সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

আজাদ চিঠি

 আজাদ, 

রোজার কয়েকদিন আগে পারভেজের বাসায় তোর সাথে আনুষ্ঠানিক বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। এতে আমি বাড়িতে আরও জায়গা পাবো বলে দাবি করি। তুই আমাকে বলেছিলি...

"দুই দিন পর তো রোজা। রোজার মাসে অফিস আদালতে কাজ কম হয়। আমাকে রোজার মাসটা সময় দেন কাকা। আমি সব কাগজপত্র বের করে আপনার সামনে দিবো। আপনি পাওনা থাকলে আপনার অংশ আপনি নিয়ে যাবেন। আমি কারো হক খেয়ে আল্লাহর কাছে জবাবদিহি করতে পারবো না। আমি হজ্ব করছি।"

রোজার মাস শেষে তুই আবার পারভেজের বাসায় আমাকে ডাকিস। তখন বললি,

"আমি ছয় রোজা রাখছি। কয়েকটা দিন সময় দেন।"

উভয় বৈঠকে রোজি ও পারভেজ উপস্থিত ছিলো। এরপর আমি কিছুই বলিনি। রোজার ঈদ গিয়ে কোরবানি ঈদও গেলো। এখনো এই ব্যাপারে আমাকে কিছু জানালি না। প্রায় তিন মাস হলো। এখন যদি আমি রাগারাগি করি, তাহলে বলবি আমি রাগী। বদমেজাজি।

আমি পুকুরে ৩ গন্ডা আর বসতে ৩.৭৫ শতক বিক্রি করেছি। ৩ গন্ডা, ৩.৭৫ শতক = পৌনে ২ গন্ডা। মোট ৪ গন্ডা ০.৭৫ শতক। অর্থাৎ পৌনে ৫ গন্ডা আমি বিক্রি করেছি। বাকি তিন ভাইয়ের জায়গা বসতে, পুকুরে অনেক বেশি। আমি বাড়িতে থাকতে তোদের ডেকে আমার জায়গা আমাকে বুঝিয়ে দিতে বলেছিলাম। কিন্তু চার বছরে আমার ভাগ আমাকে বুঝিয়ে দেস নাই। এই জিদ্দে আমি বাড়ি বিক্রি করে এই বাড়ি থেকে চলে যাই। আমি একা। ২ বছরের একটা মেয়ে। জনতার জোর নাই। আমি তোদের সাথে পারবো না বলেই বাড়ি ছেড়ে দিয়েছি। 

ওই বৈঠকে আমি অত্যন্ত বিনীতভাবে তোকে বুঝিয়ে বলেছিলাম। দ্যাখ, আমার একটা মেয়ে আছে। তাকে আমি কিছুই দিয়ে যেতে পারছি না। আমি যা ই পাই, এই জায়গা বিক্রি করে আমি মেয়েটাকে সেই টাকা ফিক্সড ডিপোজিট করে দিয়ে যাবো। বাবা হিসেবে এটা আমার দায়িত্বের মধ্যে পড়ে। সে কলেজে পড়ে। তার একটা কমপিউটারের খুব দরকার। অথচ আমি কিনে দিতে পারছি না।  এরপরও এখনো কোনো খবর নাই। আমি চাই না এই বয়সে আবার ঝগড়াঝাটি হোক। তুই আমি দুজনেই বৃদ্ধ।

আমার কোনো সমস্যা নেই। নেই কোনো পিছুটান। আমার মেয়ে ঢাকায় থাকে। বাড়িতে কখনো আসবে না। আমিও আর বাড়িতে থাকবো না। আমি যদি আবার কিছু ফেইসবুকে লিখি তবে অনেকেই ক্ষতিগ্রস্ত হবে । তাদের ছেলেমেয়েদের বিবাহিত জীবনে সমস্যা হবে। ভাতিজিদের সংসারেও ঝামেলা হবে। 

যেদিন তুই আমাকে রোজির রান্না করা মাংস দিতে মেডিসিন মার্কেটে এসেছিলি সেদিনও আমি তোর গায়ে হাত বুলিয়ে বলেছিলাম, তোরও একটা মেয়ে আছে। ভাই না বালা, আমার প্রাপ্যটা দিয়ে দে। তুই কথা দিয়েছিলি। 

একদিন ভূমি অফিসে তুই মুখে মুখে হিসাব করে বললি পুকুরে আমি এক শতক পারবো। সেখানে শামীম, অহিদ কাক্কু, তহসিলদার সাইফুল্লাহ উপস্থিত ছিলো। কিন্তু আমি জানি আরও বেশি পাবো। 

পুরনো কথা বলে আমি আর তোকে লজ্জা দিতে চাই না। যেদিন মিয়া আমাকে মারলো আমি তখন কেইস করলাম। এরপরও অনেক ঘটনার পর দুইদিন পরে রুমা মিঠু আসলো। শহীদ ভাইয়ের ঘরে তুই, আমি,  রুমা, মিঠু উপস্থিত ছিল। তখন আমি আমার বক্তব্য পেশ করলাম। আমার যে ওয়ালটা তোদের দিকে বাঁকা ছিল এই ওয়ালটা যেন স্কয়ার সোজা হয়। দুই, শহীদ চৌধুরীর যে একটা পিলার আমার ভিতরে ঢুকে ছিল এক হাতের মত ওইটা শহীদ চৌধুরী বললো ঠিক করে দিবে। তুই তোদের দিকের বাঁকা ওয়াল সোজা করে দিবি বলে কথা দিয়েছিলি।  এই কথার প্রেক্ষিতে তখন মিঠু বলছিল যে ঠিক আছে আমরা এই কথাটা একটা কাগজে লিখে নেই। সহিদ তো এক ডাবল মাদারচোদ। শুয়োরের বাচ্চা তখন বলেছিল মিঠুই আমাদের দলিল। তখন আর লেখা হয় নাই।  এর প্রেক্ষিতে আমি যে কেইস করছিলাম তা প্রত্যাহার করার জন্য পরদিন থানায় তুই আর আমি একসাথে গেছি। মনে আছে কিনা দেখ। যখন সেই কেইস উইড্র করে ফেলি তখন হনুফা নামে একটা এসআই ছিল। তোরে আর আমারে কইছিলো, আপনারা মিল্লা গেলেন আমরারে মিষ্টি খাওয়ানোর টাকা দিবেন না? মনে আছে নি তোর খেয়াল কইরা দেখ। 

এরপর তোরা যখন বাড়ির কাজ শুরু করলি আমি তখন বললাম কিরে আমার ওয়াল না সোজা স্কয়ার কইরা দেয়ার কথা। তুই তখন বললি, কাকা কাজ করার সময় তো আমাদের কিছু জায়গা লাগবো ইট, বালু, সিমেন্ট রাখার জন্য। আপনি কোন চিন্তা কইরেন না আমরা কাজটা শেষ কইরা আপনার এক টাকাও লাগবো না আমরা সিমেন্ট বালু ইট দিয়ে আপনার ওয়ালটা সোজা করে দেব। করছিলি সেই ওয়াল সোজা? আল্লাহকে সাক্ষী রেখে বল আমি মিথ্যা বলছি? এই নিয়া তোর সাথে আমার ঝগড়া হয় মসজিদের সামনে রাতে। সেদিনও মিয়া আমারে বাঁশ দিয়া বারি দিয়া রান পিতাপোড়া কইরা ফেলছিলো। ইমাইন্যাও আইছিলো আমারে মারতে। আমি তখন মসজিদের ভিতরে ঢুকে যাই। তোদের মাইর থেকে বাঁচার জন্য। কিনা করছোস তোরা?  রফিক মিয়ার লগে আমার বাড়ি বিক্রি সময় কথা হয়েছিল যে ওয়ালটা সোজা হবে। এর আগেই বাড়ি বিক্রির কথাবার্তা হয়েছে। ওয়াল সোজা না হওয়ায় রফিক মিয়া আমারে ৩ লাখ টাকা কম দিছে। তোদের কারনে আমার ৩ লাখ টাকা লস হইছে।

আজাদ বহুত কিছু সহ্য করে কিন্তু আমি এত বছর সময় কাটাই দিছি। এখন আমার একটু খোঁজখবর রাখস আমার লগে একটু ভালো হইছস। তোরা কি জীবনে আমার লগে কোনদিন আর যোগাযোগ করতি নাকি আমি ফেইসবুকে চিঠি না লিখলে? আমি জানিনা? উপর দিয়ে যতই ভালো কথা কস আমি এই এলাকায় থাকি আজকে ১৪ বছর। এর মাঝে সোহেলের বিয়ে হয়েছে। সোহেলের বিয়ের আগেও তোরা পুরা গ্রাম দাওয়াত দিয়া খাওয়াইছোস। এরপরে তোর মেয়ের বিয়ে হইছে। আলমের ছেলের বিয়ে হইছে। আমারে কইছিলি? আমি দীঘিরপাড় গেলে মানুষ জিগায় আপনারে কয় নাই?  আমি যা জবাব দেওয়ার দিছি। আমি যদি আলমরে এইরকম চিঠি ফেইসবুকে না লেখতাম  তোরা আমি মরে গেলেও আমার দিকে ফিরে তাকাতি না। এটা আমি ভালো করেই জানি।

তুই এখন বিভিন্ন রকমের ডায়লগ দেস। আমিতো দেখি আপনি ভালা আছেন। গলায় চশমা পইরা ঘুরেন। তোরা সব কিছু জানতি। আমি কত কষ্টে আছি। কিভাবে আছি না আছি। কিন্তু আমার কোন খোঁজ তোরা নেস নাই। যখন আমি আলমরে চিঠি লিখছি তখনই তোরা যোগাযোগ করছোস। ১৪ বছর তো করস নাই। এখন  তোরা পোলা মাইয়া বিয়া দিছস। আত্মীয়-স্বজন আছে। বইন আছে। বোন জামাইরা আছে। মান ইজ্জত যাইবো। তাই আমার লগে মিটিং করছোস। তুই আমার ভাতিজা। তুই যদি চালাক হস তো আমি না তোমার চাচা। আমি কি কম চালাক? আরেকটা কথা মনে রাখিস। ১৮ বছর আগের সব কথা আমার মনে আছে। সব কথা আমি চিঠিতে লিখিনি। এই আলম বলছিলো আমারে বাড়িতে কবর দিতে দিবো না। এটাও কি মিথ্যা নাকি? বুঝসনি এবার?

আগে যা করছস করছস। এখন অন্তত আল্লাহর দিকে চাইয়া একটু সৎ পথে আয়। কদিন পরে তো মইরাই যাবি। এইটা শেষ করে দে। নইলে আবার লিখবো। এতে বহুত মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হইবো। আমার কিচ্ছু হবে না। আমার মাইয়া ঢাকায় থাকে। আমার কোন ফ্যামিলি লাইফ নাই। আমি একজন সিঙ্গেল মানুষ। তোদের আত্মীয়-স্বজন বোনজামাই ভাগ্নি ভাগিনা নিজের মাইয়া সব আছে। হেরার উপরেও এফেক্ট হইবো আমি আবার কিছু লিখলে। এইটা ইন্টারনেটের যুগ।

আর সহিদ মিয়া যে জায়গা বেচছে আমিন মিয়ার কাছে সেই ভাগ আমারে বুঝাইয়া দেওন লাগবো। সহিদ যে চিটারি কইরা আমার জায়গা নিছে সেই জায়গার টাকা দিতে হইবো। তারে আমি যেই টাকা দিছি তাও দিতে হইবো। তুই সহিদের সাথে এই নিয়া কথা বলবি। নইলে আমি লোকজন নিয়া বাড়িতে এসে সহিদকে ধরবো। তুই বলছোস তাই সহিদকে লেখা চিঠি আমি ফেইসবুকে দেই নাই। তোর কথা রাখতে গিয়ে। সহিদ যদি সমস্যার সমাধান না করে তবে আমি এই চিঠি ফেইসবুকে দেবো। পরে আমারে দোষ দিবি না।

আমি যাদের সাথে চলি তারা সব জানে। আমি বলেছি তোর সাথে কথা হইছে। সমস্যা দ্রুতই সমাধান হবে। এখন যে ওরা আমাকে জিজ্ঞেস করে, কিও আপনের ভাতিজা না বলে সমস্যা সমাধান কইরা দিবো? দলিল বাইর করতে একদিন লাগে। তিন মাস হয় আপনের ভাতিজা এখনো দলিল বাইর করতে পারে না? দেখেন আবার কি গেইম খেলে। 

যত তাড়াতাড়ি সম্ভব তা সমাধান করলে তোদেরই মঙ্গল হবে। 

ছোট কাকা।

১১ জুন, ২০২৫

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

আমার দেখা ১৯৭৪ সালের দুর্ভিক্ষ

আমার দেখা ১৯৭৪ সালের দুর্ভিক্ষ সরকারঃ শেখ মুজিবের শাসনামল ১৯৭৪-এর দুর্ভিক্ষ বাংলাদেশে ১৯৭৪ সালের মার্চে শুরু হয়ে সেই বছরেরই ডিসেম্বরের দিকে গিয়ে শেষ হয়। এই দুর্ভিক্ষে অসংখ্য মানুষ অনাহারে মারা গিয়েছিল। এই দুর্ভিক্ষকে স্মরণকালের মধ্যে সবচেয়ে ভয়ানক হিসেবে গন্য করা হয়। ওই সময় আমি বুঝতাম। ক্লাশ ফোরে পড়তাম। আহারে ! কি যে অভাব ! অনেকের মতো আমরাও ভাত না খেয়ে রুটি খেয়েছি । তাও পরিমিত । কখনো জাউ খেয়েছি । শুকনো মরিচ পাওয়া যেতো না । কাঁচা মরিচের কেজি ছিলো ১৫০ টাকা । লবন ১২০ টাকা । আর সোনার ভরি ছিলো তখন ১৫০ টাকা । সোনা শুধু ওই সময় কম দাম ছিলো । চারদিকে অভাব । সারাদেশের মানুষের হাহাকার । কতো মানুষ না খেয়ে মারা গেছেন ! বিদেশি রিলিফ সব আওয়ামী লীগের লোকেরা চুরি করেছে । আর বেশিরভাগ রিলিফ সীমান্ত দিয়ে ভারতে চলে পাচার হয়েছিলো । তখন বর্ডার খোলা ছিলো তখন । মহিলাদের শাড়ি কাপড় ছিলো না । অনেকে মাছ ধরার জাল পরে লজ্জাস্থান ঢেকেছিলো । এসব ছবি পত্রিকায়ও ছাপা হয়েছিলো । কিন্তু আওয়ামী লীগ নেতাদের কোনো অভাব ছিলো না । বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ শেষ হওয়ার মাত্র দুই বছর তিন মাসের মাথায় ...

বোতল

বোতল মানব জীবনে বোতল অপরিহার্য । বোতল অনেক অর্থেও ব্যবহার হয় । কোনো কোনো এলাকায় আনস্মার্ট, বেয়াক্কেল প্রকৃতির লোককেও বোতল বলা হয় । ইউরোপ আমেরিকায় থাকতে আমি ডৃংক করতাম । হার্ড ডৃংক কমই খেতাম । প্রতিদিনই বিয়ার খেতাম । বিয়ার স্বাস্থ্য ভালো রাখে ও কাজ করতে এনার্জি জোগায় । পরিমিত বিয়ার খেলে কেউ মাতাল হয় না । মাঝে মাঝে বিশেষ কোনো পার্টিতে হুইস্কি খাওয়া হতো । তাও দামি ব্র্যান্ডের । জনি ওয়াকার ব্ল্যাক লেবেল, টিচার্স, পাসপোর্ট, হেনেসি, শিভাস রিগাল, জ্যাক ড্যানিয়েলস । সাকুরায়ও অনেক সময় এসব ব্র্যান্ডের হুইস্কি পাওয়া যায় না । তো দেশে আসার পরও কিছু দিন ডৃংক করেছিলাম । কুমিল্লায় সরকার অনুমোদিত একটা মদের দোকান আছে চক বাজারে । নামঃ নাদের ট্রেডিং কোং । এটা প্রায় আজ ৫০ বছর । এখানে বিদেশি ব্র্যান্ডের ডৃংক পাওয়া যায় না । দেশিয় কোম্পানি ‘কেরো এন্ড কোং’ যা দর্শনায় অবস্থিত তার তৈরি ভদকা, হুইস্কি, জিন পাওয়া যায় । আমাদের সমাজতো রক্ষনশীল । তাই কান্দিরপাড় থেকে একটা স্প্রাইট কিনে অর্ধেক খেতে খেতে চক বাজার যেতাম । নাদেরে যখন পৌঁছতাম তখন স্প্রাইটের বোতল অর্ধেক খালি হয়ে যেতো । আমি বাবুল ভাইকে স্প্...

অশ্লীল নাম

বাংলাদেশের কিছু প্রতিষ্ঠান ও স্থানের বিচিত্র বা বিকৃত অর্থের নাম যা পরিবর্তন করা উচিতঃ ১. বোদা মহিলা মহাবিদ্যালয়, বোদা, পঞ্চগড় ২. চুমাচুমি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, রাঙ্গামাটি ৩. সোনাপোতা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, খুলনা ৪. মানুষমারা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, নীলফামারি ৫. সোনাকাটা ইউনিয়ন, তালতলী, বরগুনা ৬.বড়বাল ইউনিয়ন, মিঠাপুকুর, রংপুর ৭.সোনাখাড়া ইউনিয়ন, রায়গঞ্জ, সিরাজগঞ্জ ৮. ধনকামড়া গ্রাম, ভোদামারা, দিনাজপুর ৯.গোয়াকাটা, দোহার, ঢাকা ১০. গোয়াতলা, ময়মনসিংহ ১১.লেংটার হাট, মতলব, চাঁদপুর