এডুকেশনাল কনসালটেন্সি আদম ব্যবসার আরেক রূপ। আমাদের কলেজ জীবনে আশির দশকে ঢাকার মালিবাগ চৌধুরীপাড়ার ঠিকানা ইউজ করে পত্রপত্রিকায় একটা বিজ্ঞাপন ছাপা হতো। প্রতিষ্ঠানটির নাম ছিল 'চৌধুরী এডুকেশনাল কনসালটেন্ট'।
এই এখনকার মতো যারা ছাত্র হিসেবে বিদেশে যায় এরকম আর কি।
আমার ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা থেকে দেখেছি ইন্টারমিডিয়েট পাস করে এইসব ছাত্র বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের সাথে যোগাযোগ করে মোটা অংকের টাকা পে করে বিদেশে যায়। ২০-২৫ লাখ টাকাও লাগে। যেসব ছাত্ররা এভাবে যায় তারা সেখানে গিয়ে কেউই পড়াশোনা করে না। পড়তে পারে না। বাংলাদেশের অনেক পরিবাররের পক্ষে বিদেশে ছেলে পড়বে তাই প্রতি মাসে টাকা পাঠাবে তা সম্ভব নয়। সাধারন পরিবারের সামর্থ্য নাই প্রতি মাসে মাসে টাকা পাঠানোর।
সেখানে পার্টটাইম কাজ করে, ইউনিভার্সিটিতে ক্লাস করে, আবার ইউনিভার্সিটি পড়া বাসায় পড়ে, নিজে রান্না করে খেয়ে, বাজার করে, নিজের কাপড় নিজে ধুয়ে, ইস্ত্রি করে, অর্থাৎ এ টু জেড সবকিছু নিজে করে এইভাবে পড়াশোনা করা সম্ভব নয়।
আমি নিজেও ১৯৮৬ সালে স্টুডেন্ট ভিসায় জাপান গিয়েছিলাম। পড়াশোনা করা যাবে না বলে আমি দেশে ফিরে আসি।
আরেকটা জিনিস বেশ লক্ষণীয় আমি কাউকে আঘাত দিয়ে এই লাইনটি লিখছি না। আমার পরিচিত, কাছাকাছি এবং ঘনিষ্ঠ জনের মাঝেও এমন অনেকেই আছে যারা এই স্টুডেন্ট ভিসায় বিদেশ গিয়েছেন এবং আবার অনেকেই যাবেন।
এই পোস্টটি সার্বজনীন। কোনো নির্দিষ্ট ব্যক্তি বিশেষকে উদ্দেশ্য করে নয়। আমি দেখেছি যেসব ছেলেদের ভিক্টোরিয়া কলেজে অনার্স পড়ার যোগ্যতা নেই তারা ইন্টারমেডিয়েট পাস করে স্টুডেন্ট ভিসায় অস্ট্রেলিয়া, কানাডা কিংবা অন্যান্য আরো দেশ, ইউরোপের অনেক দেশে যায়।
বাংলাদেশে এডুকেশনাল কনসালটেন্সি প্রতিষ্ঠান অজস্র, অসংখ্য। আসলে মূল উদ্দেশ্য কোনো না কোন ভাবে বিদেশ যাওয়া। সেখানে গিয়ে পড়ালেখা হলে হোক না হলে না হোক একটা চাকরি-বাকরি জোগাড় করে নিয়ে সেটেল্ড হয়ে যেতে পারাই উদেশ্য। আমার এক ছাত্র ২৫ লাখ টাকা খরচ করে অস্ট্রেলিয়ার গিয়েছে লেখাপড়া করতে অথচ সে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার যোগ্যতা রাখে না। এডুকেশনাল কনসালটেন্সি আদম ব্যবসার আধুনিক রূপ।
© Karim Chowdhury
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন