2025
Cumilla.
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন